রেকর্ডে রেকর্ডে তামিম ইকবাল
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন তামিম ইকবাল। আরও একবার অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বাঁহাতি এই ওপেনার; এভাবেও বলা যায়। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের মাঝেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেন তিনি। যদিও এক দিনের ব্যবধানেই সিদ্ধান্ত বদলান তামিম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে ফিরে আসার ঘোষণা দেন অভিজ্ঞ এই ওপেনার।
ফিরলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিমের পথচলা আগের মতো ছিল না। অবসর ভেঙে ফেরার পর বাংলাদেশের হয়ে মাত্র দুটি ওয়ানডে খেলেন তিনি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তামিম। অবসর ভেঙে ফিরলেও জাতীয় দলের বাইরেই ছিলেন, খেলছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেট। ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচকদের কাছ থেকে সময় নিলেও তামিম আর ফিরলেন না।
দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে পোর্ট অব স্পেনে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে জহির খানকে ছক্কা, ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত লর্ডসে সেঞ্চুরির পর হাওয়ায় ভেসে অনার্স বোর্ডে নাম তোলার ইশারা, এশিয়া কাপে টানা চার হাফ সেঞ্চুরির পর আঙুল দেখিয়ে উদযাপন, ২০১৮ এশিয়া কাপে এক হাতে ব্যাটিং করার মতো আইকনিক মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন তামিম। এ ছাড়া দেশের পক্ষে অনেক রেকর্ডেই তার নাম সামনের কাতারে, অনেক কীর্তিতে আছে কেবল তার নামই।
বাংলাদেশের পক্ষে তামিমের যতো রেকর্ড:
আন্তর্জাতিক রান: বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছান তামিম। বাংলাদেশের জার্সিতে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৫ হাজার ১৯২ রানের মালিক তিনি। গত বছরের আগস্টে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এই তালিকায় নাম লেখান মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের জার্সিতে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩০০ রানের মালিক তিনি।
সেঞ্চুরি: তিন ফরম্যাটে তামিমের সেঞ্চুরি ২৫টি, যা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর কারও ২০টির বেশি সেঞ্চুরি নেই।
তিন ফরম্যাটে সেঞ্চুরি: তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান তিনি। এখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র ব্যাটসম্যান, যার নামের পাশে এই রেকর্ডটি আছে। টেস্ট এবং ওয়ানডেতে অনেকে সেঞ্চুরি থাকলেও বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে অনন্য এই কীর্তি গড়েন তামিম।
পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস: সেঞ্চুরির মতো পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেলার রেকর্ডটিও তামিমের দখলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাটে ৯৪ হাফ সেঞ্চুরি ও ২৫ সেঞ্চুরিতে তামিমের পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস ১১৯টি, যা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১১৪টি পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস নিয়ে দুই নম্বরে সাকিব আল হাসান।
গড়: রান, সেঞ্চুরির মতো গড়েও সামনে কাতারে তামিম। তিন ফরম্যাটে মিলিয়ে অন্তত ৫০০ রান করা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের সর্বোচ্চ ৩৫.৪১ গড় তামিমের।
ওয়ানডে রান: ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির মতো রানেও সবার উপরে তামিম। এই ফরম্যাটে ৮ হাজার রান করা বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনি। ২৪৩ ম্যাচে ১৪টি সেঞ্চুরি ও ৫৬টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৬.৬৫ গড়ে ৮ হাজার ৩৫৭ রান করেছেন তামিম। ৭ হাজার ৭৯৩ রান নিয়ে দুইয়ে মুশফিক।
ছক্কা: তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৮৮টি ছক্কা মেরেছেন তামিম, যা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। শীর্ষে আছেন ২০৮টি ছক্কা মারা মাহমুদউল্লাহ।
ওয়ানডেতে ছক্কা: ওয়ানডেতে ১০০টি ছক্কা মারা বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান তামিম। এই ফরম্যাটে ১০৩টি ছক্কা মেরেছেন তিনি। ১০৭ ছক্কা নিয়ে সবার উপরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
ওয়ানডেতে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান: এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান তামিম। ২০০৮ সালে আয়ারল্যন্ডের বিপক্ষে ১৯ বছর ২ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করেন তিনি।
টানা পঞ্চাশছোয়া ইনিস: ওয়ানডেতে টানা পাঁচ ম্যাচে পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেলা বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান তামিম। পরে এই তালিকায় নাম লেখান সাকিব। টেস্টে টানা পাঁচ ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান তামিম।
দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস: ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে একাধিক দেড়শছোঁয়া ইনিংস কেবল তামিমই খেলেছেন। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৫৪ রান বাঁহাতি এই ওপেনার ২০২০ সালে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ১৫৮ রান করেন। তার ১৫৮ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস।
ডাবল সেঞ্চুরি: বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেন তামিম। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০৬ রান করেন তিনি, যা ছিল বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ। ২১৯ রানের অপরাজিত ইনিংসে রেকর্ডটি দখলে রেখেছেন মুশফিক।
জুটি: ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করার পথে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ৩১২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন তামিম। টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় ইনিংসে এটিই উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ম্যাচসেরা: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২২ বার ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন তামিম, যা বাংলাদেশি ক্রিকেটারের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ৪৫ বার ম্যাচসেরা হওয়া সাকিব সবার উপরে।
সিরিজ সেরা: ৭ বার সিরিজ সেরা হয়েছেন তামিম। এই তালিকারও শীর্ষে সাকিব, তিনি হয়েছেন ১৭ বার।
শূন্যের রেকর্ড: রান, সেঞ্চুরির অনেক কীর্তির মতো বিব্রতকর এই রেকর্ডও তামিমের দখলে। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৩৬ বার শূন্য রানে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি, যা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। দুইয়ে থাকা মাশরাফি বিন মুর্তজা ৩৩ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন।
অধিনায়কত্ব: ওয়ানডেতে ৩৭ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে দলকে ২১টিতে জিতিয়েছেন তামিম। ফল আসেনি ২ ম্যাচে। তার সাফল্যের হার ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশকে অন্তত ৫ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়কদের মধ্যে তার সাফল্যের হারই সেরা।
ম্যাচ: বাংলাদেশের হয়ে ৩৮৭ ও সব মিলিয়ে ৩৯১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তামিম, যা চতুর্থ সর্বোচ্চ। তার চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন মুশফিক (৪৬৮), সাকিব (৪৪৭) ও মাহমুদউল্লাহ (৪২৯)।