সর্বোচ্চ রান তুলেও বড় হার বাংলাদেশের
ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো না হলেও সামলে নিলেন সৌম্য সরকার। আশা জাগিয়েও অন্যদের ব্যর্থ হওয়ার দিনে নিজের সেরা 'ভার্সন' খুঁজে নিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কয়েক দফা জীবন পেয়ে সেটার সদ্ব্যবহার করলেন, খেললেন বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস। তাতে মেলে ৩০০ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ। কিন্তু এই সংগ্রহও যথেষ্ট হলো না। উইল ইয়াং ও হেনরি নিকোলসের দারুণ ব্যাটিংয়ে সহজ জয় তুলে নিলো নিউজিল্যান্ড।
বুধবার নেলসনের স্যাক্সটন ওভালে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এই হারে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হারলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল। পরের ম্যাচটি তাই বাংলাদেশের জন্য হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশন। আগামী ২৩ ডিসেম্বর নেপিয়ারে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি তারা।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ম্যাচসেরা সৌম্যর দারুণ সেঞ্চুরিতে ২৯১ রান তোলে বাংলাদেশ। লড়াকু সংগ্রহ তোলার পরও আছে আক্ষেপ। ওয়ানডেতে দেশের পক্ষে সৌম্যর দ্বিতীয় সেরা ইনিংস খেলার দিন ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে পারেনি দল, এক বল বাকি থাকতে অলআউট হয় বাংলাদেশ। অন্যরা একই সুরে পা ফেলতে না পারায় মেলেনি বড় সংগ্রহ।
যদিও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সেরা সংগ্রহ। আগের সেরা ছিল ২৮৮, ২০১৫ সালে। তবে নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডেতে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। দেশটিতে বাংলাদেশের সেরা ইনিংস ৩২২, ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। ৩০০ ছুঁইছুঁই লক্ষ্য তাড়ায় দাপুটে শুরুর পর ইয়াং ও নিকোলসের ব্যাটে ২২ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় নিউজিল্যান্ড।
উড়ন্ত সূচনা পায় কিউইরা, উদ্বোধনী জুটিতে ১১ ওভারে ৭৬ রান যোগ করেন দুই ওপেনার ইয়াং ও রাচিন রবীন্দ্র। ৩৩ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৫ রান করা রবীন্দ্রকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন হাসান মাহমুদ। প্রথম উইকেট হারানোর কোনো প্রভাই পড়েনি নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে। দ্বিতীয় উইকেটে ১৩৬ রানের জুটি গড়ে তোলেন ইয়াং ও নিকোলস। এই জুটিও ভাঙেন হাসান।
বাংলাদেশের ডানহাতি এই পেসারের বলে তার হাতেই ক্যাচ দেওয়ার আগে ৯৪ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮৯ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন ইয়াং। পরের উইকেটে অধিনায়ক টম ল্যাথামের সঙ্গে জুটি বাধেন নিকোলস। তৃতীয় উইকেটে ৫৬ রান যোগ করেন তারা। শরিফুল ইসলামের বলে পুল করতে গিয়ে আউট হওয়া নিকোলসও সেঞ্চুরি পাননি। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৯৯ বলে ৮টি চার ও একটি ছক্কায় ৯৫ রান করেন। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ল্যাথাম ৩৪ ও টম ব্লান্ডেল ২৪ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। বাংলাদেশর হাসান ২টি ও শরিফুল একটি উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশকে নেতৃত্বে দেন সৌম্য। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শেষ ওভারে আউট হন তিনি, মাঝে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বাঁহাতি এই ওপেনার খেলেন মাস্টারক্লাস এক ইনিংস। যে ইনিংস নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে তার ব্যাটিং সামর্থ্যের কথা, অপার সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ দলে যাত্রা শুরু সেই গল্পের কথা। ১৫১ বলে ২২টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৬৯ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন সৌম্য, বাংলাদেশের ইনিংসের অর্ধেকেরও বেশি রান তিনি একাই করেছেন। ইনিংসে সর্বোচ্চ চার মারার রেকর্ডটি এখন তার, বাংলাদেশের আর কেউ ২০টি চারও মারতে পারেননি।
নিজেকে ফিরে পাওয়ার দিন রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যান। সৌম্যর খেলা ইনিংসটি বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, যেকোনো ফরম্যাটে তার সর্বোচ্চ। দুর্দান্ত ইনিংসটির কারণে হেরেও ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনি। ওয়ানডেতে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ডটি দখলে রেখেছেন লিটন কুমার দাস। ২০২০ সালে মার্চে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৪৩ বলে ১৬টি চার ও ৮টি ছক্কায় ১৭৬ রানের রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলেন তিনি। ১৫৮ রান নিয়ে তিন নম্বরে অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শুরুতে তোপ দাগা নিউজিল্যান্ডের পেসার জ্যাকব ডাফির শিকারে পরিণত হয়ে দলীয় ১১ রানেই ফিরে যান ওপেনার এনামুল হক বিজয়। দলীয় ৩৬ রানে থামেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ৪৪ রানে লিটন কুমার দাস ফিরলে অন্ধকারেই পড়ে যায় সফরকারীরা। তবে একপাশ আগলে খেলে যেতে থাকেন সৌম্য। চতুর্থ উইকেটে তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ৩৬ রানের জুটি গড়েন তিনি। ১২ রান করে আউট হন হৃদয়।
এরপর ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটি পায় বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে ১০৮ বলে ৯১ রান যোগ করেন সৌম্য ও মুশফিকুর রহিম। ডাফির তৃতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৫৭ বলে ৫টি চারে ৪৫ রান করেন মুশফিক। তার বিদায়ের পর সৌম্যকে কিছুটা সময় সঙ্গ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ, এই জুটি থেকে আসে ৫৩ বলে ৬১ রান। ২৬ বলে ২৩ রান করে আউট হন মিরাজ। এই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া তানজিম হাসান সাকিব ১১ বলে একটি ছক্কায় ১৩ রান করেন।
একটি ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটা জুটিতেই আছে সৌম্যর অবদান। অন্য প্রান্তে ভাঙনের সুর বেজে গেলেও তাতে কান দেননি তিনি। স্রোতের বিপরীতে ব্যাট চালিয়ে একাই দলকে এগিয়ে নিয়ে যান তিনি। পাঁচ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করলেন তিনি, এটর তার দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন তিনি। বিদেশের মাটিতে তার খেলা ইনিংসটিই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। নিউজিল্যান্ডের ডাফি ও ও'রোক ৩টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান মিলনে, ক্লার্কসন ও আদিথ্যিয়া আশোক।