চরম হতাশার পারফরম্যান্সে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ হার বাংলাদেশের
কী দিয়ে এই লজ্জা ঢাকবেন নাজমুল হাসান শান্তরা? এবার কিসের দোহাই দেবেন অধিনায়ক? একই পিচে খেলছে যুক্তরাষ্ট্রও। বলতে গেলে একেবারেই আনকোড়া এক দলের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কালো অধ্যায়গুলোর একটিই লিখল বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া এই দল। আজ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে স্বাগতিক দলের কাছে ছয় রানে হেরে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে খুইয়ে বসেছে নাজমুল হাসান শান্তর দল।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া মামুলি রানের লক্ষ্যও তাড়া করতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের যেন খেলায় কোনো মনোযোগই নেই। সেটি প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র বলে যে যুক্তি দেওয়া যেতো, এখন আর সেটিও মনে হচ্ছে না। যেন ধরে বেঁধে এনে যে কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিলেও এই শোচনীয় অবস্থাই হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জিতলেও যে ক্রিকেট বাংলাদেশ খেলেছে, তাতে সিরিজ হারলেও খুব অবাক হওয়ার থাকত না। বিশ্বকাপে যাবার আগে শঙ্কা তৈরি করে জিম্বাবুয়ে সিরিজে ব্যাটসম্যানদের যাচ্ছেতাই ফর্ম। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচের ব্যাটিং আরও প্রশ্ন তুলে দিল এই দলের সামর্থ্য সম্পর্কে।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া মাত্র ১৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই গলদ। নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই বোলার নেত্রাভালকারকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন সৌম্য সরকার। লিটন দাসের জায়গায় আজ একাদশে সুযোগ পাওয়া তানজিদ হাসান তামিম ইতিবাচক থাকতে চাইলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকলেন না। ১৫ বলে একটি করে চার ও ছয়ে ফিরে গেলেন ১৯ রান করে।
অধিনায়ক শান্ত একদমই ফর্মে নেই। এদিনও তার শুরু শম্বুকগতিতে। শেষ পর্যন্ত ৩৬ রান করলেন বটে, কিন্তু বল খেললেন ৩৪টি। দলীয় ৯২ রানে তাওহিদ হৃদয় ব্যক্তিগত ২৫ রান করে বিদায় নিলেন। ১০৬ রানের মাথায় ফিরে গেলেন মাহমুদউল্লাহ। ভরসার শেষ বাতিঘর হয়ে ক্রিজে ছিলেন সাকিব আল হাসান। এই বাঁহাতি অলরাউন্ডারসহ আরও দুই ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরলেন দলীয় রান ১২৪ থেকে ১২৫ এর মধ্যে।
তখনই বাংলাদেশের ম্যাচ হারা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছিল। যদিও রিশাদ হোসেন বীরত্ব দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অপর প্রান্তে কোনো সাহায্য পাননি। শেষ পর্যন্ত রিশাদ স্কুপ খেলার চেষ্টা করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলে শেষ হয় বাংলাদেশের যন্ত্রণার এক ইনিংস। ১৩৮ রানে থামে দলের সংগ্রহ, যা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া লক্ষ্য থেকে সাত রান দূরে। ছয় রানে ম্যাচ জিতে সিরিজও নিজেদের করে নিল স্বাগতিকরা।
যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন প্রায় সবাই। পেসার আলি খান ছিলেন সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। শেষ ওভারে বল করা সহ মাত্র ২৫ রান দিয়ে তিন উইকেট শিকার করেন তিনি। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন ভ্যান শ্যাল্কউইক ও নেত্রাভালকার।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বৃহস্পতিবার টেক্সাসের হিউস্টনে প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে দুই ওপেনার স্টিভেন টেইলর ও অধিনায়ক মোনান্ক প্যাটেলের পর অ্যারন জোন্সের ব্যাটে ছয় উইকেট হারিয়ে ১৪৪ রান তোলে যুক্তরাষ্ট্র। এই তিনজনই কেবল রান করেছেন, বাকিদের কেউ দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি।
শুরুটা মন্দ ছিল না তাদের, উদ্বোধনী জুটিতে ৬.৪ ওভারে ৪৪ রান যোগ করেন টেইলর ও প্যাটেল। এই জুটি ভাঙেন বাংলাদেশের লিগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। ফেরার আগে ২৮ বলে ৩টি চার ও ২টি চারে ৩১ রান করেন টেলর। এই ওভারে আন্দ্রের গৌসকেও ফেরান রিশাদ।
তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়েন প্যাটেল ও জোন্স। ৫৬ বলে ৬০ রানের জুটি গড়েন তারা। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন প্যাটেল। ৩৮ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪২ রান করেন যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক। ৩৪ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৫ রান করেন জোন্স। বাংলাদেশের শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান ও রিশাদ ২টি করে উইকেট নেন।