মিরাজ-শান্তর সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের বড় সংগ্রহ
প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ের হতশ্রী অবস্থা ঘুম হারাম করে দিয়েছিল বাংলাদেশের। এর ওপর আবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বাঁচা-মরার লড়াই। চাপের পাহাড় ছিল সাকিব আল হাসান দলের ওপর, তা বলাই বাহুল্য। এমন ম্যাচে একাদশে আনা হলো তিনটি পরিবর্তন। উদ্বোধনী জুটিতেও চমক, মেহেদী হাসান মিরাজ ওপেনিংয়ে। নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যাটিং করলেন চার নম্বরে ব্যাটিং। জায়গা বদল করে নামানো দুই ব্যাটসম্যানই করলেন দুর্দান্ত ব্যাটিং, তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। তাদের ব্যাটে এশিয়া কাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ পেল বিশাল সংগ্রহ।
রোববার লাহোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রান তুলেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ, সব মিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ। আফগানদের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ ছিল ৩০৬ রান, ২০২২ সালে চট্টগ্রামে। তৃতীয় উইকেটে দ্বিতীয় সেরা জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে দেন মিরাজ-শান্ত। শেষ দিকে মুশফিকুর রহিমের পর ক্যামিও ইনিংস খেলে তা আরও এগিয়ে নেন অধিনায়ক সাকিব।
জাতীয় দলে এক সঙ্গে খেলার অনেক আগে থেকেই সতীর্থ মিরাজ ও শান্ত। দুজন একসঙ্গে খেলেছেন বয়সভিত্তিক পর্যায়ে, প্রতিনিধিত্ব করেছেন যুব বিশ্বকাপে। যুব দলে অন্যতম ভরসার জায়গা ছিলেন এ দজন। এবার জাতীয় দলেও ভরসা হয়ে পথ দেখালেন তারা। সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া এই দুই ব্যাটসম্যান ১৯৪ রান যোগ করেছেন, যা তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা জুটি। আর যেকোনো উইকেটে ষষ্ঠ সেরা জুটি।
টস জিতে বাটিং করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই হয়। উদ্বোধনী জুটিতে ১০ ওভারে ৬০ রান যোগ করেন নাঈম শেখ ও মিরাজ। ভালো শুরুর স্বস্তি হারিয়ে যায় চার বলের ব্যবধানে দুটি উইকেট হারানোয়। ৩২ বলে ২৮ রান করা নাঈম ও তাওহিদ হৃদয় আউট হলে হঠাৎ-ই চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এক পাশ আগলে থাকা মিরাজের সঙ্গে যোগ দেন শান্ত, শুরু হয় এই জুটির লড়াই।
মিরাজ ততোক্ষণে উইকেটে থিতু হয়ে গেছেন, শান্তও বেশি সময় সময় নেননি। শুরু থেকেই মারকুটে মেজাজে ব্যাটিং করতে থাকেন শান্ত। সাবলীল ব্যাটিংয়ে মুহূর্তেই চাপ কাটিয়ে দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন তারা, বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। হঠাৎ দিক হারানো দলকে পথ দেখিয়ে ২৫৭ রান পর্যন্ত নিয়ে যান মিরাজ শান্ত। এর মাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজ।
ওয়ানডেতে দ্বিতীয়বারের মতো ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমেই তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছালেন বাংলাদেশের এই অলররাউন্ডার। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ওপেন করেন মিরাজ, সেই ম্যাচে ৩২ রান করেন তিনি। পাঁচ বছর পর একই মঞ্চে সুযোগ পেয়ে চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান করলেন সেঞ্চুরি। তার ইনিংসটি আরও বড় হতে পারতো, কিন্তু আঙুলে টান পড়ায় মাঠ স্বেচ্ছায় মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
এর আগে ১১৯ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১১২ রানের হার না মানা অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন মিরাজ। বাঁচা-মরার ম্যাচ, সঙ্গে ওপেনিং সামলানোর চাপ; সব জয় করে মিরাজ দেখালেন তার সামর্থ্য। অন্য ওপেনাররা যা করতে পারেন না, একবার সুযোগ পেয়েই তা করে দেখালেন ২৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
মিরাজ মাঠ ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শান্ত। সেঞ্চুরি করলেও মিরাজের মতো তারও আক্ষেপ থাকার কথা। রান নিতে গিয়ে ফিরে আসার পথে পা পিছলে পড়ে যাওয়ায় রান আউট হতে হয় ১০৫ বলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৪ রান করা শান্তকে। রান আউটে কাটা পড়েন ১৫ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২৫ রান করা মুশফিকও। শেষ পর্যন্ত দাপুটে ব্যাটিং করেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক ১৮ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। অভিষিক্ত শামীম হোসেন পাটোয়ারী ৬ বলে ১১ রান করেন। আফগানিস্তানের মুজিব-উর-রহমান ও গুলবাদিন নাঈব একটি করে উইকেট নেন।