চ্যাম্পিয়ন্স লিগ: রিয়ালকে নিয়ে ছেলেখেলা করে ফাইনালে সিটি
ইউরোপের বর্তমান রাজা তারা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসেরই সবচেয়ে সফল দল রিয়াল মাদ্রিদ। এই টুর্নামেন্টে রিয়ালের প্রতিপক্ষ হওয়া মানেই জয়ের চেয়ে হারের সম্ভাবনা বেশি। তার ওপর গত মৌসুমে এই পর্যায়ে এসেই দুই লেগ মিলিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও সিটি ফাইনালে যেতে পারেনি। সব মিলিয়ে এবারও কাগজে-কলমে সিটি ফেভারিট থাকলেও মাঠের খেলার হিসাব থেকে রিয়ালকে বাদ দেওয়া সম্ভব ছিলো না।
কিন্তু মাঠের খেলাতে সিটি যা করে দেখালো, তা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসেই অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স হিসেবে লেখা থাকবে। রিয়ালকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছেন গার্দিওলার শিষ্যরা।
বার্নাব্যুতে প্রথম লেগ ১-১ সমতায় শেষ হওয়ায় দ্বিতীয় লেগে যে কোনো কিছুই সম্ভব ছিলো। সিটি নিজেদের মাঠে রিয়ালের ওপর যেভাবে আধিপত্য বিস্তার করল, ম্যাচের আগে এমনটা হবে বললে হয়তো সিটি খেলোয়াড়রাই বিশ্বাস করতেন না।
কর্তোয়ার জালে চারবার বল পাঠিয়েছে সিটি। যার কোনোটিই আসেনি চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১২ গোল আর সব মিলিয়ে ৫২ গোল করা আর্লিং হলান্ডের পা থেকে! জোড়া গোল করেছেন বার্নার্দো সিলভা। একটি করে গোল ম্যানুয়ের আকাঞ্জি আর হুলিয়ান আলভারেজের।
চ্যাম্পিয়ন লিগে রিয়াল প্রতিপক্ষের ওপর আধিপত্য দেখিয়েই অভ্যস্ত। শেষ কবে এমন তাদের ওপর কেউ ছড়ি ঘুরিয়েছে তা মনে করাও কঠিন। সিটির মাঠে খুঁজেই পাওয়া যায় নি বেনজেমা-ভিনিশিয়ুসদের। ক্রুস-মদ্রিচরা তো বল পাস করারই জায়গা পাচ্ছিলেন না।
প্রথম মিনিট থেকে শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত সিটির প্রতিটি খেলোয়াড় নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে খেলেছেন। আর গার্দিওলার দল তাতে উপহার দিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালের অন্যতম সেরা এক রাতের।
ম্যাচের ২৩ মিনিটে দুর্দান্ত এক আক্রমণ থেকে সিটিকে এগিয়ে দেন সিলভা। ডি ব্রুইনার নিখুঁত পাস সিলভাকে খুঁজে নেয় ডি-বক্সের ভেতর। আর সেখান থেকে বল জালে জড়াতে ভুল করেননি পর্তুগিজ মিডফিল্ডার। ৩৭ মিনিটে সিলভাই ব্যবধান বাড়ান ২-০ তে।
বিরতির পর রিয়াল একটু খোলস ছেড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলেও সিটি তা হতে দেয় নি। রিয়ালের কোনো খেলোয়াড় বল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঘিরে ধরেছেন সিটির ২-৩ জন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ৭৬ মিনিটে ডি ব্রুইনার ফ্রি-কিক থেকে আকাঞ্জি মাথা ছোঁয়ালে তা রিয়ালের মিলিতাওয়ের গায়ে লেগে জালে জড়ায়। ম্যাচ কার্যত সেখানেই শেষ।
এরপর বদলি নেমে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জয়ী তারকা হুলিয়ান আলভারেজ রিয়ালের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার পাশাপাশি লজ্জাজনক হার নিশ্চিত করেন। সিটিও পৌঁছে যায় স্বপ্নের ফাইনালে। নিজেদের ইতিহাসে এটি সিটির মাত্রই দ্বিতীয় ফাইনাল।
১০ জুন ইস্তাম্বুলে ইতালিয়ান জায়ান্ট ইন্টারের মুখোমুখি হবে সিটি। গার্দিওলার দল নিজেদের নাম অমর করে রাখতে পারবে কিনা তা সেদিনই জানা যাবে।