বেনেট-রাজার শাসনে বড় ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ
প্রথম তিন ম্যাচ দিয়েই সিরিজ জয়, পরের ম্যাচেও জেতে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচ জিতে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। কিন্তু এই ম্যাচেও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের বেহাল দশা। পুরো সিরিজজুড়ে ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী থাকা বাংলাদেশ আজ অধিনায়ক শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের লড়াইয়ে যে সংগ্রহ পায়, তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। ব্রায়ান বেনেট ও জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজার দাপুটে ব্যাটিংয়ে বড় হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে স্বাগতিকদের।
রোববার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ধারাবাহিকভাবে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়ে শঙ্কায় পড়ে যাওয়া দলটি সিরিজ জিতলো ৪-১ ব্যবধানে। সম্ভাবনা জাগিয়েও প্রথমবারের মতো পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ নেওয়া হলো না বাংলাদেশের।
টস হিরে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই দিক হারায়। ১৫ রানেই তিন উইকেট হারানো দলকে পথ দেখান শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ। পরে সাকিব আল হাসান ও জাকের আলী ২০ ছাড়ানো ইনিংস খেললে ৬ উইকেটে ১৫৬ রান পায় বাংলাদেশ। জবাবে এই সিরিজে প্রথমবারের মতো ভালো শুরু করা জিম্বাবুয়ে বেনেট ও রাজার ব্যাটে হেসেখেলেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায়। ৯ বল হাতে রেখেই ৮ উইকেটের বড় ব্যধানে জেতে হাসিমুখে সিরিজ শেষ করা দলটি।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালোই হয় জিম্বাবুয়ের। ৪.১ ওভারে ৩৮ রানের জুটি গড়েন দুই ওপেনার বেনেট ও তাদিওয়ানাশে মারুমানি। যদিও এই জুটির প্রায় সব রানই বেনেটের করা। ৭ বলে ১ রান করে আউট হন মারুমানি। প্রথম উইকেট হারানোর চাপ দলকে বুঝতেই দেননি বেনেট ও রাজা। দ্বিতীয় উইকেটে ৬৬ বলে ৭৫ রানের জুটি গড়েন তারা।
বেনেটের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৪৯ বলে ৫টি করে চার ও ছক্কায় ৭০ রানের দুর্বার ইনিংস ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টিতে এটা তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি, ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসও। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তৃতীয় উইকেটে ২০ বলে ৪৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জেতান রাজা ও জোনাথন ক্যাম্পবেল।
১৮ বলে ২৪ রান দরকার ছিল জিম্বাবুয়ের। সাইফউদ্দিনের করা ১৮তম ওভার থেকেই ১৯ রান তোলে সফরকারীরা। এই ওভারে টানা ২টি ছক্কা ও একটি চার মারেন টি-টোয়েন্টিতে ১৪তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া রাজা। জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ৪৬ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭২ রানে অপরাজিত থাকেন। ৯ বলে ৮ রান করেন ক্যাম্পবেল। বাংলাদেশের সাকিব ও সাইফউদ্দিন একটি করে উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমকে হারায়। পরের ওভারে সৌম্য সরকারও ফিরে যান। ৯ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশের চাপ আরও বাড়িয়ে তোলেন ব্রায়ান বেনেট। পঞ্চম ওভারে তাওহিদ হৃদয়কে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন তিনি।
১৫ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে সামলে নেওয়ার দায়িত্ব নেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ উইকেটে ৪৫ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন তারা। দলীয় রান ৮০ পেরোনোর পর থামেন শান্ত, ২৮ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৬ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। এরপর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ।
এই জুটি থেকে ৩৩ বলে ৩৯ রান আসে। আগের টি-টোয়েন্টি দিয়ে ফেরা সাকিব ১৭ বলে একটি ছক্কায় ২১ রান করেন। ১৮তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৪৪ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংসসেরা ৫৪ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। টি-টোয়েন্টিতে এটা তার অষ্টম হাফ সেঞ্চুরি। বাংলাদেশ দেড়শ পেরোয় জাকের আলী অনিক ও মোহাম্মদ সাইফিউদ্দিনের ব্যাটে।
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ১২ বলে ২৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তারা। এই জুটির বেশিরভাগ রানই অবশ্য জাকেরের। ডানহাতি এই উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান ১১ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ২৪ রান করেন। সাইফউদ্দিন ৪ বলে ৬ রান করেন। তানজিদ ২, সৌম্য ৭ ও হৃদয় ১ রান করেন। জিম্বাবুয়ের ব্লেসিং মুজারাবানি ও ব্রায়ান বেনেট ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ও লুক জংওয়ে।