অস্বস্তি কাটিয়ে রাহুল-কোহলির ব্যাটে অজিদের হারাল ভারত
অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ছোট লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট। প্রথম ওভারেই উইকেট হারানো ভারত একটু পর মহা বিপদে পড়ে দুই বলের ব্যবধানে আরও দুই উইকেট হারিয়ে। স্কোরকার্ডে রানের চেয়ে উইকেটের সংখ্যা বেশি। দিকহারা দলকে এখান থেকে পথ দেখাতে শুরু করেন বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল, শেষ পর্যন্ত তারাই নায়ক। এই দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটে শুরুর অস্বস্তি কাটিয়ে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করলো আয়োজক ভারত।
রোববার চেন্নাইয়ের এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। জিতলেও ছোট লক্ষ্য পাড়ি দিতে ভালোই বেগ পোহাতে হয় রোহিত শর্মার দলকে। দুই ওভারের মধ্যে ৩ উইকেট হারানোর চাপ কাটিয়ে উঠতে উঠতে রান রেটে পিছিয়ে পড়ে তারা। তাই ২০০ রানের লক্ষ্য পাড়ি দিতেই ভারতের লেগে যায় ৪২ ওভার।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে অস্ট্রেলিয়া। শুরুতে ভারতের পেস আক্রমণে অস্বস্তিতে পড়া অজিরা পড়ে স্পিনের বিপক্ষে অসহায় হয়ে পড়ে। ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথ ছাড়া কেউ-ই সেভাবে ব্যাট চালাতে পারেননি। শেষ দিকে অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্কদের লড়াইয়ে ৪৯.৩ ওভারে সব কটি উইকেট হারিয়ে ১৯৯ রান তোলে অজিরা। জবাবে কোহলি ও রাহুলের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৪১.২ ওভারে লক্ষ্য পাড়ি দেয় ভারত।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় ভারত। ইনিংসের চতুর্থ বলে ইশান কিষানকে ফিরিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার স্টার্ক। এই উইকেট দিয়ে বিশ্বকাপে ৫০ উইকেট পূর্ণ হয় তার, ভেঙেছেন শ্রীলঙ্কান পেসার লাসিথ মালিঙ্গার রেকর্ড। ২৫ ইনিংসে দ্রুততম ৫০ উইকেটের রেকর্ড গড়েন মালিঙ্গা। ১৯ ইনিংসেই ৫০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে রেকর্ডটি নিজের করে নিলেন স্টার্ক।
স্টার্কের পর তোপ দাগেন অস্ট্রেলিয়ার আরেক পেসার জশ হ্যাজেলউড। পরের ওভারেই ডানহাতি এই পেসার ফিরিয়ে দেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও শ্রেয়াস আইয়ারকে। ২ রানেই নেই ৩ উইকেট, কোনো ব্যাটসম্যানই পারেননি রানের খাতা খুলতে। ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো ভারতের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের তিন জন শূন্য রানে আউট হলেন।
ছোট লক্ষ্য হলেও শুরুর ধাক্কায় অন্ধকারে পড়ে যায় ভারত। এখান থেকে দলকে আলোর পথে ফেরানোর লড়াই শুরু করেন কোহলি ও রাহুল। দুজনই অতি সাবধানে ব্যাটিং করতে থাকেন, করেন শেষ নিজেদের ইনিংসের শেষ পর্যন্ত। সময় উপযোগী ব্যাটিংয়ে চতুর্থ উইকেটে ২১৫ বলে ১৬৫ রানের জুটি গড়েন কোহলি-রাহুল, মাঝে দুজনই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। ১২ রানে জীবন পাওয়া কোহলির এটা ৬৭তম ও রাহুলের ১৬তম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি।
দলকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া কোহলি ৩৮তম ওভারে আউট হন। হ্যাজলউডের তৃতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১১৬ বলে ৬টি চারে ৮৫ রানের মহা কার্যকর ইনিংস খেলেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। এরপর হার্দিক পান্ডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে জয় তুলে নেওয়ার কাজটি সারেন ভারতের ইনিংসের আরেক কাণ্ডারী রাহুল।
চোখ ধাঁধানো এক ছক্কা মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। খাদের কিনার থেকে টেনে তুলে দলকে দারুণ জয় উপহার দেওয়া রাহুল ১১৫ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৯৭ ৯৭ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। ৮ বলে একটি ছক্কায় অপরাজিত ১১ রান করেন হার্দিক। অজি পেসার হ্যাজলউড ৯ ওভারে ৩৮ রানে ৩টি উইকেট নেন। একটি উইকেট পান স্টার্ক।
এর আগে ব্যাটিং করা অজিদের পক্ষে কেবল ওয়ার্নার ও স্মিথ সময় নিয়ে লড়াই করতে পেরেছেন। ৫২ বলে ৬টি চারে ৪১ রান করেন ওয়ার্নার। এই ইনিংস দিয়ে বিশ্বকাপে দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ড গড়েছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। এতোদিন রেকর্ডটি ভারতের শচিন টেন্ডুলকার ও এবিডি ভিলিয়ার্সের দখলে ছিল। সাবেক এই দুই ব্যাটসম্যান বিশ্বকাপে ২০ ইনিংসে এক হাজার রান করেন।
৭১ বলে ৫টি চারে ইনিংস সেরা ৪৬ রান করেন স্মিথ। এ ছাড়া মার্নাস লাবুশেন ২৭, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ১৫, কামিন্স ১৫ ও স্টার্ক ২৮ রান করেন। অজিদের কঠিন পরীক্ষা নেওয়া ভারতের বাঁহাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা ১০ ওভারে ২৮ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পান জাসপ্রিত বুমরাহ ও কুলদীপ যাদব। একটি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ সিরাজ, হার্দিক পান্ডিয়া ও রবীচন্দ্রন অশ্বিন।