‘আমরা ক্রিকেটাররা হাসার চেয়ে বেশি কাঁদি’
আস্থার প্রতিদান না দিয়েও বাংলাদেশ দলে যেসব ক্রিকেটাররা অবিরতভাবে সুযোগ পেয়ে গেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম সৌম্য সরকার। অপার সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ দলে নাম লেখালেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। একটা ইনিংস ভালো খেলেছেন তো কয়েক ম্যাচের জন্য নিজেকে হারিয়ে বসেছেন। ধারাবাহিকতা ও রান খরার কারণে হারিয়ে যাওয়ারই দশা হয়েছিল সৌম্যর। তবু তার ওপর আস্থা রাখা হয়েছে বারবার।
কোনো কারণ ছাড়াই যেমন এবার নিউজিল্যান্ড সফরের দলে তাকে নেওয়া হয়। সৌম্যর এবারের শুরুটাও দুর্বিসহ হয়, প্রথম ওয়ানডেতে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন। প্রিয় ছাত্রের ওপর তবু ভরসা রাখেন চান্দিকা হাথুরুসিংহে। যদিও দ্বিতীয় ওয়ানডের আগের দিন তিনি জানান, সৌম্য সমস্যার কথা জানেন না তিনি। এর পরের দিনই সৌম্য ফিরলেন সব শঙ্কার মেঘ উড়িয়ে, খেললেন বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৬৯ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেন বাংলাদেশ ওপেনার। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলার দিন ম্যাচ হেরেও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন সৌম্য। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তার ক্যারিয়ারের উত্থান-পতনের গ্রাফটা মনে করানো হলো, জানতে চাওয়া প্রতিভার সবটা না দিতে পারায় মনে কতোটা আক্ষেপ। সৌম্য জানালেন, সব দিন সমান যায় না; ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার এমনই হয়।
আক্ষেপ নিয়ে পড়ে থাকতে চান না ৩০ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। নিজের মধ্যে যতোটুকু আলোই থাকুক না কেন, তা দিয়ে আগামীর পথ আলোকিত করতে চান তিনি। সৌম্যর ভাষায়, 'ওঠানামা কী! ক্রিকেট খেলোয়াড় প্রতিদিন তো ভালো খেলবে না। আপনি যেমন প্রতিদিন ভালো খাবার আশা করেন না, ক্রিকেট খেলোয়াড়রা আমরাও প্রতিদিন ভালো আশা করি না। আমরা ক্রিকেটাররা হাসার চেয়ে বেশি কাঁদি।'
'কারণ আমরা যখনই খেলি, পুরো সিরিজ খেললে হয়তো দুই-একটা ম্যাচ ভালো খেলে। বাকিটা খারাপই যায়। কিন্তু ওটা নিয়ে আমরা যদি পড়ে থাকি, তার মানে আমরা নিজেরাই পিছিয়ে যাব। তো ইতিবাচক দিক যতটুকুই আছে, সেসব নিয়ে বেশি চিন্তা করা হয়। কীভাবে সামনে আরও ভালো করা যায়, সেভাবেই মনোযোগ দেওয়া হয় বা চিন্তা করা হয়। এর মধ্যেই যতোটা পারা যায় পারফেকশন নিয়ে ম্যাচে যাওয়ার চেষ্টা করি আমরা।' যোগ করেন তিনি।
১৫১ বলে ২২টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৬৯ রান করেন সৌম্য, যা বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। আজ তিনি ভেঙেছেন ভারতের ব্যাটিং বিস্ময় শচিন টেন্টুলকারের রেকর্ড। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোনো এশিয়ান ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল ১৬৩, ২০০৯ সালে ল্যাঙ্কাস্টার পার্কে ইনিংসটি খেলে শচিন। আজ সেটাকে টপকে গেলেন সৌম্য। ইনিংসে সর্বোচ্চ চার মারার রেকর্ডটিও এখন তার দখলে, বাংলাদেশের আর কেউ ২০টি চারও মারতে পারেননি।
এক ইনিংসে অনেক রেকর্ড, তবু সৌম্যর মনের আকাশে কালো মেঘ। খেলাটা দলগত বলে নিজের এমন সাফল্যে খুশি মনে থাকতে পারছেন না জাতীয় দলের হয়ে ১৬ টেস্ট, ৬৪ ওয়ানডে ও ৭২টি টি-টোয়েন্টি খেলা এই ব্যাটসম্যান। স্বপ্নময় ব্যাটিংয়ে করা সেঞ্চুরিও বিফল মনে হচ্ছে সৌম্যর, 'অবশ্যই সেঞ্চুরিটা বিফল মনে হচ্ছে। যদি আমরা ম্যাচটা জিততাম তাহলে হয়তো আরও অনেক বেশি ভালো লাগতো নিজের কাছে।'
'ব্যক্তিগতভাবে যদি বলেন, হ্যাঁ ভালো লাগছে। কিন্তু দিনশেষে না, কারণ এটা দলগত খেলা। দল যদি জিততো, তাহলে পুরোপুরিভাবে ভালো লাগা কাজ করতো, ভালো স্মৃতি থাকতো। পাওয়ার প্লেতে আমাদের দ্রুত উইকেট চলে গেছে, এটা যদি না যেতো, তাহলে মুশি ভাই বা মিরাজের সাথে যে জুটি হয়েছে, এটা আরও বড় করতে পারতাম। আবার মুশি ভাই, মিরাজ যদি ওই সময়ে আউট না হতো, আরও বাড়তি ৪০-৫০ রান যদি যোগ করতে পারতাম, ৩০০'র বেশি রান হলে চিত্র অন্যরকম হতো।' বলেন তিনি।