এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে ‘নির্বিকার’ ভঙ্গিতে অলিম্পিকে পদক জিতে আলোড়ন তুললেন তুরস্কের শুটার
অলিম্পিক। চলছে ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টের খেলা। শ্যুটিংয়ের জন্য প্রতিযোগীরা পরে আছেন সব স্পেশালাইজড গিয়ার পরে আছেন। চোখে বিশেষ ধরনের লেন্স, শুটারদের জন্য যা নিয়মিত একধরনের 'গিয়ার'। কানে বিশাল 'ইয়ারমাফ' বা শব্দনিরোধক হেডফোন। গভীর মনোযোগ আর উত্তেজনা-উৎকণ্ঠায় টান টান সবাই।
কিন্তু একজন ব্যতিক্রম। তুরস্কের ৫১ বছর বয়সি শুটার ইউসুফ দিকেচ সেসব বিশেষায়িত গিয়ারের কিছুই পরেননি। গায়ের জার্সিটা দেখতে একেবারে সাদামাটা টি-শার্টের মতো। তার চোখে সাধারণ একটি চশমা; সবসময়ই এটি পরেন। কানে ইয়ারমাফ বলতে ছোট এক জোড়া 'বাড' বা তুলার মতো গুঁজে রাখা। ইউসুফের পকেটে বাঁ হাত—আর ডান হাতে পিস্তল তাক করা। অলিম্পিকের মতো বিশাল টুর্নামেন্টের এত সব উত্তেজনার কিছুই যেন তাকে স্পর্শ করেনি।
এই সাধারণ বেশভূষা আর 'নির্বিকার' ভঙ্গিতে এক হাত পকেটে ঢুকিয়েই প্যারিস অলিম্পিকের ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে সেভাল লাদিয়া তারহানের সঙ্গে মিশ্র ইভেন্টে রুপা জিতেছেন ইউসুফ। এরপর ইন্টারনেটে আলোড়ন পড়ে গেছে ইউসুফের 'আউটলুক' বা বেশভূষায়। সাধারণত শুটিংয়ের এমন ইভেন্টে যেমন পোশাক, ভাবভঙ্গি বা গিয়ার থাকে কোনো অ্যাথলেটের, ইউসুফ তার ধারেকাছে দিয়েও যাননি।
২০০৮ সাল থেকে অলিম্পিকে খেলছেন নামছেন ইউসুফ। ২০২৪ সালে প্রথমবার পদক জিতলেন।
ইউসুফের এই আউটলুক দেখে অভিভূত নেটিজেনরা। ছড়িয়ে পড়েছে অসংখ্য মিম। কেউ কেউ তো বলতে শুরু করেছেন, অলিম্পিকে 'হিটম্যান' পাঠিয়েছে তুরস্ক।
ইউসুফকে নিয়ে এক্সে একজন লিখেছেন, 'তুরস্ক ৫১ বছরের এক লোককে পাঠিয়েছে, যার কোনো বিশেষ লেন্স নেই, চোখ ঢেকে রাখার কিছু নেই, কানের সুরক্ষায় কিছু নেই। তিনি রুপা জিতেছেন।' ইউরোস্পোর্ট ওই পোস্ট শেয়ার করে ক্যাপশন দিয়েছে, 'দা নেম ইজ দিকেচ। ইউসুফ দিকেচ।'
আরেকজন আবার লিখেছেন, 'তুরস্ক কি কোনো "হিটম্যান"কেই পাঠিয়ে দিয়েছে?'
মজা করে আরেক নেটিজেন বলেন, 'আমি একবার দেখেই একজন প্রশিক্ষিত ঘাতককে চিনতে পারি।'
একইসুরে এক নেটিজন লিখেছেন, 'অবিশ্বাস্য সোয়্যাগ। কোনো স্পেশালাইজড লেন্স, ইয়ার প্রোটেকশন ছাড়াই অলিম্পিকে এসেছেন তুরস্কের ৫১ বছরের ইউসুফ দিকেচ। পকেটে হাত দিয়ে দুটি চোখ খুলে রেখে শ্যুটিং করছেন। আর খেলার ছলে রুপা জিতে চলে গেলেন।'
একজন বলেন, 'পুরো সিনেমা থেকে তুলে আনা হয়েছে।'
অপর একজন বলেন, 'দেখে মনে হচ্ছে তিনি পার্কে হাঁটছিলেন। আর তারপর অলিম্পিক্সে নামার সিদ্ধান্ত নেন।'
একজন আবার বলেন, 'আমার মনে হয়, তিনি ইচ্ছা করেই সোনা জেতেননি। কারণ সেটা খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে যেত।'
ইউসুফ দিকেচ শুটিংয়ে আছেন প্রায় দুই যুগ ধরে। একসময় তিনি তুরস্কের সেনাবাহিনীর নন-কমিশনড অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পড়াশোনা করেছেন আঙ্কারার গাজি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ফিজিক্যাল ট্রেনিং অ্যান্ড এডুকেশনে।
অলিম্পিকে এবারই প্রথম পদক জিতলেও ইউসুফ এর আগে ২০১৪ সালে স্ট্যান্ডার্ড পিস্তল ও সেন্টার ফায়ার পিস্তলে 'ডাবল' বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে এয়ার পিস্তলসহ সাতবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নও তিনি।
এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার নারী শুটার কিম ইয়েজির আউটলুকও আলোচিত হয়েছিল এবারের অলিম্পিকে। প্রথম দেখায় ইয়েজিকে মনে হতে পারে কোনো অ্যানিমে মুভির চরিত্র। বাঁ হাতে মেয়ের খেলনা পুতুলও রাখেন তিনি।
এক্সে অলিম্পিকের অফিশিয়াল হ্যান্ডল থেকে ইউসুফ ইয়েজির ছবি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, 'অলিম্পিকের শুটিং তারকারা, যাদের প্রয়োজন ছিল বলে আমরা ভাবতে পারিনি।'