‘এতোটা বাজে খেলব, আমরা নিজেরাও আশা করিনি’
বাংলাদেশের ব্যাটিং মানেই আসা-যাওয়ার মিছিল; অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এই একটা দৃশ্যই দেখা গেছে। চরম ব্যাটিং ব্যর্থতার অধ্যায়ে তিন ম্যাচেই ১০০ রানের নিচে অলআউট হয় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজে বড় বড় হারে অজিদের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের প্রথম।
অস্ট্রেলিয়া শক্তিশালী দল, তাদের বিপক্ষে কঠিন সময় যাবে; এটা অনুমেয়ই ছিল। কিন্তু চেনা পরিবেশে সামান্যতম লড়াইও করতে পারবেন না, বাংলাদেশ অধিনায়ক নিজেও এটা ভাবতে পারছেন না। বাংলাদেশের পারফরম্যান্সকে তিনি 'বাজে' বলছেন। হতাশার এই সিরিজে নিজেদের ক্রিকেটারদের মধ্যে নিবেদনের ঘাটতি লক্ষ্য করেছেন জ্যোতি, দায়িত্বজ্ঞান নিয়েও তুলেছেন প্রশ্ন।
বাংলাদেশের বড় শক্তির জায়গা বোলিং বিভাগ। এবার বোলাররা সেভাবে অবদান রাখতে পারেননি। আবার বোলাররা সম্ভাবনা তৈরি করলেও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ফল পক্ষে আসেনি। প্রথম ওয়ানডেতে অজিদের ২১৩ রানে আটকে বাংলাদেশ অলআউট হয় ৯৫ রানে, হারতে হয় ১১৮ রানের বড় ব্যবধানে। পরের দুই ওয়ানডেতে যথাক্রমে ৯৭ ও ৮৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। দুই ম্যাচেই দেড়শ'র বেশি বল হাতে রেখে জেতে অস্ট্রেলিয়া।
সব মিলিয়ে অজিদের বিপক্ষে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজটি দুঃস্বপ্নের কেটেছে বাংলাদেশের মেয়েদের। তৃতীয় ওয়ানডে শেষে সংবাদ সম্মেলনে জ্যোতি বলেন, 'পুরো দল অনেক হতাশ। সবাই আসলে এমন আশা করেনি। আমরা নিজেরাও আশা করিনি, এতোটা বাজে খেলব। আমাদের নিবেদনের অভাব তো অবশ্যই বলবো। প্রতিটা দিন টপ-অর্ডার যেভাবে ব্যাটিং করেছে... তাদের থেকে আমরা পাইনি। তারা মাঠে থাকতে পারেনি, থাকলেও রান করতে পারেনি। জুটি গড়ার দিকে কারও কোনো মনোযোগ ছিল না। এমন মনে হচ্ছিল যেন, অন্যদের দিকে দায়িত্ব ঠেলে দেওয়া হচ্ছে যে, 'আমি পারিনি, তুমি করো।' তো পুরো জিনিসটা আসলে দলের জন্য নেতিবাচক।'
প্রথম ম্যাচে অল্প রানে অলআউট হওয়ার পরই মূলত খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে কঠিন হয়ে যাবে, এমন ভাবনা পেয়ে বসে ক্রিকেটারদের। অথত ভারতের মতো দলের বিপক্ষেও কিছুদিন আগে সিরিজ জেতে তারা। ভারত ও অস্ট্রেলিয়া মধ্যে পার্থক্য জানতে চাইলে জ্যোতি বলেন, 'অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের পার্থক্য… প্রথম ম্যাচে যখন ১০০-এর নিচে আউট হয়ে গেলাম, তখন থেকে সবার মধ্যে ছিল যে কঠিন হয়ে যাবে, কঠিন হয়ে যাবে। মস্তিষ্কে এটা ঢুকে গেছে। না হলে দ্বিতীয় ম্যাচে উইকেট অনেক ভালো ছিল। তারাও ব্যাটিং করছে, আমরা কেন করতে পারব না।'
বাংলাদেশের ব্যাটাররা কেন পারবেন না, অনেকের মতো এই প্রশ্নটি জ্যোতিরও। তবে নিজেদের স্কিলে কোনো ঘাটতি দেখছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'মনে হয় মনস্ত্বাত্ত্বিক ব্যাপার। কারণ স্কিল অনুযায়ী তো সমস্যা আছে বলে মনে হয় না। যদি থাকতো, তাহলে তো আগে ম্যাচ জিততে পারতো না। আমি জানি না সবার মধ্যে কী কাজ করছে। আমি তো সবাইকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেন জানি সবাই ব্যাকফুটে ছিল প্রথম ম্যাচ থেকেই। সেখান থেকে খেলোয়াড়রা আর ফিরতে পারেনি।'
'খেলোয়াড়ের মন বা মস্তিস্কের ব্যাপারটি বুঝতে পারব না। তবে অনেক সময় নেতিবাচক ব্যাপার চলে আসে। যদি ভালো শুরু না পায়, তখন মনে করে যে, "না, আমার হচ্ছে না।" যখন প্রথম ম্যাচে করতে পারেনি রান, পরের ম্যাচে পারেনি, তখন কিন্তু নিজে থেকেই ব্যাকফুটে চলে যায়। সেখান থেকে অনেকে ফিরে আসতে পারে, অনেকে পারে না। আমি বলব মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার।' যোগ করেন জ্যোতি।
এমন সিরিজের পর দলের সবাইকে ইতিবাচক থাকতে বলছেন জ্যোতি। ঈদের পর ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, এর আগের সময়টায় নিজেরাই নিজেদের অনুপ্রাণিত রাখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের অবশ্যই ইতিবাচক থাকতে হবে। এটা এখন আমাদেরই দায়িত্ব, আমরা কীভাবে নিজেদেরকে অনুপ্রাণিত করব। কারণ সামনে আবার আমরা ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলব। তো টি-টোয়েন্টিতে যদি আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি, সেটা আমাদের পরবর্তী সিরিজগুলোতে সাহায্য করবে। আমরা যেহেতু ব্যর্থ হয়েছি, আমাদেরই নিজেদের উজ্জীবিত করতে হবে।'