সাগরপাড়ে তামিম ঝড়, লণ্ডভণ্ড সিলেট সানরাইজার্স
'আমি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আগামী ছয় মাস বিবেচনা করছি না'- কথাটা তামিম ইকবালের। একদিন আগেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি নিয়ে নিজের ভাবনার কথা জানান বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ওপেনার। পরের দিনই কী হলো তামিমের, চট্টগ্রামের সাগরপাড়ের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে ঝড় বইয়ে দিলেন তিনি। একটু দূর দিয়েই বয়ে যাওয়া বঙ্গোপসাগরের উত্তাল গর্জনের আওয়াজ এদিন স্টেডিয়ামে পৌঁছাল না, শোনা গেল শুধু তামিমের ব্যাটের চার-ছক্কার ঝনঝনানি।
ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে ২৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা তামিম টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন ৬১ বলে। তাতে সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও অসাধারণ জয় তুলে নিল মিনিস্টার ঢাকা। শুক্রবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) রান বন্যার ম্যাচে সিলেটকে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে ঢাকা।
চার ম্যাচে তিন হার। মিনিস্টার ঢাকার প্লে-অফে খেলাই যখন শঙ্কার মুখে, তখন তামিম দেখা দিলেন কাণ্ডারি হয়ে। আলোক বর্তিকা হাতে ছুটলেন অভিজ্ঞ এই ওপেনার আর সামনে পড়া সব বাধা গুঁড়িয়ে দিলেন তুড়ি মেরে। পাঁচ ম্যাচে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখলো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
দারুণ এই জয়ে রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন ঢাকার দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ শাহজাদ। উদ্বোধনী জুটিতে ১৭৩ রান যোগ করেন তারা। যা বিপিএলে রান তাড়া করতে নেমে সেরা উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড। কেবল তার তাড়াতেই নয়, বিপিএলের ইতিহাসেই উদ্বোধনী জুটিতে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
তামিমের ১১১ রানের মহাকাব্যির ইনিংসে ম্লান হয়ে গেল লেন্ডল সিমন্সের সেঞ্চুরি। আগের ইনিংসেই ৫৯ বলে সেঞ্চুরি করেন সিলেটের ক্যারিবীয় এই ওপেনার, যা এবারের বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরি। সিমন্সের সেঞ্চুরিতে ৫ উইকেটে ১৭৫ রান তোলে সিলেট। জবাবে তামিম ইকবালের অপরাজিত সেঞ্চুরি ও মোহাম্মদ শাহজাদের হাফ সেঞ্চুরিতে ১৮ বল ও ৯ উইকেট হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় ঢাকা।
তামিমের সেঞ্চুরি অসাধারণ, চোখ ধাঁধানো। তবে তাকে সেঞ্চুরিতে পৌঁছে দিতে অবদান আছে সিলেটের ফিল্ডারদেরও। একবার নয়, তিন তিনবার জীবন ফিরে পান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির এই মালিক। রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যেতে পারতেন তিনি, কিন্তু তাসকিন আহমেদের বলে স্লিপে ক্যাচ ফেলেন মোহাম্মদ মিঠুন। এ ছাড়া ব্যক্তিগত ৭১ রানে মুক্তার আলীর করা ওভারে দুইবার জীবন পান তামিম। ক্যাচ ফেলেন উইকেটরক্ষক এনামুল হক বিজয় ও আলাউদ্দিন বাবু।
ইনিংসের শুরুতেই জীবন পেয়ে তাসকিনকে ফাইন লেগ দিয়ে চার মেরে শুরু করেন তামিম। এরপর ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আলাউদ্দিন বাবুরকে দুই চার ও এক ছক্কা মেরে তোলেন ২০ রান। পরের ওভার করা সানজামুল ইসলামকে এক চার ও এক ছক্কা মেরে বাঁহাতি এই ওপেনার যোগ করেন আরও ১০ রান। এরপর আলাউদ্দিন, তাসকিনদের বলে একের পর এক বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি মারতে থাকেন তামিম। ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে কভারের উপর দিয়ে তামিম যেভাবে তাসকিনকে ছক্কা মারেন, তা পুরনো দিনের সেই বিধ্বংসী তামিমের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল।
মোসাদ্দেকের করা ৬ষ্ঠ ওভারে চার চারে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। ২৮ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫০ পূর্ণ করেন তিনি। এবারের বিপিএলে এটাই দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি। ৭১ রানে দুইবার জীবন পান ঢাকার ওপেনার। মুক্তার আলীর একই ওভারে বিজয় ও আলাউদ্দিন ক্যাচ ছাড়েন। তিনটি জীবন পেয়ে আর ভুল করেননি তামিম। ৬১তম বলে লং অফের উপর দিয়ে চার মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি।
সেঞ্চুরি পূর্ণ করে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত বাতাসে ছুঁড়লেন তামিম, এক হাতে হেলমেট আরেক হাতে ব্যাট উঁচিয়ে সারলেন উদযাপন পর্ব। উদযাপনে যেন মিশে রইলো স্ট্রাইক রেট নিয়ে করা সমালোচনার জবাবও! স্ট্রাইক রেটের কারণে যাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় প্রতিনিয়ত, সেই তামিমই সেঞ্চুরি করলেন ১৬৪ স্ট্রাইক রেটে। পুরো ইনিংসের স্ট্রাইক রেট ১৭৩.৪৩। শেষ পর্যন্ত ৬৪ বলে ১৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১১ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম।
টি-টোয়েন্টিতে তামিমের প্রথম সেঞ্চুরি বিজয় দিবস টি-টোয়েন্টিতে। ইউসিবি-বিসিবির হয়ে আবাহনীর বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন তিনি। ২০১৩ সালের ওই ম্যাচে ১৩০ রানের ইনিংস দেশসেরা এই ওপেনার। তামিমের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, ওমানের বিপক্ষে। ধর্মশালা স্টেডিয়ামে ১০৩ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন তিনি। ২০১৯ বিপিএলের ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরি করেন তামিম, খেলেন ৬১ বলে ১৪১ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস। তিন বছর পর এসে দেখা পেলেন চতুর্থ সেঞ্চুরির।
এর আগে ব্যাটিং করা সিলেটের ইনিংসে সবচেয়ে বড় নামটি লেন্ডল সিমন্সের। ৫৯ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করা ক্যারিবীয় এই ব্যাটসম্যান শেষ পর্যন্ত ৬৫ বলে ১৪টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১১৬ রান করেন। এ ছাড়া এনামুল হক বিজয় ১৮, রবি বোপারা ১৩ ও অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১৩ রান করেন। ঢাকার হয়ে একটি করে উইকেট পান মাশরাফি বিন মুর্তজা, আন্দ্রে রাসেল, এবাদত হোসেন ও কাইস আহমেদ।