সাকিবকে খেলানোর বিপক্ষে মিরপুর স্টেডিয়ামে বিক্ষোভ
বিদায়ী টেস্ট খেলতে দেশে ফিরতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রওনা দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু মাঝপথে থামতে হয়েছে তাকে। দুবাইয়ে ট্রানজিট নেওয়া বাংলাদেশ অলরাউন্ডারকে সেখানেই অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তার আসার খবরে বিক্ষোভ হওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে এমন পরামর্শ দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে।
বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় সাকিবের না আসার সম্ভাবনাই বেশি। এমন কি তিনি নিজেই জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে দেশে ফিরছেন না। দুবাই থেকেই ফিরে যেতে পারেন দুবাইয়ে। কিন্তু এরপরও তাকে খেলতে না দিতে বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিক্ষোভ করছেন মিরপুরের ছাত্র-জনতা। এদিন মিরপুর স্টেডিয়ামের মূল মাঠ ও একাডেমি মাঠে অনুশীলন করেছে সফরে আসা দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল। দলটির নিরাপত্তার স্বার্থে মিরপুর ২ থেকে প্রশিকা মোড় পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে রাখে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী।
সাকিবের বিরুদ্ধে লেখা বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিরপুর স্টেডিয়ামে হাজির হন তারা। বিক্ষোভের শুরুতে হয় দেয়াল লিখন। যেখানে বাংলাদেশ অলাউন্ডারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এখন সাকিবের বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। আল মাসনূন নামের একজনের নেতৃত্বে চার-পাঁচজন বিসিবি কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। বিসিবির কাছে তাদের চাওয়া, সাকিবকে যেন দেশের মাটিতে খেলতে না দেওয়া হয়। তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দল থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। বাদ না দিলে হরতাল ও অবরোধের ঘোষণা দেবেন তারা।
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, সাকিবের দেশে আসা-যাওয়া নিয়ে তাদের কোনো কোনো কথা নেই। এক বিক্ষোভকারী বলেন, 'সাকিব আল হাসান দেশে আসবেন কি আসবেন না, এটা তার ব্যাপার। এটা নিয়ে আমাদের কথা থাকা উচিত নয়। তবে তার খেলা নিয়ে আমাদের ঘোরতোর আপত্তি আছে। তিনি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সদস্য, হত্যা মামলার আসামি। বিচারের মুখোমুখি হওয়ার তাকে আমরা কোনোভাবেই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেখতে চাই না, খেলা তো আরও পরের কথা।'
স্মারকলিপি দিয়ে বের হয়ে একজন বলেন, 'আওয়ামী সরকারের একজন এমপি বাংলাদেশের জার্সি গায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না। এই বেঈমানী আমরা হতে দিবো না। যেহেতু সাকিব আল হাসানকে দলে নেওয়া হয়েছে, আমরা দেখেছি। আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি, দ্রুততার সাথে তাকে দল থেকে বাদ দিতে হবে। বাদ না দিলে মিরপুরের ছাত্র-জনতা এক হয়ে হরতাল ও অবরোধের ঘোষণা দেব।'
সাকিবের দেশে আসার খবর জেনে বুধবার শিক্ষার্থীরা তার কুশপুত্তলিকা পোড়ান। তিনি দেশে ফিরলে তারা বিক্ষোভ করবে বলে ঘোষণা দেন। সেটারই ধারাবাহিকতায় আজ তারা প্রতিবাদ জানালেন। দিয়ে রাখলেন আরও ভিক্ষোভ করার হুমকিও। ভারত সফরে টেস্ট অবসরের ঘোষণা দেওয়া সাকিব দেশের মাটিতে শেষ ম্যাচ খেলার ইচ্ছার কথা জানান। এরপর থেকে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা পেরিয়ে তার দেশে আসার নিশ্চিত হয়, যদিও শেষ বেলায় তা থমকে গেছে।
জাতীয় দলে খেলার পাশাপাশি সংসদ সদস্যও ছিলেন সাকিব। গত জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাগুরা-১ আসন থেকে নির্বাচত হন তিনি। গত আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে নিহত গার্মেন্টকর্মী রুবেল হত্যা মামলায় নাম আসে সাকিবের, তাকে ২৮ নম্বর আসামি করা হয়। ছাত্র আন্দোলনে নিরব ভূমিকায় থাকা দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত হয়ে আসছেন তিনি।