অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ নাকি ভারতের তৃতীয়?
প্রস্তুত ফাইনালের মঞ্চ, দীর্ঘ ১ মাস ১৪ দিনের সফর শেষে শিরোপার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত সেরা দুই দল ভারত ও অস্ট্রেলিয়াও। বিশ্বকাপের ফাইনালে আজ আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে দল দুটি। বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় শুরু হবে ম্যাচটি।
ক্রিকেট দুনিয়ায় আপাতত একটাই প্রশ্ন, অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ নাকি ভারতের তৃতীয়? উত্তরে কারও কাছে ভারত ফেবারিট তো কারও কাছে অস্ট্রেলিয়া। এবারের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স বিবেচনায় অনেকে ভারতকে এগিয়ে রাখলেও বিশ্বকাপ ও ফাইনাল বলেই অজিদের পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। বিশ্বকাপ ইতিহাসে তারাই তো সফলতম দল।
১৯৮৭ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতা অস্ট্রেলিয়া পরে আরও চারবার নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করেছে। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এবার নিয়ে অষ্টমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে। আগের সাত ফাইনালে দুটিতে হেরেছে তারা। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা অজিরা আরও একবার বিশ্বসেরার মুকুট ছিনিয়ে নিতে প্রস্তুত।
২০১১ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছে ভারত। এবার নিয়ে চতুর্থবারের ফাইনালে উঠেছে এশিয়ার এই ক্রিকেট পরাশক্তি। আগের তিন ফাইনালের দুটিতে জেতা ভারত একটিতে যে হার মানে, সেটা এই অস্ট্রেলিার বিপক্ষেই। ২০০৩ বিশ্বকাপে বড় ব্যবধানে হেরে যায় তারা। তাই ঘরের মাঠে শিরোপা পুনরুদ্ধার করার মিশনের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পুরনো হিসাবটাও চুকিয়ে নিতে চায় ভারত।
এ পথে যে কেউ-ই তাদের পক্ষে বাজি ধরতে পারেন। এবারের বিশ্বকাপে তাদের পথচলা ছিল দুর্বার। ভারতই একমাত্র দল, যারা এখনও কোনো ম্যাচ হারেনি। টানা ৯ জয়ে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করা স্বাগতিক দেশটি ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে রানের পাহাড় গড়ে হারিয়ে দেয় নিউজিল্যান্ডকে।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ভালো ছিল না। প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে যায় তারা। ঘুরে দাঁড়াতে অবশ্য সময় নেয়নি অজিরা। তৃতীয় ম্যাচ দিয়েই জয়ে ফেরা দলটি এরপর আর হারেনি। লিগ পর্বে ৯ ম্যাচের ৭টিতে জেতা অস্ট্রেলিয়া রোমাঞ্চকর সেমি-ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট কাটে।
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ১৩ বার মুখোমুখি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া-ভারত। দাপট অজিদেরই বেশি, ৮টি ম্যাচে জিতেছে তারা, ভারতের জয় ৫টি। ফাইনালে একবারের সাক্ষাতে শেষ হাসি হেসেছিল অজিরা। বিশ্বকাপের মতো ওয়ানডেতের রেকর্ডেও এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। ১৫০ ম্যাচে তাদের জয় ৮৩টি, ভারত জিতেছে ৫৭টি ম্যাচ। ১০টি ম্যাচের ফল আসেনি।
ভারতের সব সময়ের শক্তি ব্যাটিং, এবারও ব্যাট হাতে শাসন করছে তারা। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, শুভমান গিল, শ্রেয়াস আইয়াররা দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। রানের দেখা পেয়েছেন লোকেশ রাহুলও। ভালো সময় কেটেছে অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজার। সঙ্গে দুর্দান্ত পেস আক্রমণ, যে বিভাগের নেতা হয়ে উঠেছেন সেরা ফর্মে থাকা মোহাম্মদ শামি, ২৩ উইকেট নিয়ে সবার উপরে তিনি। বাকি দুই পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজের পাশাপাশি দলের জয়ে অবদান রেখে আসছেন রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদবও।
অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার ব্যাট হাতে শাসন করে এসেছেন। আরেক ওপেনার মিচেল মার্শেরও দারুণ ছন্দে সময় কেটেছে। ট্রাভিস হেড, স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরাও দলটির অন্যতম ভরসা হিসেবে পাফর্ম করে এসেছেন। বল হাতে দলটিতে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছেন লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা, নিয়েছেন ২২ উইকেট। যা এখন পর্যন্ত আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। পেস আক্রমণে জস হ্যাজেলউড, মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সরাও হতে পারেন ভারতের চিন্তার কারণ।
ভারতের সম্ভাব্য একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল (উইকেটরক্ষক), সূর্যকুমার যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা, মোহাম্মদ শামি, জাসপ্রিত বুমরাহ, কুলদীপ যাদব ও মোহাম্মদ সিরাজ।
অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাব্য একাদশ: ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেড, মিচেল মার্শ, স্টিভেন স্মিথ, মার্নাস ল্যাবুশেন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, জশ ইংলিস (উইকেটরক্ষক), মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), অ্যাডাম জাম্পা ও জশ হ্যাজেলউড।