১৬ উইকেটের দিন শেষে অস্বস্তিতে বাংলাদেশ
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট, যা অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের কাছেও অনেক সময় রহস্যের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের আগে তাই টস নিয়ে আলোচনা ছিল। টস জয়ে এগিয়ে থেকে ম্যাচ শুরু করা যাবে, জানা ছিল বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর। টস ভাগ্য পক্ষে আসে, ব্যাটিং নেয় স্বাগতিকরা। এ পর্যন্ত সবই ছিল প্রত্যাশামাফিক।
কিন্তু ব্যাট হাতে নেমে বাংলাদেশ যে পথে হেঁটেছে, সেটা প্রত্যাশার পুরোপুরি উল্টো। এ পথে আলোর উপস্থিতি কম, ঘুটঘুটে না হলেও অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা। ঘরের মাঠের সুবিধা নিতে চাওয়া দলটি শুরুতেই উইকেট হারিয়ে আর ঠিক পথে ফিরতে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার উইয়ান মুলডার, কাগিসো রাবাদা, কেশব মহারাজের বোলিংয়ের সামনে হতাশার ব্যাটিংয়ে ৪০.১ ওভারে ১০৬ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
মিরপুরে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। আগের সর্বনিম্ন ৮৭, পাকিস্তানের বিপক্ষে। এই মাঠের ইতিহাসেই এই দুটি ইনিংস সর্বনিম্ন, এরচেয়ে কম রান আর কোনো দল করেনি। এমন অস্বস্তির ব্যাটিংয়ের পর অবশ্য বোলিং দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। কিন্তু এরপরও স্বস্তি ফেরেনি। তাইজুল ইসলামের স্পিন ঘূর্ণির বিপক্ষে ভুগলেও বাংলাদেশের সংগ্রহ পেরিয়ে লিড নিয়েছে সফরকারীরা। ৪১ ওভারে ৬ উইকেটে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ ১৪০ রান, তাদের লিড দাঁড়িয়েছে ৩৪ রান।
উইকেটের ধরন, দুই দলের পারফরম্যান্সের ব্যবধানসহ অন্যান্য হিসেব মিলিয়ে অবধারিতভাবেই পিছিয়ে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে থাকা ৪ উইকেটও ঘরের মাঠের দলটির জন্য চিন্তার কারণ। বাকি থাকা রসদ নিয়ে স্কোরকার্ডে আরও ৪০-৫০ রান যোগ করতে পারলে প্রথম ইনিংসেই উল্লেখ করার মতো লিড মিলে যাবে তাদের। এ পথে এখনও ভরসা হয়ে টিকে আছেন সপ্তম উইকেটে ৩২ রানে অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়া কাইল ভেরেইন ও উইয়ান মুলডার। ভেরেইন ১৮ ও মুলডার ১৭ রানে অপরাজিত আছেন।
বাংলাদেশের ইনিংসের উইকেট বৃষ্টির মতো দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের চেহারাও অনেকটা তেমনই। প্রথম ওভারেই প্রোটিয়াদের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক এইডেন মার্করামের স্টাম্প উপড়ে নেন বাংলাদেশ পেসার হাসান মাহমুদ। শুরুর ধাক্কা সামলে জুটি গড়েন টনি ডি জর্জি ও ট্রিস্টান স্টাবস। দ্বিতীয় উইকেটে ৬৪ বলে ৪১ রানের জুটি গড়েন তারা। ২৩ রান করা স্টাবসকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙা তাইজুল এরপর একাই যেন দলের সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। স্পিন ঘূর্ণিতে ফিরিয়ে দিতে থাকেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের।
তাইজুলের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করা ডি জর্জি। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৭২ বলে ৪টি চারে ৩০ রান করেন। এরপর ম্যাথু ব্রিটজকের উইকেট তুলে নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২০০ উইকেট পূর্ণ করেন তাইজুল। সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এই মাইলফলক ছুঁলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার যাওয়া ৬ উইকেটের ৫টিই নিয়েছেন তাইজুল। এটা তার ক্যারিয়ারের ১৩তম ৫ উইকেট, যা বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ পুরোটা সময় ধুঁকে ধুঁকে ব্যাটিং করে। সর্বোচ্চ ৩০ রানের ইনিংস খেলেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। একমাত্র তিনিই কিছুটা লড়েছেন, ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ৩০তম ওভারে আউট হন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। বাকিদের কেউ ২০ রানের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি। বল হাতে পথ দেখানো তাইজুল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬ রান করেন। মুশফিকুর রহিম ১১ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ১৩ রান করেন। বাকিদের কেউ দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। রাবাদা, মুলডার ও মহারাজ ৩টি করে উইকেট নেন। একটি উইকেট পান ডেন পিট।