‘শিল্পী’ লিটনের ঝুলিতে আরেকটি সেঞ্চুরি
আফগানিস্তানের তারকা লিগ স্পিনার রশিদ খানের ডেলিভারিটি কভারের ওপর দিয়ে পাঠিয়েই লিটন কুমার দাসের দৌড়। রান পূর্ণ হওয়ার আগেই বুঝতে পারলেন বল ততোক্ষণে সীমানা ছাড়িয়েছে। চওড়া হাসি ফুটে উঠলো তার মুখে। হেলমেট খুলে, ব্যাট উঁচিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি উদযাপনে ব্যস্ত হয়ে গেলেন বাংলাদেশের ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
উইকেটে সঙ্গী মুশফিকুর রহিম এগিয়ে গিয়ে আলিঙ্গনে বাধলেন অনুজকে। জরিয়ে ধরে কয়েকবার মুষ্টিবদ্ধ হাত লিটনের পিঠে চাপড়ে দিলেন। আস্তে করে কানে কানে হয়তো এও বলে দিলেন, 'এমন আরও অনেক সেঞ্চুরি তোর প্রাপ্য।'
একটি ডেলিভারিতে কয়টি শট খেলা সম্ভব? প্রশ্নটা লিটন দাসের কাছে রাখলেই হবে। কিংবা তার ব্যাটিংয়ে নজর রাখলেও উত্তর মিলবে। তাকে বলা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। লিটনের প্রতিটা শটই যেন একেকটা শিল্পীর আঁচড়। শুক্রবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আরও একবার শিল্পীর ভূমিকায় দেখা গেল তাকে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে নিলেন লিটন।
তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছানোর আগেই অবশ্য থামতে পারতেন তিনি। ব্যক্তিগত ৮৭ রানে কভারের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন লিটন। সৌভাগ্যবশত বেঁচে চান বাংলাদেশ ওপেনার। আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদি ক্যাচটি নিতে পারেননি। এরপর আর ভুল করেননি লিটন। ১০৭ বলে ১৪টি চারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান তিনি। চট্টগ্রামে এটাই তার প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি।
হাফ সেঞ্চুরি করলেই সেটাকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়াটা যেন নিয়ম বানিয়ে ফেলেছেন লিটন। সর্বশেষ ২০১৯ সালের জুনে ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। এরপর তার কোনো হাফ সেঞ্চুরিই অল্পতে থামেনি, প্রতিটা ইনিংসকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়েছেন লিটন। এ নিয়ে টানা চারটি হাফ সেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করলেন বাংলাদেশ দলের অন্যতম এই ব্যাটিং স্তম্ভ।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দুবাইতে ভারতের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করার পর দুটি হাফ সেঞ্চুরি করেন লিটন। একটি ২০১৮ সালের অক্টোবরে, আরেকটি পরের বছরের জুনে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলা এই ম্যাচে অবশ্য ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। এরপর আর হাফ সেঞ্চুরি করে থামেননি লিটন, ৫০ পেরোলেই তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি।
আফগানদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে আরও চড়াও হয়ে ওঠেন লিটন। সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে কেবল চার মারলেও এবার উড়িয়ে মারা শুরু করেন তিনি। তার ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে বাংলাদেশের রানও। শেষ পর্যন্ত ১৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৩৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন বাংলাদেশ ওপেনার। ওয়ানডেতে এটা তার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। তবে এই মাঠে এটাই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে ৪৯ ওয়ানডে খেলা লিটনের সর্বোচ্চ ইনিংস ১৭৬ রানের, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। অবশ্য ইনিংসটা কেবল তারই নয়, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যেই সেরা। লিটনের বাকি তিন সেঞ্চুরি যথাক্রমে ১২৬, ১২১ ও ১০২ রানের। তার করা পাঁচ সেঞ্চুরির তিনটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। একটি ভারতের বিপক্ষে এবং পঞ্চম সেঞ্চুরিটি করলেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
এই সেঞ্চুরিতে শাহরিয়ার নাফিস ও ইমরুল কায়েসকে পেছনে ফেললেন লিটন। এ দুজনই চারটি করে সেঞ্চুরির মালিক। সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির তালিকায় লিটন আছেন চার নম্বরে। ১৪টি সেঞ্চুরি নিয়ে সবার ওপরে তামিম। সাকিবের সেঞ্চুরি ৯টি, মুশফিকের ৮টি।