ব্যাটিং দুর্দশায় বাংলাদেশের বড় হার
সিরিজ জয়ের ভালো সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের নতুন কোচ ফিল সিমন্স। কেউ কেউ ২-০ ব্যবধানে জেতার আশার কথাও জানান। বর্তমান দলের শক্তিমত্তা ও উপমহাদেশের রেকর্ডের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকাকে খানিকটা 'খাটো' করেই দেখা হয়েছিল। কিন্তু খেলা মাঠে গড়ানোর পর পুরনো হিসেব বদলে গেল, বাংলাদেশের সম্ভাবনা মিলিয়ে গেল হাওয়ায়। চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের নামের পাশে জুড়ে গেল বড় এক হার।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। ভারত সফর থেকে ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী থাকা বাংলাদেশ সামান্যতম লড়াইও করতে পারেনি। ম্যাচটি যে চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে, সেটা বৃষ্টির কল্যাণে। এ ছাড়া আলোক স্বল্পতার কারণে প্রথম দুই দিনও পুরোটা সময় খেলা হয়নি।
ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগানো তো দূরের কথা, ফরম্যাট বিবেচনা করেও মিরপুর টেস্ট খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। কাগিসো রাবাদা, উইয়ান মুলডার, কেশব মহারাজের বোলিংয়ে বিপক্ষে দিশা হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪০.১ ওভারে ১০৬ রানেই অলআউট হয়ে যায়। যা মিরপুরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ। জবাবে কাইল ভেরেইনা ও মুলডারের ব্যাটিং দৃড়তায় ৩০৮ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা।
প্রথম ইনিংসেই ২০২ রানের বড় লিড পায় প্রোটিয়ারা, মিলে যায় জেতার রসদও। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেও হতাশা ছিল বাংলাদেশের। তবে এই ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজ ও জাকের আলী অনিকের দৃঢ়তায় অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়, বাংলাদেশ তোলে ৩০৭ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য দাঁড়ায় ১০৬ রান। যা ৩ উইকেটে ২২ ওভারেই পেরিয়ে যায় সফরকারীরা।
এই জয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হলো দক্ষিণ আফ্রিকার। ১০ বছর পর উপমহাদেশে টেস্ট জিতলো তারা। সর্বশেষ ২০১৪ সালের জুলাইয়ে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাওয়া ১৫৩ রানের জয়টি উপমহাদেশে তাদের সর্বশেষ সাফল্য। এরপর থেকে ১৪ টেস্টের ১০টিতেই হারে প্রোটিয়ারা, ড্র হয় ৪টি ম্যাচ। ৯ বছর বাংলাদেশ এসে টেস্ট খেলতে এসে এই অঞ্চলে নিজেদের রেকর্ড পাল্টে নিলো তারা।
৭ উইকেটের হারও অবশ্য বাংলাদেশের কাছে 'স্বস্তির' মনে হতে পারে। কারণ, প্রথম ইনিংসে হতশ্রী ব্যাটিংয়ের পর ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কায় পড়ে যায় তারা। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুও ছিল চরম হতাশার। ৪ রানের মধ্যেই হারাতে হয় দুই উইকেট। তৃতীয় উইকেটে মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
পরে জয় ও মুশফিকুর রহিম জুটি গড়ে দ্বিতীয় দিনের বাকি অংশ পার করেন। তবে তৃতীয় দিনের শুরুতেই এলোমেলা সব। ৩ উইকেটে ১০১ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করা বাংলাদেশ কাল ১১ রানের মধ্যেই তিন উইকেট হারায়। একে একে ফিরে যান আগের দিন ভালো লড়াই করা জয়, মুশফিক ও লিটন কুমার দাস। খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মিরাজ ও জাকের।
সপ্তম উইকেটে ২৫৪ বলে ১৩৮ রানের জুটি গড়েন তারা। এটা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা সপ্তম উইকেট জুটি, সব মিলিয়ে চতুর্থ। জাকেরের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১১১ বলে ৭টি চারে ৫৮ রান করেন অভিষিক্ত ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এরপর নাঈমকে নিয়ে আরও কিছুটা পথ পাড়ি দেন মিরাজ। দুপুরের দিকে বৃষ্টি ও আলোক স্বল্পতায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়।
এ কারণেই মূলত খেলা চতুর্থ দিনে গড়ায়। আজ সকালে মাত্র ২৫ মিনিট টিকতে পেরেছে বাংলাদেশ, যোগ করে ২৪ রান। ৭ উইকেটে ২৮৩ রান নিয়ে এদিন ব্যাটিংয়ে নামে তারা। এক রানের মধ্যেই ফিরে যান নাঈম হাসান। আগের দিন মিরাজকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া ডানহাতি এই অফ স্পিনার ২৯ বলে একটি চারে ১৬ রান করে আউট হন। ৩০০ পেরিয়ে থামেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনার ৭ রান করেন।
এরপর হাসান মাহমুদকে নিয়ে বেশি পথ পাড়ি দিতে পারেননি মিরাজ। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদার করা লেংথ বলে ব্যাট চালিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন ডানহাতি এই অলরাউন্ডার। এর আগে ১৯১ বলে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় ৯৭ রান করেন তিনি। বাংলাদেশের ইনিংসে এটাই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। মিরাজের সঙ্গে জুটি গড়া অভিষিক্ত জাকের ৫৮ রান করেন। জয় ৪০, শান্ত ২৩ ও মুশফিক ৩৩ রান করেন। তোপ দাগা প্রোটিয়া পেসার রাবাদা ৬ উইকেট নেন। কেশব মহারাজ ৩টি ও উইয়ান মুলডার একটি উইকেট পান।