‘বিপিএল থেকে ১০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব’
তরুণ ক্রিকেটারে ঠাসা, হাতেগোণা কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে। বয়স নয়, পারফরম্যান্সের বিচারে ক্রিকেটার বাছাইয়ে বিশ্বাসী বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দলটি। তরুণ দলটির ওপর আস্থা রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে চায় চট্টগ্রাম। সফল হলে যা ভবিষ্যতে জাতীয় দলেরও কাজে আসতে পারে বলে মনে করেন দলটির স্বত্বাধিকারী কেএম রিফাতুজ্জামান।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। ২০০৯ সাল থেকে আকতার ফার্নিচারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন রিফাতুজ্জামান। পাশাপাশি আরও কিছু ব্যবসা আছে আকতার গ্রুপের। এর মধ্যে একটি ডেল্টা স্পোর্টস লিমিটেড। এই কোম্পানির তত্ত্বাবধানেই নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা। ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট কাজ করে থাকে ডেল্টা স্পোর্টস।
নিজেদের কোম্পানিকে প্রকাশ করতে বিপিএলকে সেরা মঞ্চ মনে করেন রিফাতুজ্জামান। পাশাপাশি এখান থেকে আয়ের সুযোগও দেখেন তিনি। বিপিএল থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে বিশ্বাস তার। তবে এর জন্য যে কাজগুলো করা দরকার, বিপিএলের বেশিরভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজিই তা করে না বলে জানালেন সফল এই ব্যবসায়ী।
বিপিএলে মালিকানা কেনা, দল নিয়ে পরিকল্পনা, এবারের দলটির কাছে আশা, বড় প্ল্যাটফর্মে কোম্পানির মার্কেটিং, বিনোয়োগের উদ্দেশ্যসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন রিফাতুজ্জামান। বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্বাধিকারীদের নিয়ে টিবিএসের বিশেষ সিরিজে আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড: বিপিএল ঘনিয়ে এসেছে, প্রস্তুতি কেমন হয়েছে দলের?
কেএম রিফাতুজ্জামান: সব সময় বিপিএল নিয়ে রোমাঞ্চে থাকি। উদযাপন করার মতো একটা সময় যায় বিপিএলে। প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করি। এতগুলো খেলোয়াড়কে নিয়ে দল গড়ে নতুন কিছু করার ইচ্ছা থাকে। সবাই কী করছে, আমরা কী করতে পারি, ওটাও মাথায় ঘুরতে থাকে। সব মিলিয়ে সুন্দর একটা সময় কাটে। প্রতি বছর সুন্দর একটা সময় যায়, বিপিএলের সময়টা আসলে মজার।
টিবিএস: আপনার দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটার তরুণ। তারুণ্য নির্ভর দলটির কাছ থেকে কেমন প্রত্যাশা করছেন? কতো দূর যেতে পারে এই দলটি?
রিফাতুজ্জামান: আমাদের দলটা ভারসাম্যপূর্ণ, হতে পারে ক্রিকেটারদের বয়স কম। তবে সবার পারফরম্যান্স কিন্তু বয়স দিয়ে বিচার করা যাবে না। পারফরম্যান্স দিয়ে বিচার করতে হবে। পারফরম্যান্সের বিচারে তারা খুবই ভালো খেলোয়াড়। আপনি পাঁচ-ছয় জনের নাম অনায়াসে বলে যেতে পারবেন, যারা ম্যাচের চেহারা বদলে দিতে পারে। তারা খুব ভালো খেলে। আমি বয়সটাকে খুব একটা প্রাধান্য না দিয়ে তরুণদের নিয়ে বেশি চিন্তা করছি। তারা ভালো খেলছে, তারা ভালো করবে। এটাতেই বেশি ফোকাস করছি। তাদের নিয়ে আমাদের যে বিশ্বাসটা, সেটা তারা পূরণ করতে পারবেন বলে আমার আশা। জাতীয় দলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ নেই, আমরা তো করতে পারি। আমরা ব্যক্তিগতভাবে ওই ঝুঁকিটা নিতে পারি। যদি আমরা সফল হই, অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো পরের বছর এটা অনুসরণ করতে পারে। যা হয়তো ভবিষ্যতে জাতীয় দলের কাজে লাগবে।
টিবিএস: ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার গল্পটা জানতে চাই। কী ভেবে ক্রিকেটে যুক্ত হওয়া? বিপিএলকেই কেন বেছে নিলেন?
রিফাতুজ্জামান: ক্রিকেট কেন নয়? স্পোর্টস বললে বাংলাদেশে সবার আগে মাথায় আসবে ক্রিকেট। আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। আমাদের আগের প্রজন্ম বা ৭০-৮০ এর দিকে যদি যান, তাহলে জনপ্রিয় ছিল ফুটবল। ১৯৯০, ২০০০ এর পর ক্রিকেট চলে এসেছে। ছোট বেলা থেকে মাথায় ক্রিকেটটাই বড় জায়গা করে নিয়েছে। শুধু ব্যক্তিগতভাবে আমি নই, আমরা ক্রিকেটকে ভালোবাসা জাতি। সবাই ক্রিকেটটা উপভোগ করে। আর এখানে দেশীয় সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম বিপিএল। সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম দিয়ে শুরু করতে চেয়েছি। তবে শুধু বিপিএলেই আমরা নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। আমরা দেশীয় লিগে সম্পৃক্ত হতে চাই। প্রিমিয়ার লিগসহ অন্যান্য জায়গায় থাকতে চাই। আমরা এসব নিয়ে বিসিবির সঙ্গে কথা বলেছি, এখনও বলছি। আমাদের কীভাবে তারা আর বেশি করে সম্পৃক্ত করতে পারে, আমাদের জায়গা থেকে আরেকটু কাজ করতে পারি, সেই সুযোগ হয়তো আমাদের দেওয়া হবে।
টিবিএস: বিপিএলে যুক্ত হওয়ার আগে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কোনো কার্যক্রম ছিল আপনাদের?
রিফাতুজ্জামান: জাতীয় পর্যায়ের কোনো ক্রিকেটে জড়িত ছিলাম না। আমরা নিজেদের কোম্পানিতে ক্রিকেটের টুর্নামেন্ট করি। টিম বন্ডিং গড়ে তোলার জন্য ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নিয়ে আমরা কাজ করেছি। তবে জাতীয় পর্যায়ের কথা যদি বলেন, আমরা কোনো ক্লাবের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।
টিবিএস: ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ও খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বাবদ বিসিবিকে ৫ কোটি টাকার পে অর্ডার দিতে হয়েছে আপনাদের। এর বাইরেও বেশ খরচ আছে, সব মিলিয়ে বিপিএলে একটি দল চালাতে কতো খরচ হয় কিংবা এবার আপনাদের কতো খরচ হবে বলে মনে হচ্ছে?
রিফাতুজ্জামান: বিপিএলের স্ট্যান্ডার্ড একটা খরচ আছে। দেশি ও বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক, ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি, লজিস্টিক খরচের মধ্যে হোটেল, যাতায়াত, মার্কেটিং, ব্র্যান্ড, পোশাক, খেলোয়াড়দের প্রতিদিনের ভাতা বাবদ বেশ খরচ আছে। বিসিবি একটা মানদণ্ড খরচ ঠিক করে দিচ্ছে। এটা মাথায় রেখে কাজ করলে খরচ অনেকটাই কমে আসে। বিসিবিকে দেওয়া টাকার বাইরে আরও ৫ কোটি টাকা খরচ আছে। সব মিলিয়ে ১০ কোটি টাকার একটা ব্যাপার। তবে কেউ যদি তার দলকে পিপলস চয়েজের দল বানাতে চায় বা আরও বড় বড় নাম দলে রাখতে চায়, তাহলে ১৫ থেকে ২০ কোটি পর্যন্ত খরচ করতে পারবে, সুযোগ আছে। বাকিটা দলগুলোর ওপর, যতোটা কমে কেউ দল গড়তে পারে।
টিবিএস: ১০-১২ কোটি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। যদিও এবারের বিপিএল আগের মতো জৌলুশপূর্ণ হচ্ছে না। অনেক তারকা ক্রিকেটার আসছে না। যেহেতু আপনি ব্যবসায়ী মানুষ, ব্যবসার ব্যাপারটা নিশ্চয়ই মাথায় থাকে। এতো খরচ করে এখান থেকে কতোটা পেতে পারেন? খরচটা কি উঠে আসবে? কিংবা লাভের কথা যদি বলি, সেটা কি সম্ভব?
রিফাতুজ্জামান: যে খরচটা, এটা বাংলাদেশের কোনো খেলা থেকে এক মাসে তুলে নিয়ে আসা যাবে না। তবে বিপিএলে আমরা যে খরচটার কথা বলছি, ৫ থেকে ২০ কোটির মধ্যে যে কাঠামোটা দাঁড় করানো আছে, কেউ যদি ১০-১৫ কোটির মধ্যে থাকে, সে ১০ কোটি টাকা বিপিএল থেকে উঠিয়ে আনতে পারবে। এটার সুযোগ আছে। তবে যেভাবে দলগুলো চলে, সেভাবে হবে না। আরও অনেক কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো তাদের মার্সেন্টডাইজিং, জার্সি বিক্রির ব্যাপার থাকে। বিপিএলের সময় অন্যান্য ব্র্যান্ডের সঙ্গে এন্ডোর্স করে তারা আয় করতে পারে। অনেক রাস্তা, যা আমাদের বাংলাদেশে খুব একটা দেখতে পাই না। তবে বিপিএলের আগামী আসরের পরিকল্পনা যদি এখন করতে পারি, তাহলে কিন্তু আমরা স্পন্সর নিয়ে এখনই কাজ করতে পারি। সব কোম্পানির একটা বাজেট থাকে। পরিকল্পনা আগে থেকে করলে সেটার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে। কারণ যে ব্র্যান্ড আপনার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, তারা কী পাচ্ছে, সেটাও দেখার বিষয়। পরিকল্পনা করে আয়ের জায়গাগুলো দেখাতে পারলে অনেকেই আছে, তাদের সঙ্গে কাজ করা যায়।
টিবিএস: বিপিএলে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির আয়ের উৎস কোনগুলো? স্পন্সরের বাইরে আর কী কী আছে? সেগুলো যথেষ্ট কিনা?
রিফাতুজ্জামান: এই যে আমি স্পন্সরের বাইরে দুটো বলে দিলাম। স্পন্সর, যেটা আমরা সবাই ফোকাস করি। অন্য যেটা, মাত্র আমি শেয়ার করলাম। এখন পর্যন্ত ওই দুটি জায়গা থেকে খুব একটা আদায় করতে পারিনি। ওই জায়গাটাতে কিন্তু আপনাকে কাজ করতেই হবে, ওখানে আপনার একটা দল লাগবে। একটা নিয়মিত সমর্থন লাগবে। আপনি একটা টাইটেল স্পন্সর বাবদ কিছু অর্থ দিয়েছেন, আসার পর আপনি নিশ্চয়ই ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে বেশ কিছু আউটপুট চাইবেন।
টিবিএস: বছর জুড়ে ভক্ত-সমর্থকদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ আছে কিনা? আপনাদের এমন কোনো পরিকল্পনা আছে?
রিফাতুজ্জামান: অবশ্যই, যদি দেখেন সর্বশেষ বিপিএলের পর এই বিপিএলে, মাঝখানে করনোর কারণে একটি বিপিএল হয়নি। গত দুই বছরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা পুরোটা সময় সম্পৃক্ত ছিলাম। করোনার কারণে মাঠে কোনো কিছু করতে পারিনি। তবে পুরোটা সময় ডিজিটালি কানেক্টেড ছিলাম। এটা এই বছর আরও বেড়ে যাবে। টুর্নামেন্টের পরে দেখবেন আরও বেড়ে যাবে। ট্যালেন্ট হান্টের কথা বললেন, আমার মনে হয় ফ্যানদের সাথে কানেক্ট থাকার জন্য এই জিনিসগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজিদের করতে হবে। আমরা যদি টুর্নামেন্টের পর ৮/৯ মাসের জন্য থেমে যাই, তাহলে দুই পক্ষ আলাদা হয়ে যাচ্ছে। খেয়াল করলে দেখতে পারবেন, আমাদের টিম অপারেন্সের যিনি হেড আছেন, মোটামুটি তার টিম দিয়ে ডিজিটালি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কানেক্টেড ছিল পুরোটা সময়। একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে পুরো বছর জুড়ে আমরা কানেক্টেড ছিলাম।
টিবিএস: ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি, ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আপনাদের অনেক ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হলে পাবেন এক কোটি টাকা। এটা ঠিক আছে বলে মনে করেন?
রিফাতুজ্জামান: প্রথমত প্রাইজমানিটার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এটা মূলত সম্মানী। আমি ব্যক্তিগত ভাবে সেটাই মনে করি। এক এর জায়গায় ২ হলেও খুব একটা যে প্রভাব আসতো, সেটা নয়। আমাদের খরচ যদি হয় ৫ কোটি, সেক্ষেত্রে ২ কোটি প্রাইজমানি হলে ঠিক আছে। যদি আপনি ১০ কোটি কিংবা ১৫ কোটি টাকার দল বানান, তাহলে এক কোটি আপনার কাছে অনেক কম মনে হবে। এটা পুরোপুরি নির্ভর করে আপনার ওপর। প্রাইজমানির দিকেই আমাদের একমাত্র ফোকাস নয়। এটা হয়তো দশ ভাগ কিংবা ১৫ ভাগ প্রভাব রাখবে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য তো অন্য জায়গাতে। আমাদের মার্কেটিংয়ের যে কয়েকটা পয়েন্ট নিয়ে আমি কথা বললাম, সেগুলো কিন্তু ৩০/৪০ ভাগ আয় দিতে পারে। যদি কেউ ওই রকম একটা প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাতে পারে।
ধরুন কোনো ক্রিকেটারের একটা জ্যাকেট হয়তো কেউ ৫০ হাজার কিংবা এক লাখ টাকায় কিনে নিলো-আপনার কান্টেকটিভিটি হলো, ব্র্যান্ডিংও হলো, ফ্রেশ একটা টি-শার্ট স্বাক্ষরসহ। একজন ফ্যান হিসেবে আপনি এটা সংগ্রহ করতে চাইতে পারেন। এ রকম অনেক কিছু হতে পারে। পুরো বছরজুড়ে এমন ছোট ছোট বিষয়গুলো যোগ করে আপনি ভালো আয় আনতে পারেন।
টিবিএস: তাহলে বড় একটি প্ল্যাটফর্মে কোম্পানির ভালো মার্কেটিং করার ব্যাপারটিই এখানে বড় পাওয়া? এটা কি যথেষ্ট?
রিফাতুজ্জামান: আমার কাছে তো মনে হয় বিপিএল একটা কোম্পানির জন্য অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম। অনেক মানুষ যুক্ত এখানে। তরুণ, ক্রিকেটমোদী, পুরো দেশ যুক্ত। এখানে অবশ্যই আপনার কোম্পানিটাকে, আপনার প্রডাক্টটাকে, আপনার লোগোটাকে হাইলাইট করতে পারছেন। দলের সাথে আপনি পুরো বছরজুড়ে ক্যাম্পেইন পরিকল্পনা করে ফেলতে পারেন স্থানীয় সেলিব্রেটিদের নিয়ে। আমাদের দেশেও কিন্তু অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার আছেন। তারা কিন্তু এখন অনেক টাকার বিনিময়ে ব্র্যান্ডের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। সেই জিনিসটাকে আপনি পুরো বছর ধরে ফোকাস করতে পারেন, সুন্দর সুন্দর আকর্ষণীয় মূল্যে। খেলোয়াড় দিয়ে অ্যাড বানানো, বাইটস নেওয়া, সেই বাইটস পুরো বছর ধরে কীভাবে ছাড়া যায়, পরিকল্পনা করতে হবে। এভাবে পরিকল্পনা করে কিন্তু আপনি এগিয়ে যেতে পারেন।
এর জন্য খরচ যে অনেক বেড়ে যাবে, তা নয়। অনেক কম খরচের মধ্যেই কিন্তু সেটা করা যায়। আমরা কিন্তু এই জিনিসগুলো এজেন্সিকে দায়িত্ব দিতে পারি। এজেন্সিগুলো তাদের ক্লাইন্টদেরকে প্রোভাইড করবে। এখানে যে মার্কেটিং হচ্ছে এটা মূল্যবান এবং এই জায়গাটা এখনও অব্যবহৃত রয়ে গেছে। কারণ আমরা শুধু একটা জায়গায় ফোকাস আছি, সেটা জার্সিতে। কিন্তু লোগোটার সাথে আরও অনেক কিছু হতে পারে। আগে পত্রিকাশিল্প ছিল শুধু পাতায়। কিন্তু এখন দেখেন কত শতাংশ পাঠক পাতায় আর কতো শতাংশ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে।
একটা ছাতার নিচে অনেক কিছু যোগ হয়েছে। একইভাবে বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বিভিন্ন অংশ নিয়ে কাজ করতে পারে। খেলোয়াড়রা এখানে বড় একটা জায়গা, তাদের অনেক ভক্ত-সমর্থক আছে। তাদের আপনি এখানে যুক্ত করতে পারছেন। তাদের দিয়ে আপনি আপনার ব্র্যান্ডের ভালো কথা বলাতে পারছেন, আপনার কারখানাকে প্রমোট করাতে পারছেন। আপনার শো রুম, প্রোডাক্ট প্রমোট করতে পারছেন। আপনি দলকে অনুপ্রাণিত করতে পারছেন। কিন্তু যেটা বললাম, এই জায়গাটা এখনও অব্যবহৃত। আমরা জার্সির লোগোতে ফোকাস আছি এখন পর্যন্ত।
টিবিএস: ভবিষ্যতে আপনাদের এমন কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?
রিফাতুজ্জামান: আমাদের ইচ্ছা আছে, দীর্ঘমেয়াদে মালিকানা পেলে আমরা এটা করে দেখাব। বিপিএলে অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি এখনও যেটা করে নাই, আমরা সেটা করে দেখাব। আমরা নতুন নতুন জিনিস করার জন্য নিজেদের চ্যালেঞ্জ করি এবং আমরা ওটা করার জন্য নিজেদের পুশ করি। আমাদের যাত্রাটা দেখলে আপনি দেখবেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স কিছু না কিছু করে যাচ্ছে। আমাদের মতো করে আর দশ করলে জিনিসটা হাইপ পাবে।
টিবিএস: বিসিবির দীর্ঘমেয়াদীভাবে মালিকানা বিক্রি করবে, সেটা হলে নিশ্চয়ই মালিকানায় থাকতে চাইবেন?
রিফাতুজ্জামান: আমরা তো ছিলাম, আছি, থাকব। ছোটখাটো হলেও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স অবদান রাখছে। আটটা ফ্র্যাঞ্চিাইজি আছে, এখানে যদি চট্টগ্রামকে অংশ মনে করে বিসিবি বা চট্টগ্রামের কিছু ভূমিকা আছে, তারা আরও অবদান রাখতে পারবে, এটা যদি বিসিবি মনে করে, আমরা থাকতে চাই। আমাদের দিক থেকে আমরা খুবই ইতিবাচক। আমরা অল্প দিনের মধ্যে টুর্নামেন্ট করলেও আছি, দীর্ঘমেয়াদে করলেও আছি। দীর্ঘমেয়াদে হলে যেকোনো মানুষের জন্য, যেকোনো কিছুর জন্য ভালো। যতো সময় পাওয়া যাবে ততো ভালো হবে। একটা প্রশ্নের উত্তর যদি আপনি এক মিনিটে দেন আর সেটাই যদি আধা ঘণ্টা ভেবে দেন; উত্তর ভিন্ন হবে। একদিন গবেষণা করে দিতে পারলেও আরও ভালো উত্তর দেওয়া যাবে। যতো সময় পাবেন, ততো ভালো করে করতে পারবেন।
টিবিএস: আইপিএল মালিকানা না বদলানোয় দলগুলোর নামে খুব বেশি পরিবর্তন আসে না। দলগুলোর নির্দিষ্ট ভক্ত-সমর্থক গোষ্ঠী আছে। কিন্তু বিপিএলে সেটা নেই, প্রতিবার মালিকানার সঙ্গে সঙ্গে দলের নাম পরিবর্তন হয়। এটা কি টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তা নষ্ট করছে, জনপ্রিয়তা তৈরিকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে?
রিফাতুজ্জামান: আপনি যেটা ধরেছেন যে, একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি যদি লম্বা সময় ধরে থাকে তার তো একটা ফ্যানবেজ হবে। একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি যদি দীর্ঘ সময় টিকে থাকে, তাহলে অবশ্যই ফ্যানবেজ বলেন, বিপিএল বলেন, সব কিছুর জন্য ভালো হবে। কিন্তু ধরুন আমি ব্যক্তিগতভাবে যদি কোনও কারণে আমার ফ্র্যাঞ্চাইজিটাকে লাভজনক না করতে পারি, আমি আমার ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ব্র্যান্ডের জায়গা থেকে ঠিক আউটফুট না নিতে পারি, দীর্ঘমেয়াদে যদি আমি থেমে যাই; তাহলে তো কারও দোষ থাকবে না যে আমার বা আমি আমার ফ্র্যাঞ্চাইজিটাকে লম্বা সময়ে টেকাতে পারলাম না। এটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা যারা ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়ে আসি, তারা আসলে ভালোবাসা থেকে হোক বা ব্যবসার জায়গা থেকে হোক, থাকার জন্য কীভাবে পরিকল্পনা করছি বা কতদিন থাকতে চাচ্ছি, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিপিএলের জন্য। কারণ আমি মনে করি ফ্র্যাঞ্চাইজি মিলেই তো বিপিএল। যারা নিয়মিত করতে পারবে, তাদেরই বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত।
টিবিএস: বারবার নাম পরিবর্তন হওয়ার কারণেই কি নির্দিষ্ট ভক্ত-সমর্থক গোষ্ঠী গড়ে উঠছে না?
রিফাতুজ্জামান: ওটা মূল কারণ আমি বলব না। একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি যতো লড়াকু হবে, যত বেশি তাদের ফ্যানদের যুক্ত করতে পারবে। বিপিএলের চমকটা ততো বেশি বাড়বে, আলোটা বাড়াবে। নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি এলে যে খারাপ হবে, এটা আমি মনে করি না। নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজিরা এলে ভালো করবে, তবে কী চাই, কি পরিকল্পনা করতে হবে, দীর্ঘমেয়াদে পরকিল্পনা কি; এসব গুরুত্বপূর্ণ। এসব ভেবে যাদের দেওয়ার আছে, তারা এরে বিপিএলকে আলোকিত করবে।
টিবিএস: বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা আছে আপনাদের?
রিফাতুজ্জামান: ক্রিকেট নিয়ে তো আমরা মাত্রই শুরু করেছি। বলতে পারেন আমরা এখনও একদম শিশু। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকয়টা পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছি, যেটা হয়েছে। আমরা একাডেমি করব। যারা ভালো করছে, কখনও বিপিএল খেলেনি, তাদের আমরা ট্যালেন্ট হান্ট করে একটু উন্নত করে আমাদের একাডেমি থেকে শিক্ষা দিয়ে আমাদের দলে দুই-একজনকে খেলাব। এটা আসলে আমাদের ইচ্ছা আছে। এই জায়গা থেকেই আমাদের ওই পরিকল্পনাগুলো চলে আসছে যে, এটা আসলে এত বড় একটা প্ল্যাটফর্ম, যেটা হয়তো আমরা জানি না। আমি মনে করি একটা স্থানীয় খেলোয়াড়ের জন্য এই প্ল্যাটফর্মে নিজেকে মেলে ধরার ব্যাপারটি অনেক বড় কিছু। তাকে এখানে নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করবে।
টিবিএস: আপনাদের কোম্পানি সম্পর্কে একটু জানতে চাই। বর্তমান অবস্থা, কীভাবে, কতো সালে শুরু, এর বাইরে আর কী কী ব্যবসা আছে, এসব নিয়ে যদি বলতেন...
রিফাতুজ্জামান: আমাদের ব্যবসা শুরু হয়েছে আমার বাবার হাত ধরে ১৯৭৬ সালে। আমরা শুরু করি ফার্নিচার ব্যবসা দিয়ে। সময়ের সাথে সাথে এটা এখন একটা স্বনামধন্য ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে । এটার সাথে আমরা আশির দশকে কনষ্ট্রাঙ্কশনের সঙ্গে যুক্ত হই। এটাও আমরা করছি, আকতার কনষ্ট্রাকশন নামে। ওটার সাথে আমরা অনেকদিন ধরে অনেকগুলা কনষ্ট্রাকশনে যুক্ত করতে পেরেছি। কনষ্ট্রাকশনের পরে আমরা বিল্ডিংস ম্যাটেরিয়ালস বা ফার্নিচার বানানোর কিছু আইটেম এনেছি।
ফার্নিচার বানাতে কিছু প্রোডাক্ট লাগে, যেমন ফোম। এখানেও আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। প্রিন্ট মিডিয়াতেও আমাদের একটা ম্যাগাজিন আছে, শোকেজ ম্যাগাজিন নামে। যেটা বাংলাদেশে প্রথম আর্কিটেকচার আর্ট ইন্টেরিওর নিয়ে কাজ করে। পাঁচ বছর হয়েছে ম্যাগাজিনটার বয়স। এটা বিশেষ করে প্রকৌশলী, তাদের কাজ নিয়ে, তাদের বিল্ডিং নিয়ে কাজ করে। সুন্দর সুন্দর বিল্ডিং হচ্ছে বাংলাদেশে, এগুলা কে বানাচ্ছে, কে এটার ইঞ্জিনিয়ার ছিল, ফাউন্ডেশনের কাজ কে করেছে, কীভাবে তার মাথায় এই ডিজাইন এসেছে, ঠিক এই জিনিসগুলা নিয়ে নির্দিষ্টভাবে কাজ করছি। এ ছাড়া টেলিভিশন মিডিয়ার সঙ্গেও আমাদের সম্পৃক্ততা আছে। বাংলা টিভির সাথে আমরা সম্পৃক্ত।
এ ছাড়া আমাদের কিছু ব্যবসা, যেমন ফ্যাশন হাউজ, ফার্নিচারের ডেভেলপমেন্টের জন্য একাডেমি করেছি, যেটার বয়স প্রায় নয় বছর। একাডেমিটা মানিকগঞ্জে। যেখানে আমরা থাকার ব্যবস্থাও করেছি। সেট অব আর্ট, যেখানে মেশিনারিজ আইটেম রয়েছে। মেশিন দিয়ে কীভাবে ফার্নিচার বানানো হয়, কাজ শেখানো হচ্ছে। ওখান থেকে ট্রেইন হয়ে বিভিন্ন ফার্নিচার কোম্পানিগুলোতে ঢুকছে। এখানে বাংলাদেশিরা প্রশিক্ষক হিসেবে থাকছেন, সঙ্গে বিদেশিরাও কাজ করছে। আমাদের সাথে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠনও কাজ করছে। স্কিল ডেভেলপমেন্টের যে আন্তর্জাতিক সংগঠন আছে সারা বিশ্বে, যারা বাংলাদেশে আছে, তারা আমাদের সাথে জয়েন্টলি কাজ করছে।
তাদের ট্রেনারদের দিয়ে আমাদের ট্রেনারদের ট্রেইনিং করাচ্ছি। আমাদের কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ব্র্যান্ড ফার্নিচার। কারণ এটা ভোক্তার সঙ্গে জড়িত, ভোক্তার ব্র্যান্ড। সবচেয়ে পরিচিত ব্র্যান্ড এটা। এটাকে উন্নত করতে আমরা ডেভেলমেন্ট একাডেমি করেছি, যেন ইন্ডাস্ট্রিকে সাপোর্ট করতে পারে। এরপর আমরা বোর্ড ইন্ডাস্ট্রিজে এসেছি। ফার্নিচার বানানো, কনস্ট্রাকশনের জন্য বা ইনটেরিওর ডিজাইনের জন্য যে বোর্ড লাগে, সেগুলো আমরা বানাচ্ছি। আরও কিছু ব্যবসা আসছে। আমরা মাঝে ২-৩ বছর একটু থেমে ছিলাম। নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করিনি। এখন হয়তো দুই-একটা প্রজেক্ট শুরু করব সামনে।
আমি ২০০৯ সালের শেষ দিকে দায়িত্ব নিয়েছি। এর আগে আমি পার্ট টাইমার হিসেবে ছিলাম। ছোট বেলা থেকেই আমি বাবার সাথে সপ্তাহে গড়ে তিনদিন দুই ঘণ্টা করে সময় অফিসে গিয়েছি। সব সময় উনার পাশে বসে নোট করা, কীভাবে সিদ্ধান্ত নেন; ছোট বেলা থেকেই যুক্ত ছিলাম। আমি কোম্পানি ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই কোম্পানির চেয়ারম্যান আমার বাবা। আমি আমাদের সব কোম্পানিতেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছি।
টিবিএস: ডেল্টা স্পোর্টস লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে আছে আপনার দলের মালিকানা। ডেল্টা স্পোর্টস সম্পর্কে যদি সংক্ষিপ্ত করে একটু ধারণা দিতেন…
রিফাতুজ্জামান: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মালিকানা ডেল্টা স্পোর্টস লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে। ডেল্টা নামে আমাদের আরও ব্র্যান্ড আছে, ফার্নিচার ব্র্যান্ডও আছে। এটাকে গণমানুষের ব্র্যান্ড বলতে পারেন। এটা সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হয়েছে। ডেল্টা নামে আরও কিছু কোম্পানি আছে, যেগুলো আমাদের। এটা আকতার গ্রুপের তত্ত্বাবধানে থাকা একটা ব্র্যান্ড। ডেল্টা স্পোর্টস কাজ করে ক্রীড়া নিয়ে। এটার তত্ত্বাবধানে একাডেমি, ফ্র্যাঞ্চাইজি দল থাকবে। আমরা যদি প্রিমিয়ার লিগের কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হই, সেটা ডেল্টা স্পোর্টসের তত্ত্বাবধানে থাকবে।