বাংলাদেশকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে সেমি-ফাইনালে আফগানিস্তান
সুপার এইটে টানা দুই হারের পর বিদায় এক প্রকার নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হারে সুযোগ আসে, সম্ভাবনা জাগে সেমি-ফাইনালে ওঠার। প্রথমে বল হাতে কাজটি দারুণভাবে করেন রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমানরা। আফগানিস্তানকে অল্পতে আটকে সেমিতে ওঠার সমীকরণ পাওয়া বাংলাদেশ শুরুও করে দাপুটে।
কিন্তু ম্যাচসেরা নাভিন-উল-হকের তোপের পর জাদুকর হয়ে দেখা দেন রশিদ খান। তাতে শেষ হয়ে যায় সেমির আশা, জয়ের পথও হয়ে দুর্গম। যা আর পাড়ি দেওয়া হয়নি বাংলাদেশের। রোমাঞ্চকর জয়ে ইতিহাস লিখে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠে গেল আফগানিস্তান। মঙ্গলবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংসটাউনে লো স্কোরিং ম্যাচে রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে ডাকওয়ার্থ-লুইস-পদ্ধতিতে বাংলাদেশকে ৮ রানে হারিয়েছে আফগানরা।
সুপার এইটে শূন্য হাতেই থাকতে হলো বাংলাদেশকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের পর ভারত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে হার মানলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল। বাংলাদেশের এই হারে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল অস্ট্রেলিয়াও। তিন ম্যাচে একটিতে জেতা অজিরা এই ম্যাচের ফলের দিকে তাকিয়ে ছিল। ভারতের বিপক্ষে হারের পর তাদের অধিনায়ক বাংলাদেশকে সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন 'কাম অন বাংলাদেশ'। কিন্তু অল্প রান তাড়ায় বারবার দিক হারিয়ে নিকষ কালো অন্ধকারে পতিত হলো তারা।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে আফগানিস্তান। শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে রান তুলতে সংগ্রাম করতে থাকা আফগানরা অল্পতেই থেমে যায়। রিশাদ, তাসকিন, মুস্তাফিজদের অসাধারণ বোলিংয়ে ৫ উইকেটে ১১৫ রানেই থামে তারা। সেমি-ফাইনালে উঠতে ১২.১ ওভারে এই রান পাড়ি দিতে হতো বাংলাদেশকে। কিন্তু সেটা হয়নি, লক্ষ্য বদলে জয়ে মন দেয় তারা। বৃষ্টির হানায় ১৯ ওভারে বাংলাদেশের নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১৪। পুরো লড়াইয়ে লিটন কুমার ছাড়া বাংলাদেশের কেউ-ই টিকতে পারেননি। নাভিন-রশিদের বোলিং তোপে ১৭.৫ ওভারে ১০৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
শুরুতে ১২.১ ওভারেই জেতার লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশের, সেভাবেই শুরু করেন লিটন। ৩ ওভারের মধ্যে ৩ উইকেট হারালেও রান তোলার গতি ঠিক ছিল তাদের। কিন্তু সপ্তম ওভার থেকে যে উইকেট বৃষ্টি শুরু হয়, তা আর থামানো যায়নি। এই সময়ে ৩টি উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে কোণঠাসা করে ফেলেন রশিদ। এর মাঝে একাই লড়ে যান লিটন, যদিও শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে জেতাতে পারেননি তিনি। তবু তার ইনিংসটিই কেবল উল্লেখ করার মতো।
ডানহাতি এই ওপেনার ৪৯ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৪ অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের ৮ জন দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। সৌম্য সরকার ১০ ও তাওহিদ হৃদয় ১৪ রান করেন। তানজিদ হাসান তামিম, সাকিব আল হাসান, রিশাদ হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমান; এই চারজন রানের খাতা খুলতে পারেননি। শান্ত ৫, মাহমুদউল্লাহ ৬, তানজিম ৩ ও তানকিন ২ রান করেন। ম্যাচসেরা নাভিন ৩.৫ ওভারে ২৬ রানে ৪টি উইকেট নেন। রশিদের শিকারও ৪ উইকেটে, ৪ ওভারে তার খরচা ২৩ রান। একটি করে উইকেট নেন ফজল-হক-ফারুকী ও গুলবাদিন নাঈব।
এর আগে ব্যাটিং করা আফগানদের প্রায় পুরো ইনিংসজুড়ে কোণঠাসা করে রাখে বাংলাদেশ। অবশ্য শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আফগানিস্তানের রানচাকায় লাগাম রাখলেও উইকেটের দেখা মিলছিলো না। ১১তম ওভারে গিয়ে প্রতিপক্ষের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন বল হাতে বাংলাদেশকে নেতৃত্বে দেওয়া রিশাদ। এরপর তিনি আরও দুই উইকেট নিলে এবং তার সঙ্গে মিলে তাসকিন-মুস্তাফিজরা কঠিন পরীক্ষা নেন আফগান ব্যাটসম্যানদের।
অবিশ্বাস্য বোলিং করেন একাদশে ফেরা তাসকিন। ডানহাতি এই পেসারের ডেলিভারি ব্যাটেই লাগাতে পারছিলেন না আফগান ব্যাটসম্যানরা। গতি আর দারুণ সব বাউন্সারে শাসন করে গেছেন তিনি। ৪ ওভারে একটি মেডেনসহ ১২ রানে একটি উইকেট নেন তাসকিন। অবশ্য আরও ভালো বোলিং ফিগার হতে পারতো তার। কিন্তু তার নিজের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে ছক্কা মারেন রশিদ।
বল হাতে দাপুটে ছিলেন এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ডট বল করা মুস্তাফিজুর রহমানও। বাঁহাতি এই পেসার ৪ ওভারে ১৭ রানে নেন একটি উইকেট। তবে আসল কাজটি করেছেন রিশাদ, তার উইকেট শিকারের কারণেই আফগানদের চেপে ধরতে পেরেছেন বাংলাদেশের বাকি বোলাররা। ডানহাতি এই লেগ স্পিনার ৪ ওভারে ২৬ রানে ৩টি উইকেট নেন। সাকিব ৪ ওভারে ১৯ রান দেন, পাননি উইকেট। খরুচে তানজিম হাসান সাকিব ৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থেকে যান।
আফগানদের পথ দেখানো গুরবাজ ১৭তম ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করেন। ডানহাতি এই ওপেনার ৫৫ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৩ রান করেন। এর আগে ইব্রাহিম জাদরানের সঙ্গে ৫৯ রানের জুটি গড়েন তিনি। ২৯ বলে একটি চারে ১৮ রান করেন ইব্রাহিম। আজমতউল্লাহ ওমরজাই ১২ বলে ১০ রান করেন। শেষ দিকে বিশাল বিশাল ছক্কায় বাংলাদেশের লক্ষ্য বড় করা রশিদ ১০ বলে অপরাজিত ১৯ রান করেন, মারেন ৩টি ছক্কা। মূলত তার ইনিংসটিই আফগানিস্তানকে একশো পেরিয়ে দেয়।