সবুজের বুকে আরেকটি নয়নাভিরাম স্টেডিয়াম, পরিকল্পনায় ক্রীড়া কমপ্লেক্স
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/02/05/outer_0.jpg)
গণমাধ্যমকর্মীদের কাজের জায়গা প্রেসবক্স থেকে উত্তর দিকে তাকালে চোখে পড়ে লাল ছাউনির দালান। কোথায় যেন ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডসের সঙ্গে একটা মিল! একটু পশ্চিমেই সুবজে ঘেরা টিলা। যেটা গ্রিন গ্যালারি নামে পরিচিত। বাইরে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজে ঘেরা চারপাশ। লাক্কাতুরা চা বাগানের বুকের মাঝে গড়ে ওঠা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নিয়ে মুগ্ধতার শেষ নেই ক্রিকেটমোদীদের।
এই মুগ্ধতাও ছাড়িয়ে গেছে সিলেট স্টেডিয়ামের আউটার মাঠ। গত বছরের জানুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়া এই মাঠটির একদিকে উঁচুনিচু টিলা, অন্যদিকে চা-বাগান। সবুজ পাহাড়টিলা আর নয়নাভিরাম চা বাগানবেষ্টিত এই মাঠকে বলা হয় আউটার স্টেডিয়াম। যদিও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী এটাকে আউটার স্টেডিয়াম বলতে নারাজ। তার মতে এটা সিলেট স্টেডিয়াম গ্রাউন্ড-২। পরে নামকরণ এটাই করা হয়েছে। একই আঙিনায় দুটি গ্রাউন্ড বাংলাদেশের ক্রিকেট অবগাঠামোতে এই প্রথম।
অথচ দুই নম্বর গ্রাউন্ডের এই জায়গাটা একটা সময় ছিল ধুলোবালির আস্তানা। ময়লার স্তুপ জমে যেত এখানে। এই পথ ধরে মূল স্টেডিয়ামে যাওয়ার সময় বাজে গন্ধে নাক চেপে ধরা ছাড়া উপায় ছিল না। সেই জায়গাটাতেই এখন সবুজের মাখামাখি, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেছে দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়াম।
এই মাঠকে ঘিরে বিসিবির অনেক পরিকল্পনা থাকলেও শুরুতে অনুশীলনের জন্য এই মাঠ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে সিলেটে পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনা করে এটিকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্রিকেট ভেন্যুতে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/02/05/sylhet_outer.jpg)
২০১৮ সালে এই স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন নাম দেওয়া হয় আউটার স্টেডিয়াম। পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম গ্রাউন্ড-২। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে স্টেডিয়ামটির পথ চলা শুরু। এখন পর্যন্ত এই মাঠে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল) ও জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) বেশ কয়েকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১ হাজার ১ টাকা নামমাত্র মূল্যে পাওয়া ৮.৭ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে স্টেডিয়ামটি। মূল স্টেডিয়ামের মতো প্রকৃতির ছোঁয়া এখানেও ধরে রাখা হয়েছে। দর্শকদের জন্য আছে গ্রিন গ্যালারি। এর একটু ওপরেই কৃষচূড়া ঠায় দাঁড়িয়ে। আরেক পাশেও সবুজ ঘাসের ওপর বসে দর্শকদের খেলা দেখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করেছে।
সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে নির্মিত হয়েছে স্টেডিয়ামটি। নতুন এই গ্রাউন্ডটিতে রয়েছে চারটি উন্নত মানের ড্রেসিং রুম। খেলোয়াড়দের ডাইনিং রুম সম্পূর্ণ আলাদা। খেলোয়াড়দের জন্য আইস বাথসহ রয়েছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। এ ছাড়া সাংবাদিক, আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারিসহ অফিসিয়ালদের জন্যও আছে পৃথক রুম। ভিআইপি দর্শক কিংবা বিসিবির আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য হসপিটালিটি বক্সের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এক নম্বর গ্রাউন্ডের সঙ্গে দুই নম্বর গ্রাউন্ডের সংযোগ স্থাপনে নির্মাণ করা হয়েছে আয়রন ব্রিজ।
পাশেই নেট অনুশীলনের ব্যবস্থা। যেখানে আছে ৬টি উইকেট। আগামীতে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একাডেমিক ভবন (ক্রীড়া কমপ্লেক্স) তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বিসিবির আঞ্চলিক একাডেমির ক্রিকেটাররা থাকবেন সেই ভবনে। যেখানে থাকবে ডরমেটরি, সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম, ইনডোর অনুশীলনের সুবিধা। নামাজ আদায়ের জন্য মাঠের পাশে এরই মধ্যে মসজিদের কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই অবকাঠামোর দিক থেকে অন্যান্য বিভাগকে ছাড়িয়ে গেছে সিলেট। তবে দেশের ক্রিকেটে দৃষ্টান্ত স্থাপনের লক্ষ্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের।
তিনি বলেন, 'নিউজিল্যান্ডে মাউন্ট মঙ্গানুইতে গিয়ে সেখানকার স্টেডিয়াম আমার মনে ধরে যায়। এই মাঠ তৈরির সময় বাংলাদেশের বাস্তবতায় যতটুকু সম্ভব, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের মতো করেই গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি আমরা। আরও গাছপালা লাগানোর পর ধাপে ধাপে অন্যান্য কাজগুলো শেষ হলে এই মাঠ দেখতে আরও ভালো লাগবে।'
'আমাদের পরিকল্পনা হলো, একটি ক্রিকেট কমপ্লেক্স হিসেবে সিলেটকে গড়ে তোলা। বিসিবি তো সিলেটে একাডেমি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। একাডেমি ভবন হবে। এ ছাড়াও ৩০-৪০ জনের আবাসন ব্যবস্থা সম্বলিত ডরমেটরি গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে। দূর থেকে ক্যাম্প করতে আসা ক্রিকেটাররা এখানে থাকতে পারবে।' ভবিষ্যতে এই মাঠে ফ্লাড লাইটও বসবে বলে জানান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/02/05/net.jpg)
সিলেটের এই দুটি মাঠে যেহেতু বিসিবির ম্যাচ ও ক্যাম্পের ব্যস্ততা থাকবে, সিলেটের স্থানীয় ক্রিকেটারদের অনুশীলনের জন্য তাই বিকল্প ব্যবস্থার চিন্তায় বিসিবি। শফিউল আলম বলেন, 'মূল স্টেডিয়ামের পাশাপাশি ২ নম্বর মাঠেও বিসিবি এখন প্রচুর খেলা দেবে। এ ছাড়া নানা দলের ক্যাম্প টানা হতেই থাকবে এখানে। সিলেটের স্থানীয় ক্রিকেটারদের অনুশীলনের সুযোগ খুব একটা হবে না। তাদের জন্য পাশেই আমরা আরেকটি মাঠ তৈরি করছি। সেখানেও সিমেন্টের উইকেট থাকবে, টার্ফ উইকেট থাকবে। দিনে ৩-৪টি স্লটে ১২০ থেকে ১৫০ জনের মতো স্থানীয় ক্রিকেটার অনুশীলন করতে পারবে। সব মিলিয়ে সিলেট দেশের উল্লেখযোগ্য একটি ক্রিকেট কেন্দ্র হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।'
এই অনুশীলন মাঠের জন্য ইতোমধ্যে ৩ একর জায়গা পাওয়া গেছে বলে বলে জানালেন শফিউল আলম। ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে অন্যান্য মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে এখানে। এ ছাড়া সিলেটে একটি ক্রিকেট জাদুঘর গড়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়ে জানান তিনি।
বিসিবির এই পরিচালক বলেন, 'সত্যি বলতে, আমরা শুরু থেকেই জানি যে, এখানে জাদুঘর একটি উচ্চভিলাসী পরিকল্পনা। আমাদের ক্রিকেট তো আর অনেক বছরের নয়, অর্জন বা স্মরণীয় কিছুও খুব বেশি নয়। তার পরও যা আছে, টুকটাক কিছু নিয়ে হলেও জাদুঘরটা আমরা করে যেতে চাই। তার পর সময়ের সঙ্গে এটা সমৃদ্ধ হবে।'