সৌদি আরবের ৫ শহরে হবে ২০৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপ, নতুন ১১ স্টেডিয়াম
সৌদি আরব ২০৩৪ সালের পুরুষ বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের জন্য ১১টি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে।
টুর্নামেন্টের জন্য ফিফা সৌদি আরবের আনুষ্ঠানিক বিড বই উন্মোচন করেছে যেখানে পাঁচটি প্রস্তাবিত আয়োজক শহরের রূপরেখা দেয়া হয়েছে। শহরগুলো হলো— রিয়াদ, জেদ্দা, আল খোবার, আভা এবং নিওম; যার মধ্যে নিওম লোহিত সাগরের উপকূলে বর্তমানে নির্মাণাধীন ভবিষ্যত মরু শহুর।
মূল টুর্নামেন্টের ম্যাচ আয়োজনের জন্য ১৫টি স্টেডিয়াম ব্যবহার করা হবে যার মধ্যে আটটি স্টেডিয়াম সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত। এর মধ্যে রয়েছে নতুন কিং সালমান স্টেডিয়াম যেটি ৯২ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন; উদ্বোধনী খেলা এবং ফাইনাল খেলা দুটিই এখানে আয়োজিত হবে।
আরেকটি নতুন ভেন্যু নিওম স্টেডিয়াম 'দ্য লাইন'-এর অংশ হবে। 'দ্য লাইন' মরুভূমি এবং পাহাড় জুড়ে প্রসারিত একটি পরিকল্পিত ১০৬ মাইল দীর্ঘ শহর যেখানে দুটি সমান্তরাল গগনচুম্বী অট্টালিকা ওয়াকওয়ে দ্বারা সংযুক্ত। স্টেডিয়ামটি মাটি থেকে ৩৫০ মিটার উপরে থাকবে এবং বায়ু ও সৌর উত্স থেকে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করবে। এর নির্মাণ কাজ ২০৩২ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে শহরটির নির্মাণ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের কাছে উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।
এছাড়াও বিদ্যমান চারটি স্টেডিয়াম— কিং সৌদ ইউনিভার্সিটি স্টেডিয়াম, কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়াম, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি স্টেডিয়াম এবং কিং ফাহাদ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়াম সংস্কার করা হবে।
সৌদি আরবের আরও দশটি শহর বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারি দলগুলোর প্রশিক্ষণ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হবে। বিডে সৌদি আরবের মোট ১৩৪টি প্রশিক্ষণ ঘাটি রয়েছে যার মধ্যে ৬১টি বিদ্যমান সুবিধাযুক্ত এবং ৭৩টি নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে।
সৌদি আরবের ক্রীড়া মন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন তুর্কি বিন ফয়সাল আল সৌদ বলেছেন, দেশটি বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করছে।
অস্ট্রেলিয়া বিড না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে সৌদি আরবকে ২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজক করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল।
২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে এশিয়ান বা ওশেনিয়া ফুটবল কনফেডারেশন থেকে একটি দেশকে মনোনীত করা হয়েছিল কারণ ২০২৬ সালের টুর্নামেন্টটি উত্তর আমেরিকায় এবং ২০৩০ সালের টুর্নামেন্টটি আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপে আয়োজিত হবে।
সৌদি আরব জেদ্দায় ২০২৩ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে এবং ২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপও আয়োজন করবে।
দেশটি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে আল নাসেরে নিয়ে আসার পর থেকেই ঘরোয়া ফুটবল লীগে একটি বড় পরিবর্তন এনেছে এবং দেশটির পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) আল আহলি, আল হিলাল, আল ইত্তিহাদ এবং আল নাসের-এর মতো চারটি দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
এই উন্নয়ন সত্ত্বেও সৌদি আরব তার মানবাধিকার রেকর্ডের জন্য সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। ২০৩৪ সালের বিড বইটি ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার পাশাপাশি পরিবেশগত উন্নয়ন এবং মানবাধিকারের প্রতি সৌদি আরবের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শনের একটি সুযোগ হিসেবে বিশ্বকাপকে তুলে ধরে।
২০৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপ সৌদি আরবের যেসব স্টেডিয়ামে আয়োজিত হবে
রিয়াদ
- কিং সালমান আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম (পরিকল্পিত)— ধারণক্ষমতা: ৯২,৭৬০
- কিং ফাহাদ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়াম (সংস্কার করা হবে)— ধারণক্ষমতা: ৭০,২০০
- যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান স্টেডিয়াম (পরিকল্পিত)— ধারণক্ষমতা: ৪৬,৯৭৯
- নিউ মুরাব্বা স্টেডিয়াম (পরিকল্পিত)— ধারণক্ষমতা: ৪৬,০১০
- রোশন স্টেডিয়াম (পরিকল্পিত)— ধারণক্ষমতা: ৪৬,০০০
- প্রিন্স ফয়সাল বিন ফাহাদ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়াম (নির্মাণাধীন)— ধারণক্ষমতা: ৪৬,৮৫৫
- দক্ষিণ রিয়াদ স্টেডিয়াম (পরিকল্পিত)— ধারণক্ষমতা: ৪৭,০৬০
- কিং সৌদ ইউনিভার্সিটি স্টেডিয়াম (সংস্কার করা হবে)— ধারণক্ষমতা: ৪৬,৩১৯
জেদ্দা
- কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়াম (সংস্কার করা হবে)— ধারণক্ষমতা: ৫৮,৪৩২
- কিদ্দিয়া কোস্ট স্টেডিয়াম (পরিকল্পিত)— ধারণক্ষমতা: ৪৬,০৯৬
- জেদ্দা ডেভেলপমেন্ট স্টেডিয়াম (নির্মাণাধীন)— ধারণক্ষমতা: ৪৫,৭৯৪
- কিং আবদুল্লাহ ইকোনমিক সিটি স্টেডিয়াম (পরিকল্পিত)— ধারণক্ষমতা: ৪৫,৭০০
আল খোবার
- আরামকো স্টেডিয়াম (নির্মাণাধীন)— ধারণক্ষমতা: ৪৬,০৯৬
আভা
- কিং খালিদ বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়াম (সংস্কার করা হবে)— ধারণক্ষমতা: ৪৫,৪২৮
নিওম
- নিওম স্টেডিয়াম (পরিকল্পিত)— ধারণক্ষমতা: ৪৬,০১০
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়