‘শেষ ১২ বছরে বিসিবিতে ক্রিকেট ছাড়া সবই হয়েছে’
সরকার বদলের পর দেশে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। যে হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে ক্রীড়াঙ্গনকেও। এর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশের ক্রিকেট, যার অভিভাবক সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ইতোমধ্যে দুজন পরিচালক পদত্যাগ করেছেন, একজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত করা হয়েছে নতুন সভাপতি, যিনি নতুন দিনের আশা দেখিয়ে শুরু করেছেন কার্যক্রম।
এই কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল, বর্তমান বোর্ডে তাকে নিয়ে আলোচনা আছে। এ ছাড়া, ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে আইসিসিতে কর্মরত জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়কের সঙ্গে বেশ আগেই যোগাযোগ করা হয় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার পক্ষ থেকে, চাওয়া হয় দিক-নির্দেশনা। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকা সাবেক এই ব্যাটসম্যানকে অনেকে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবেও দেখতে চান।
যদিও বুলবুলের চাওয়া ভিন্ন। দেশের সব পর্যায়ের ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতে আইসিসির চাকরির পাশাপাশি অবৈতনিক হিসেবে বিসিবির ক্রিকেট ডিরেক্টর বা উপদেষ্টার পদে আগ্রহী তিনি। প্রয়োজনে আইসিসির চাকরি ছাড়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি, তবে সেটা নির্ভর করবে পদ, ভূমিকাসহ আরও কিছু বিষয়ের ওপর। পরিচালক হিসেবে বিসিবিতে আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া বুলবুল কোচ হিসেবে অভিজ্ঞ হলেও এই পদের জন্য প্রস্তুত নন বলেও মনে করেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নিজের আগ্রহের জায়গা ছাড়াও আগের বোর্ডের অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, ক্রিকেটকে পেছনে ঠেলে দেওয়া, ক্রিকেট কাঠামো বা প্রক্রিয়া নষ্ট করা, বিসিবিতে আসা পরিবর্তন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের করণীয়সহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বুলবুল।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড: বিসিবির শেষ ১২ বছরের কাজের মূল্যায়ন করতে বলা হলে কীভাবে করবেন?
আমিনুল ইসলাম বুলবুল: মূল্যায়ন তো বিভিন্নভাবে করা যায়। আমি যেটা সহজভাবে বুঝি বাংলাদেশে ক্রিকেট হচ্ছে সবার অংশগ্রহণ। ক্রিকেটের উন্নয়ন, ক্রিকেট কিছুটা পারফরম্যান্স, ক্রিকেটের স্বচ্ছতা, সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন। সব মিলিয়ে আমার মনে হয় না আমরা খুব কিছু করতে পেরেছি। ১২ বছরে যারা ছিলেন, ১২ বছর কিন্তু অনেক সময়। এই অনেক সময়ে আমরা সামনে আগানোর বদলে পেছনের দিকে গিয়েছি। আমাদের বেশি ফোকাস ছিল জাতীয় দল এবং জাতীয় দলের ছিটেফোটা কিছু পারফরম্যান্স ছাড়া কিছু হয়নি। মূলত আমরা সিস্টেমটাকে ধ্বংস করে দিয়েছি।
টিবিএস: আপনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিসিবিতে এমন খারাপ হয়েছে যা বলা যায় না। এর মধ্যে দুই-একটি কাজের কথা যদি উল্লেখ করতেন…
বুলবুল: এটা আসলে নম্বর ধরে বলতে পারবো না যে এটা এটা হয়েছে। তবে যে ক্রিকেট খেলতে আসবে, সে একটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় খেলতে আসবে। সেই জায়গাটাই তো পরিষ্কার নয়, অবিশ্বাসের জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি একবার ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলাম, ক্রিমিনালাইজড করা হয়েছে। এই জন্য যে, একটা দল কোয়ালিফাইং রাউন্ডে ঢুকতে পারে না একাডেমি থেকে। একটা ছেলে পারফরম্যান্স করেও সামনে এগোতে পারে না। কাউন্সিল বাণিজ্যর জন্য খেলার আগেই জেনে যেতো কে জিতবে, কে হারবে, পছন্দের আম্পায়ার দিয়ে খেলা হতো। তো এসব জিনিস যখন দেশের স্বার্থে মেলাতে যাবেন, তখন সেটা লজ্জা ছাড়া আর কী! এ ছাড়া দেশব্যাপী যে এতোগুলো টেস্ট ভেন্যু আছে, ফ্যাসিলিটি আছে; টেস্ট ভেন্যুগুলোর কোনো সঠিক ব্যবহার নেই। আপনি মূল ফ্যাসিলিটি উন্নত করতে পারেননি, কোচিং কোর্স হয় না দেশে ১৪ বছরে। এটা কোনো কথা হতে পারে! তাহলে কী নিয়ে কথা বলবো বা গর্ব করবো যে, এসব ভালো হয়েছে। তবে মূল কথা হচ্ছে শেষ ১২ বছরে ক্রিকেটটা হয়নি, এ ছাড়া আর সবই হয়েছে।
টিবিএস: বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের কাজ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
বুলবুল: আমাদের যে ক্রিকেট পরিচালনার স্তম্ভ আছে, যেমন আম্পায়ারিং, ক্রিকেট পরিচালনা, ডেভেলপমেন্ট, মার্কেটিং, মিডিয়া। এর মধ্যে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ কখনই তাদের কাজ সম্পর্কে পরিষ্কার নয়। তাদের কী কাজ ছিল, সেটা আমি জানি না; দূর থেকে দেখে এটাই মনে হয়। আমরা সবাই বলি আমাদের দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট খুবই অনুন্নত। এটা নাই, সিসিডিএম চালাতে পারে না, ম্যাচ পাতানো, এমন অনেক অভিযোগ। এর মূল কারণ ক্রিকেট পরিচালনাটাই পরিষ্কার নয়। ক্রিকেট পরিচালনার দুটি অংশ, একটা ঘরোয়া ক্রিকেট পরিচালনা, আরেকটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিচালনা। এই দুটির মাঝে সমন্বয় করতে পারলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যেতো। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনার দায়িত্ব হচ্ছে ক্রিকেটারদের দায়িত্ব নেওয়া, কোচদের দেখেশুনে রাখা, তাদের ফ্লাইট ঠিক করা, অন্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ঠিক করা, এসবই। কিন্তু এসব তো ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ নয়। কখনই মনে হয়নি বিভাগটির দায়িত্বে থাকা টিমটা ভালো ভূমিকা রাখার মতো।
টিবিএস: বিসিবির নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে, আগামীতে হয়তো আরও অনেক জায়গায় পরিবর্তন আসবে। এই সময়ে দায়িত্ব নেওয়া বা কাজ করাটা নতুনদের চ্যালেঞ্জর কিনা? এই বোর্ডের কাছে কী আশা থাকবে?
বুলবুল: আমি তো কোনো পরিবর্তনই দেখিনি সত্যি বলতে। সভাপতি নতুন এবং একজন নতুন পরিচালক এসেছেন। এ ছাড়া সব পুরনোই তো রয়ে গেছে। হয়তো দেশের একটা বিশাল পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলবো না, এখন একটা বৈপ্লবিক সরকার আছে দেশে, যদিও এটা স্থায়ী নয়। বিসিবিতে আমি এখনও কোনো পরিবর্তন দেখিনি। তবে আমরা অনেক আশাবাদী। বিসিবিতে সভাপতিসহ ২৫ জন পরিচালক, এ ছাড়া বোর্ডের কয়েকশ স্টাফ আছেন। সব মিলিয়ে এদের মধ্যে দুজন পরিবর্তন হয়েছে। এটাকে পরিবর্তন বলা যাচ্ছে না, পরিবর্তন আসুক, তারপর বলতে পারবো। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ১২ বছর ধরে আছেন। পরিবর্তন করার কাজটা তো উনার, কিন্তু তিনি হয়তো ১২ বছর ঘুমিয়ে ছিলেন। তার কার্যক্রম কী ছিল, সেটা আমরা দেখতে পাইনি।
টিবিএস: এই মূহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটে কোন কাজটা করা সবচেয়ে জরুরি?
বুলবুল: বোর্ড বা অন্য কিছু নয়, বিসিবির যে কয়েকশ কোটি টাকা আছে, সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় সম্পদ নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছেন ক্রিকেটাররা। এবং ক্রিকেটাররা যেন ক্রিকেট খেলতে পারে, সেই রকম পরিবেশ তৈরি করাই প্রধান কাজ। ক্রিকেট খেললে স্টেডিয়াম তৈরি হয়, আপনারা খবরের কাগজে লেখেন, টেলিভিশনের ক্যামেরা যায়, আন্তর্জাতিক-ঘরোয়া খবর হয়। স্বচ্ছভাবে ক্রিকেটাকে আগে মাঠে ফেরাতে হবে। ক্রিকেট যেন চলে দেশব্যাপী, শুধু ঢাকাকেন্দ্রীক নয়। প্রথম কাজ ওটাই হওয়া উচিত, সবাই ক্রিকেট খেলুক। ধরুন কেউ পানীয় উৎপাদন করে, তার প্রথম কাজ পানীয় তৈরি করা। তো প্রধান যে কাজ, সেটা আগে করতে হবে। স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসের সাথে ক্রিকেট খেলা হোক, এটাই একমাত্র চাওয়া।
টিবিএস: বোর্ডে আপনার আসার আলোচনা আছে, আপনি আসতে কতোটা প্রস্তুত?
বুলবুল: আমি তো আসলে সেভাবে কিছু শুনিনি। আমাকে একবার উপদেষ্টার একজন সহযোগী ফোন করেছিলেন, আমাকে দিক-নির্দেশনা দিতে বলেছিলেন। আমি দিয়েছিলাম। এরপরে আর যোগাযোগ হয়নি। এরপরে কিছু শুনিনি, যে কারণে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে পারবো না। কোথায় আছি বা আমার অবস্থান কী, এসব নিয়ে কথা বলার মতো কিছু হয়নি, সেই অবস্থান তৈরি হয়নি।
টিবিএস: আপনি আইসিসিতে কাজ করেন, ভালো বেতন পান। বিসিবির পরিচালকদের কোনো বেতন নেই। জীবনে বড় একটি পরিবর্তন এনে এখানে আসতে হবে। এসব বিবেচনায় পরিচালক পদে কি আপনার আসার সুযোগ আছে?
বুলবুল: পরিচালক হতে হলে শুরুতে হতে হবে কাউন্সিলর। এমন যদি হতো এই বোর্ড ভেঙে গেছে, পরিচালক মনোনীত করা যাচ্ছে। তেমন হলে হয়তো আমাকে ডাকতে পারতো কিংবা ডাকতো না, আমি জানি না। আরেকটা রাস্তা হচ্ছে, যদি নির্বাচনের মাধ্যমে আসতে হয়, আমাকে আগে কাউন্সিলর হতে হবে, নির্বাচনে দাঁড়াতে হবে। ওই প্রক্রিয়ায় যদি হয়, তাহলে কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ আমি তো কাউন্সিলরই না। আমি এক সময় খেলোয়াড়দের কাউন্সিলর ছিলাম, কারণ ছাড়া আমাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর বেতনের কথা বললেন, এটা আমার চাকরি, জীবিকা নির্বাহ করি আমি এটা দিয়ে। যেহেতু এটা চাকরি, এর সঙ্গে কোনো নেগোসিয়েশন নেই। তবে যেহেতু আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি, বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলেছি, আইসিসিতে এশিয়ার ম্যানেজার আমি; তো সেখান থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যতো ধরনের সাহায্য করা যায় আমার অবস্থান থেকে, আমি সেই সাহায্যটা করতে চাই। আমি যদি উপদেষ্টা হিসেবে বিসিবিতে যোগ দেই অবৈতনিক হিসেবে, আইসিসির দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। প্রাথমিক আলোচনা করে আমি এটাই জেনেছি। আইসিসির চাকরিটা করেই আমি বাংলাদেশের ক্রিকেটে ভূমিকা রাখতে চাই। তবে অন্যভাবেও হতে পারে, তবে সেটা নির্ভর করছে আমাকে কীভাবে চাচ্ছে। পদ, ভূমিকাসহ আরও কিছু বিষয় থাকবে সেখানে।
টিবিএস: জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে অনেকেই চান আপনাকে। বোর্ডেও এটা নিয়ে আলোচনা আছে। প্রথম দেশি কোচ হিসেবে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হলে সেটা আপনার জন্য কতোটা গর্বের হবে, একই সঙ্গে চাপও কিনা?
বুলবুল: কোচ হওয়ার ব্যাপারে আমার সঙ্গে কারও কোনো আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হলে তো সেটা অত্যন্ত গর্বের ব্যাপার। বর্তমানে আমার যে অবস্থান, ডেভেলপমেন্টের বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে কাজ করি আমি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অনেক অনেক বড় অপারেশন, ২০টা ছোট ছোট দেশ আছে, সেই সব দেশের সমস্ত অপারেশন দেখি আমি। বলা যায় প্রতিটা দেশের প্রধান নির্বাহীর কর্মকর্তার উপরে থেকে কাজ করি আমি। এই মুহূর্তে ম্যানেজমেন্টের কাজ এভাবে করছি। আবার যখন খেলোয়াড়দের দেখেন, খেলোয়াড়ের উপরে থাকেন কোচ, কোচের উপরে থাকেন একজন কোচ টিউটর, কোচ টিউটরের উপরে থাকেন মাস্টার এডুকেটর। আমি ওই কাজটা এখন করি।
কোচিংটা আমার কাছে পানির মতো, খুব সহজ একটা কাজ। সিনিয়র কাউকে জুনিয়রের রোল দিলে তার জন্য সেটা সহজ হবে। অমনই একটা অবস্থায় আছি। তবে আমাকে যদি বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই কাজে লাগাতে চায় বা আমি যদি কাজে লাগতে চাই, আমার মনেহয় ক্রিকেট ম্যানেজার বা ক্রিকেট ডিরেক্টর হলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভালোভাবে কাজ করতে পারবো। যেহেতু এই কাজটা আমি এশিয়াতে দায়িত্বের সঙ্গে করে যাচ্ছি। আমার দেশে যদি আমি কোচের থেকে ক্রিকেট ডিরেক্টর হই, সমস্ত দেশের ক্রিকেট আমি চালাবো, ওই রকম একটা পজিশন হলে হয়তো বাংলাদেশকে ভালো সার্ভিস দিতে পারবো। তাহলে বড় পরিসরে কাজ করা যাবে।
ধরুন, বরগুনা বা পার্বত্য চট্টগ্রামের একটা ছেলে ক্রিকেট খেলতে শুরু করলো। তার শেষটা দেখা উচিত যে আমি আজ খেলা শুরু করলাম, আমার শেষ হচ্ছে জাতীয় দলে খেলা। এই যে তার জীবনের সফর, এই সফরটি তাকে লালন করানো, পথ দেখানো এবং বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রশিক্ষণ (ট্রেইনিং)। বয়সভিত্তিকে বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রশিক্ষণ, জাতীয় দলের ক্রিকেটারের আরেক ধরনের প্রশিক্ষণ। মুশফিকদের মতো অভিজ্ঞদেরও প্রশিক্ষণ দরকার হয়, তবে সেটা ভিন্ন রকমের। এই সবার প্রশিক্ষণের ডিজাইন তৈরি করা এবং তাদের জন্য পরিষ্কার একটা পথ তৈরি করা যে, যারা ভালো করবে, তারা সুযোগ পাবে; এমন শক্ত ও হাই পারফরম্যান্স জাতীয় দল তৈরি করার কাজটা মনেহয় আমি ভালো করতে পারবো।
টিবিএস: যেটা বললেন, কোচিংয়ের কাজে আপনি অভিজ্ঞ, খুব সহজেই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এই মুহূর্তে কোচিং করাতে আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত?
বুলবুল: মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া না হওয়া, তেমন কোনো বড় ব্যাপার নয়। যেহেতু আমি ওই রোলটা করি না বেশ কিছুদিন ধরে, শুরুতে আমাকে কিছুদিন মানিয়ে নিতে হবে। তবে আমার কাছে মনে হয়, আমি বিনীতভাবে বলতে পারি, জাতীয় দলের কোচ হওয়ার জন্য যে মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হয়, এই মুহূর্তে তা আমার নেই। তবে অভিজ্ঞতায় আমার কোনো ঘাটতি নেই, ইনশাআল্লাহ।
টিবিএস: জাতীয় দলের প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে একটা প্রশ্ন। লঙ্কান এই কোচের তত্ত্বাবধানে বড় একটি ফল এলো, পাকিস্তানকে হারালো বাংলাদেশ। আগেও ফল এসেছে। এরপরও তাকে বাদ দেওয়ার আলোচনা চলছে। বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, তাকে রাখার কোনো কারণ নেই। পুরো ব্যাপারকে কীভাবে দেখেন?
বুলবুল: এ বিষয়ে মতামত দেওয়া আমার ক্ষেত্রে একবারেই অশোভন, অপ্রয়োজনীয় হবে। উদাহরণ হিসেবে ফারুক (ফারুক আহমেদ, বিসিবি সভাপতি) ভাইয়ের কথা বলতে পারি। উনি আমাকে আদর করে বুলি ডাকেন। সম্পর্কের গভীরতার কারণে এটা হয়। তো যার সঙ্গে কাজ করিনি, তার সম্পর্কে মন্তব্য করা ঠিক নয়। আগের বিসিবি সভাপতির সঙ্গে আমি কাজ করিনি, তাকে ওভাবে চিনিও না। আমি তার সম্পর্কে যেমন কিছু বলতে পারবো না, হাথুরুসিংহের সম্পর্কেও পারবো না। সে আমার বন্ধু, ১৯৮৮ সাল থেকে তার সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি। আমি যখন মোহামেডানে খেলতাম, সে আমার নেতৃত্বে এক বছর খেলেছে।
কোচ হিসেবে তার সঙ্গে আমি কখনই কাজ করিনি। তবে পত্রিকায় পড়ে কিছুটা জেনেছি। প্রথমে সে ছিল একজন কোচ, পরবর্তীতে সে হয়ে গেল নির্বাচক, সে ঢুকে গেল ঘরোয়া ক্রিকেটে। তার যোগাযোগ ছিল মাত্র দুজনের সাথে, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের সঙ্গে নয়। সে সময় ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান ছিলেন আকরাম খান। কিন্তু হাথুরুসিংহে যোগাযোগ করতেন অন্য দুজনের সাথে, নাম বলতে চাই না। এরপর নিজে নিজেই সে চলে গেলেন, তাকে বাদ দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়বার যখন এলেন, খবরের কাগজ পড়ে মনে হয়েছে সে খুবই আক্রমণাত্মক প্রকৃতির কোচ।
ক্রিকেটার শামসুর রহমান শুভর একটি সাক্ষাৎকার দেখে অনেক কিছু জানলাম, আবার আমাদের প্রতিষ্ঠিত একজন বাঁহাতি স্পিনারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক খেলোয়াড় আছে, আমার সঙ্গে নিয়মিত কথা বলে, তাদের কথা শুনে মনে হয়েছে তার আরও কিছুটা আন্তরিক হওয়া উচিত, সহযোগিতামূলক ভাবনা রাখা উচিত, বন্ধু হওয়া উচিত। একজন কোচ তো বাবার মতো, শিক্ষক। তার সাথে কাজ না করে, শুনে যেটা মনে হচ্ছে, এখানে তার উন্নতির জায়গা আছে। ফারুক ভাই তাকে ভালো চেনেন। কারণ একই সময়ে একজন কোচ, আরেকজন প্রধান নির্বাচক ছিলেন। যে কারও চেয়ে তারা নিজেদের ভালো করে জানে।
টিবিএস: নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশ থেকে চলে গেছে। এটার কোনো প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটে?'
বুলবুল: পুরো ঘটনাটা আমাদের সবার নাগালের বাইরে ছিল, পুরো দেশের ব্যাপার। কতো দেশে ভূমিকম্প হয়, করোনার সময় অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দুবাই চলে যায়। এটা একটা বিপর্যয়। প্রতিটা বোর্ডের একটি বিপর্যয় ম্যানেজমেন্ট পরিকল্পনা থাকে, আমাদের কিছু ছিল কিনা আমি জানি না। যাই হোক, দেশের ঘটনাটা অপ্রত্যাশিত, হঠাৎ হয়ে গেছে। আর আইসিসির ইভেন্ট এটা, আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। চলে গেলেও বাংলাদেশই আয়োজক থাকছে, এই টুর্নামেন্টের মালিক বাংলাদেশ। যেহেতু বেশ কিছু দেশের নিষেধাজ্ঞা আছে বাংলাদেশ ভ্রমণে এবং আইসিসি খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষভাবে দেখে। যদিও এই মুহূর্তে বাংলাদেশ খুবই নিরাপদ। এটা প্রমাণ করতে হয়তো একটু সময় লাগবে, তবে এটা কোনো ব্যাপারই নয়। এটা ঠিক হয়ে যাবে।