বিশ্বকাপে বাংলাদেশ, যেভাবে সময় কাটছে তামিমের
তামিম ইকবাল; বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় নাম। ব্যাটিং সত্ত্বার বিবেচনায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নাম। ব্যাট হাতে বাংলাদেশের পক্ষে অনেক রেকর্ডই নিজের দখলে রেখেছেন ১৬ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা তামিম। ভারতে চলমান বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ দলের বড় অংশ হওয়ার কথা ছিল অভিজ্ঞ এই ওপেনারের। কিন্তু দল ঘোষণার কদিন আগে শুরু হওয়া ঘটনার প্রবাহে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ মিশন থেকেই নিজেকে সরিয়ে নেন সাবেক এই ওয়ানডে অধিনায়ক।
বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলছে, ইতোমধ্যে চারটি ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে সাকিব আল হাসানের দলের। যে দলটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে এতোদিন ক্রিকেট ক্যারিয়ার এগিয়ে নিয়ে এসেছেন তামিম, সেই দলের বিশ্বকাপ মিশন চলাকালে তিনি ঘরে বসে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বিশ্ব আসর চলাকালীন আগে কখনও এভাবে সময় পার করতে হয়নি তাকে। বাংলাদেশ দলে অভিষেক হওয়ার পর সর্বশেষ দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছাড়া যেকোনো ফরম্যাটে দেশের হয়ে সবগুলো বিশ্বকাপ খেলেছেন তামিম। সাকিব, মুশফিকের মতো দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ পঞ্চম ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার কথা থাকলেও এবারের যাত্রায় তা আর হয়নি, ভবিষ্যতে হওয়ারও সুযোগ নেই বললেই চলে। কারণ ৩৪ বছর বয়সী তামিমের পক্ষে আরও চার বছর খেলা চালিয়ে যাওয়া নিশ্চয়ই সহজ কিছু নয়।
বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ মিশন চলাকালীন তামিম কী করছেন? কীভাবে তার সময় কাটছে? ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে তার অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। গত কয়েক দিনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বা ক্রিকেট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের মন্তব্য জানানো বা কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি তামিমকে। মূলত পরিবারকে সময় দেওয়া, অনুশীলন ও ঘুরে-বেড়িয়ে সময় পার হচ্ছে তার। এরই ধারাবাহিকতায় পরিবার নিয়ে ১৯ অক্টোবর দুবাই ঘুরতে গেছেন তামিম। আগামী কয়েকদিন দুবাইতেই পরিবার নিয়ে সময় কাটবে তার।
দুবাই যাওয়ার দিন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তামিমকে দেখা গেছে কলকাতার জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক শ্রীজিত মুখার্জীর সঙ্গে। সাবেক এই অধিনায়কের সঙ্গে তোলা একটি ছবি ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করে শ্রীজিত লিখেছেন, 'লর্ডসে শাসন করা আরেক বাঙালির সঙ্গে ফ্যানবয় মুহূর্ত।' লর্ডসে টেস্ট অভিষেকে ১৩১ রানের ইনিংস খেলেন ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত এই মাঠে তামিম ইকবাল এক টেস্টের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৫৫ ও ১০৩ রান করেন। সৌরভ ও তামিমের সঙ্গে মিলিয়ে হয়তো শ্রীজিতের এমন মন্তব্য।
গত কিছু দিনে তামিমের সময় কীভাবে কেটেছে, সেটা দেখার আগে আরেকটু আগে ফিরে যাওয়া যাক। বিশ্বকাপের দল নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে নিজের পিঠের ইনজুরির অবস্থা জানান তামিম, যেন অবস্থা বিবেচনায় তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপে পাঁচটি ম্যাচের বেশি খেলতে চান না তিনি। যা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের পছন্দ হয়নি। চোটের থাকায় তামিমকে দলে না নেওয়ার মতের কথা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে জানান সাকিব-হাথুরুসিংহে। মাশরাফি বিন মুর্তজার হস্তক্ষেপেও এই জট আর খোলেনি, তামিম 'কাটা' পড়েন বিশ্বকাপ অভিযান থেকে।
যদিও কদিন পরে এক ভিডিও বার্তায় অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলার মাঝে তামিম জানান, পাঁচ ম্যাচের বেশি খেলতে পারবেন না, এমন কথা তিনি কখনও বলেননি। দল ঘোষণার দিন বিসিবির প্রধান নির্বাচকও জানান, তামিমের পক্ষ থেকে এমন বার্তা যায়নি যায়নি তাদের কাছে। তামিম ভিডিওতে জানান, বিসিবির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাকে ফোন করে প্রথম ম্যাচ না খেলার কথা বলেন। খেললেও যেন অর্ডার পিছিয়ে নিচের দিকে ব্যাটিং করেন। যা স্বাভাবিকভাবে নেননি তামিম, ফোনে কথা বলার সময় উত্তেজিত হয়ে যান তামিম। তিনি মনে করেন, জোর করে তাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে, বাধা দেওয়ার জন্য নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে।
তামিমকে ছাড়াই বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করা হয়, কদিন সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটে। এরপর বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু, তাই তামিমও আর বাংলাদেশের ক্রিকেটে সংশ্লিষ্ট থাকেননি। এরপর থেকে দেশসেরা এই ওপেনারও সব ধরনের মন্তব্য করা থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। পরিবারকে সময় দিচ্ছেন, নিজের মতো করে চালিয়ে নিচ্ছেন অনুশীলন। তামিমের আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের টানা সূচি নেই, এ ফাঁকে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ঘোরা-ফেরাও করছেন তিনি।
দল ঘোষণার পর থেকে অনেকগুলো পোস্ট গেছে তামিমের অফিসিয়াল ফেসবুক পেত থেকে, এর মধ্যে কয়েকটি বাংলাদেশ দল নিয়ে। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তার ব্যাটিংয়ের একটি ছবি ২৮ সেপ্টেম্বর তামিমের পেজ থেকে পোস্ট করা হয়। পেজের অ্যাডমিনের করা পোস্টে লেখা হয়, 'মুখ সব সময় আলোর দিকে রাখুন, ছায়া আপনার পেছনে পড়ে যাবে।' তামিমের পেজের পরের পোস্টটি প্রমোশনাল, যেটা ছিল একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনটিতে গেয়েছেন অর্থহীন ব্যান্ডের 'বেজবাবা' খ্যাত সুমন।
বিজ্ঞাপন হলেও পোস্টে বাংলাদেশ দলকে শুভ কামনা জানানো হয়। ৪ অক্টোবর দেওয়া এই পোস্টের লেখাটা এমন ছিল, 'সময় এসেছে, বাংলাদেশে এবার, পারবে তুমিও জিতে যেতে, আশা আছে সবার। শুধু আশা না, বাংলাদেশ দল এবার জিতবে, এটা আমার বিশ্বাস। ধন্যবাদ অর্থহীন, ধন্যবাদ রবি, এমন দারুণ একটা গান উপহার দেওয়ার জন্য। আর বাংলাদেশ দল, তোমাদের জন্য অসংখ্য অসংখ্য শুভ কামনা ও ভালোবাসা।'
পরের পোস্টটিও একটি বিজ্ঞাপন নিয়ে। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন নগদের বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন তামিম। বিজ্ঞাপনটি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, 'বাংলাদেশের জন্য সাথে আছি সব সময়।' ৭ অক্টোবর বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে বাংলাদেশ হারানোর পর ম্যাচের একটি ছবি পোস্ট দলকে অভিনন্দন জানান তামিম। লেখেন, 'অভিনন্দন বাংলাদেশ, একটি ভালো শুরু। এগিয়ে যেতে থাকো, একটি একটি ম্যাচ করে আগাও।'
এই ম্যাচ শেষে কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে, যা আইসিসির ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করা হয়। এই লাইভে অনেকের পাশাপাশি তামিমকে দর্শক হিসেবে দেখা যায়। তার অফিসিয়াল পেজ 'তামিম ইকবাল' ওয়াচলিস্টে দর্শকের তালিকায় ছিল। যেটার স্ক্রিনশট মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
৯ অক্টোবর তামিমের পেজ থেকে যাওয়া পোস্টটি বিজ্ঞাপনের। ১১ অক্টোবর পোস্ট দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতকে নিয়ে, যিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডে বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং করছেন। সৈকতের আম্পায়ারিংয়ের ছবি পোস্ট করে প্রথম অংশে লেখা হয়, 'এবারের বিশ্বকাপে শুধু বাংলাদেশ দলই নয়, শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত ভাইও আমাদের একজন উজ্জ্বল প্রতিনিধি। দেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করছেন তিনি, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটা অনেক বড় ব্যাপার।' পরের পোস্টটি তামিমের ঘুরে-বেড়ানোর। শীতলক্ষ্যা নদীতে স্পিড বোটে তামিম বসে আছেন, এমন একটি ছবি পোস্ট করা হয়। তবে পোস্টে কোনো লেখা নেই। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় আড্ডায় নদীতে স্পিড বোটে কিছুক্ষণ সময় পার করেন তিনি।
তামিমের পেজ থেকে সর্বশেষ পোস্ট দেওয়া হয়েছে ১৭ অক্টোবর, পোস্টটি বাংলাদেশ ফুটবল দল নিয়ে। মালদ্বীপকে হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার পর বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্টটি দেওয়া হয়। দলের উদযাপনের একটি ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, 'এটা বড় এবং উদযাপন করা আবশ্যক! অভিনন্দন বাংলাদেশ ফুটবল দল।' এসব করে কেমন সময় কাটছে? সেটা জানতে তামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। দুবাইতে থাকায় তাকে ফোন করা যায়নি। ম্যাসেজে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তামিম কোনো উত্তর দেননি।