স্মৃতি বিজড়িত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ক্রিকেটাররা, দৌড়ে সেরা নাহিদ-তানজিম
এক সময় ক্রিকেটের মেলা বসতো বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশের অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচই এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেবল ক্রিকেটই নয়, ফুটবল ম্যাচও হতো এখানে। ভাগাভাগি করে এই মাঠে খেলতে হতো আমিনুল ইসলাম বুলবুল, আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, মোহাম্মদ রফিকদের। এসব অবশ্য অনেক আগের কথা, সর্বশেষ ২০০৫ সালে এই মাঠে বাংলাদেশের ম্যাচ হয়েছে। এরপর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে একমাত্র ক্রিকেটীয় কার্যক্রম ছিল ২০১১ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
দীর্ঘদিন পর এই মাঠে ফিরলো ক্রিকেট। ক্রিকেট বলতে ম্যাচ বোঝায়, সেই অর্থে অবশ্য ক্রিকেট ফেরেনি। দীর্ঘদিন পর স্মৃতি বিজড়িত এই মাঠে ফিরলো ক্রিকেটীয় কার্যক্রম। স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে দৌড়ে ক্রিকেটীয় আবহ ফেরালেন ৩৫ ক্রিকেটার। এখানে শনিবার সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত রানিং সেশন ছিল জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের। ১৬'শ মিটার দৌড়ের আয়োজন করা হয়, সেখানে সেরা হন দুই তরুণ পেসার নাহিদ রানা ও তানজিম হাসান সাকিব।
২০০৫ সালে ৩১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ, ওটাই এই মাঠের সর্বশেষ ম্যাচ। এরপর মিরপুর শের বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে করা হয় হোম অব ক্রিকেট। অধিকাংশ ম্যাচ এই মাঠে আয়োজন করা হয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কার্যালয়ও এখানে। আগামী ৩ মে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ক্রিকেটারদের ফিটনেস মূল্যায়নে ট্র্যাকের প্রয়োজন অনুভব করে বিসিবি, এ কারণেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামকে বেছে নেওয়া।
বর্তমান দলে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে কেবল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমের এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সেটাও অবশ্য জাতীয় দল বা স্বীকৃত কোনো ম্যাচে নয়। ২০০৪ সালে ঘরোয়া একটি টুর্নামেন্ট খেলেন মাহমুদউল্লাহ। বিকেএসপির হয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেছেন মুশফিক। দীর্ঘদিন পর মাঠটিতে ফিরে সিনিয়র এই দুই ক্রিকেটার যেন অতীতে ফিরে গেলেন। গ্যালারির দিকে তাকিয়ে রইলেন, আঙুল উঁচিয়ে অন্যকে বোঝাতে চাইলেন ফেলে আসা দিনের কথা।
সাবেক ওপেনার ও বর্তমানে জাতীয় দলের ম্যানেজার নাফিস ইকবাল স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'খুব সম্ভবত ১৯৯৪ সালে প্রথম এই মাঠে খেলা দেখতে এসেছিলাম। আমার কাজিন ফারুক ভাই (ফারুক আহমেদ) জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। বাংলাদেশের যে আইকনিক প্লেয়াররা ছিলেন, এই মাঠে তাদের দেখে খেলা শুরু। ঘরোয়া ক্রিকেটেও এখানেই আমার শুরু। আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ যে ইনিংসটা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে, সেটাও এই মাঠে।'
'আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে বাদ পড়েছিলাম। (২০০৪) বিশ্বকাপ শুরুর আগে ভারতের বিপক্ষে একটি অনুশীলন ম্যাচের জন্য ডাকা হয়। ওই ম্যাচে আমি সেঞ্চুরি করি। তেমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না যে, ভালো খেলতে হবে। তবে এই ইনিংসটা যে এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে সেটা বুঝতে পারিনি। এই মাঠে ঢুকে ওই ইনিংসের কথাই প্রথম মনে পড়েছে।' যোগ করেন তিনি।
এই মাঠে দেশের হয়ে ৮টি ওয়ানডে খেলেছেন নাফিস। তার মতো এই মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি শাহরিয়ার নাফিসের। ঘরোয়া ক্রিকেটের অনেক ম্যাচ এখানে খেললেও দেশের হয়ে খেলতে পারার আক্ষেপ রয়ে গেছে বাঁহাতি এই ওপেনারের। স্মৃতি বিজড়িত মাঠটিতে গিয়ে রোমাঞ্চিত ক্রিকেটাররা। সেটা জানাতে গিয়ে নাফিস বলেন, 'যারা একদম নতুন, তারা এই মাঠে খেলেনি। তবে সব সময় এই মাঠের কথা শুনেছে '
'এখন তো জাতীয় দলে এমন খেলোয়াড়ও আছে, যার জন্ম ২০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে। তারা খুবই রোমাঞ্চিত। শুধু ক্রিকেটার নয়, আপনারাও হয়তো খুব রোমাঞ্চ অনুভব করেছেন। সাধারণত ভোর ৬টায় ফিটনেস টেস্ট দেখতে এতো মানুষ আসার কথা না। আমি নিশ্চিত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দেখেই এসেছেন। সবার জন্য এটা দারুণ একটা অভিজ্ঞতা ছিল।' বলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গিয়ে রোমাঞ্চ কাজ করলেও করলেও সময়টা কঠিন ছিল ক্রিকেটারদের জন্য। তীব্র গরমে দিতে হয়েছে ফিটনেস পরীক্ষা। দৌড়াতে হয়েছে ১৬'শ মিটার, ছিল ৪০ মিটারের স্প্রিন্টও। কিছুক্ষণ গা গরম করে ফিটনেস পরীক্ষা দিতে নামেন ক্রিকেটাররা। স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ ন্যাথান কিলির তত্ত্বাবধানে দুই দফায় ৪০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নিতে হয় তাদের। বিসিবির দুই ট্রেনার মীর ইফতি খায়রুল ইসলাম ও তুষার কান্তি হাওলাদার পর্যবেক্ষণে ছিলেন।
৪০ মিটারের স্প্রিন্টের পর অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে ১৬'শ মিটার দৌড়ান ক্রিকেটাররা। এতে সেরা হন নাহিদ ও তানজিম। দুই দলে ভাগ করে ৪*৪০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হন এই দুই পেসার। সবার আগে দৌড় শেষ করে জ্যামাইকার কিংবদন্তি স্প্রিন্টার উসাইন বোল্টের মতো করে উদযাপন করেন নাহিদ। নাহিদ ও তানজিম সেরা হলেও এই দৌড়ে উত্তীর্ণ হওয়া না হওয়া বা প্রথম-দ্বিতীয়র কোনো ক্রম নেই। সংবাদমাধ্যমকে এটা জানান ট্রেনার ইফতি খায়রুল।
টানা খেলার মধ্যে থাকায় জাতীয় দল ও আশপাশে থাকা ক্রিকেটারদের ফিটনেসের সবশেষ অবস্থা বোঝার জন্য এই ফিটনেস পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এদিন ৩৫ জন ক্রিকেটার অংশ নেন। চোটের কারণে ছিলেন না সৌম্য সরকার ও তাইজুল ইসলাম। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএল খেলছেন মুস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া টানা খেলার ধকলের সামলাতে অংশ নেননি তাসকিন আহমেদ।
সারা বছর সবুজ ঘাসে ক্রিকেটার সব ক্রিকেটীয় কার্যক্রম চলে। এবার ট্র্যাক কেন? ব্যাখ্যায় ইফতি বললেন, 'অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক বেছে নেওয়ার কারণ আসলে টাইমিংয়ের একটা বিষয় আছে। আমরা যদি আন্তর্জাতিকভাবে টাইমিং দেখি, তাহলে বেশ কিছু পদ্ধতি আছে। আমরা আজ ১৬'শ মিটার টাইম ট্রায়াল নিলাম। অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে যথাযথ টাইমিংটা পাব। কারণ ওভাবেই হিসেব করা হয়। এটা ক্রিকেটারদের কাছে নতুন মনে হয়েছে। সব মিলিয়ে ভালো।' এটাই সর্বশেষ মূল্যায়ন নয়। মিরপুর স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়ামে ন্যাথান কিলির সঙ্গে বিশেষ সেশনে অংশ নেওয়ার কথা ক্রিকেটারদের।