বিপর্যয়ের পর মাহমুদউল্লাহ-তানজিমের ব্যাটে বাংলাদেশের লড়াই
অষ্টম উইকেটে যখন ইনিংসের সেরা জুটি জয়, সেটাও নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা; তখন বুঝতে বাকি থাকে না আগের ব্যাটসম্যানরা নিজেদের কাজটি ঠিকঠাকভাবে করতে পারেননি। না পারার দলেই বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান, এর মাঝে ব্যতিক্রম কেবল তানজিদ হাসান তামিম। প্রথম ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি করা বাঁহাতি এই ওপেনার আজও রান পেয়েছেন।
এরপর যতোটা লড়েছে বাংলাদেশ, সবটাই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তানজিদ হাসানের ব্যাটে। এই দুজনের রেকর্ড জুটিতে শেষ পর্যন্ত ২০০ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪৫.৫ ওভারে সব কটি উইকেট হারিয়ে ২২৭ রান তুলেছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল। এমন স্কোর গড়ে এই মাঠে জেতেনি কোনো দল।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ আজও ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিল। সৌম্য সরকারকে এক পাশে রেখে দাপুটে শুরুই করেন তানজিদ। কিন্তু সঙ্গীর ব্যর্থতায় আজও তিনি দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি। আগের ওয়ানডেতে ১৯ রান করা সৌম্য ৫ বলে ২ রান করে মিড অনে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন।
দলীয় ২৬ রানে প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশ শুরুর এই ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ১০০ রানের মধ্যে আরও ৪টি উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় তারা। একে একে ফিরে যান লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, তানজিদ হাসান ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। এদের মধ্যে কেবল তানজিদ উল্লেখযোগ্য রান করেন।
বাঁহাতি তরুণ এই ওপেনার ৩৩ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৬ রান করেন। আগের ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ৬০ রান। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সর্বশেষ ২০ ইনিংসে কোনো হাফ সেঞ্চুরির দেখা না পাওয়া লিটন অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল পুল করতে গিয়ে গালিতে ধরা পড়েন। নিজের ছায়া হয়ে ওঠা ডানহাতি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান ১৯ বলে ৪ রান করে আউট হন।
মিরাজের আউট ছিল খুবই দৃষ্টিকটু। ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসকে এলোমেলো করে দেওয়া ক্যারিবীয় পেসার জেডেন সিলসের একটি ডেরিভারি ছাড়তে গিয়ে শেষ মুহূর্তে ব্যাট চালান তিনি, কোণায় লেগে বল স্টাম্পে আঘাত হানে। ৫১ বলে ১ রান করেন তিনি। আফিফকে সাবলীল মনে হচ্ছিল। কিন্তু দলীয় স্কোর ১০০ ছোঁয়ার পর থামেন তিনিও। ২৯ বলে ৪টি চারে ২৪ রান করেন আফিফ।
আগের ম্যাচে দারুণ লড়া জাকের আলী অনিক ৯ বলে ৩ রান করে বিদায় নেন একটু পরই। রিশাদ হোসেন ৮ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি। ১১৫ রানে ৭ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ ও তানজিম। ১০৬ বলে ৯২ রানের জুটি গড়েন তারা। যা অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি, আগের সেরা ছিল ৮৪।
কিছুটা হলেও দলে স্বস্তি ফেরানো তানজিম ৬২ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৫ রান করেন। দেশের হয়ে ৯টি (আজকের ম্যাচসহ) ওয়ানডে খেলা ডানহাতি এই পেসারের এটাই ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। এরপর মাহমুদউল্লাহও আর টিকতে পারেননি। ৩১তম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ৯২ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৬২ রান করেন। আগের ম্যাচেও হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি।
শেষ দিকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে স্কোরকার্ডে কিছু রান যোগ করেন শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি এই পেসার ৮ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ১৫ রান করেন। বাংলাদেশের ৬ জন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। দুর্দান্ত বোলিং করা সিলস ৯ ওভারে ২২ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন। এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং তার। ২টি উইকেট পান গুডাকেশ মোটি। একটি করে উইকেট নেন অভিষিক্ত মারকুইনো মাইন্ডলে, রোমারিও শেফার্ড, জাস্টিন গ্রিভস ও রস্টন চেস।