‘জীবনে কোনো কিছুর গ্যারান্টি নেই’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে, ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেল মারা গেছেন। কদিন আগের এই খবরকে গুজব প্রমাণ করে বাড়িতে ফেরেন রুবেল। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগের চেয়ে ভালো আছেন তিনি। এমন খবরে সবার মতো সাকিব আল হাসানও ভেবেছিলেন, হয়তো আপাতত বিপদ কেটে গেল। কিন্তু কদিন পরই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন রুবেল। সাকিবের এখন মনে হচ্ছে, জীবনে কোনো কিছুরই নিশ্চয়তা নেই।
ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবেন সাকিব। এর আগে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলে নিজেকে প্রস্তুত করবেন তিনি। এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বুধবার দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার। বিমান বন্দরে নিজের মানসিক অবস্থা, ক্রিকেটে ফেরাসহ সাবেক সতীর্থ রুবেলকে নিয়ে কথা বলেন সাকিব।
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকলেও মোশাররফ রুবেলের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমাজকে। ৪০ বছর বয়সেই তার এমন বিদায় অনেকের কাছে অকাল প্রয়াণ। তিন বছর ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার পর মঙ্গলবার মারা যান বাংলাদেশের হয়ে ৫টি ওয়ানডে খেলা রুবেল। অথচ শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় কদিন আগেই বাসায় ফিরেছিলেন তিনি।
অসুস্থ থাকা অবস্থায় সতীর্থদের কাছ থেকে আর্থিক ও মানসিকভাবে সহযোগিতা পেয়েছেন রুবেল। গত মাসে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রুবেলকে ১৫ লাখ টাকা দেয় সাকিবের প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্ক। এর কদিন পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে রুবেলকে বাসায় নেওয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার তার শরীর আবার খারাপ হলে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এক মিনিটেরও যে নিশ্চয়তা নেই, জীবনের অমোঘ এই বাস্তবতার কথাই মনে করিয়ে দিলেন সাকিব। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার বলেন, 'আসলে খুবই দুঃখজনক। আমি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম, নিউজ দেখছিলাম যে উনি মাত্র বাসায় গেলেন, একটু বেটার ফিল করছিলেন। তো ভাবলাম যে কোনোভাবে বুঝি সারভাইভ করলেন।'
'আরেকজনের সঙ্গে কথাও বলছিলাম এটা নিয়ে যে, হয়তো কম বয়স দেখে সারভাইভ করতে পারছেন। তবে হঠাৎ করে… খরবটা পাই যখন প্লেনে ছিলাম। খুবই দুঃখজনক, তবে জীবনে যে কোনো কিছুর গ্যারান্টি নেই, সেটির একটি প্রমাণ।' যোগ করেন সাকিব।
২০১৯ সালের মার্চে ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে রুবেলের। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ নিউরো সার্জন এলভিন হংয়ের তত্ত্বাবধানে সফল অস্ত্রোপচার হয় তার। ২০২০ সালে সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বাঁহাতি এই স্পিনার। কিন্তু নভেম্বরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এমআরআই করার পর দেখা গেছে, পুরোনো টিউমারটি আবার নতুন করে বাড়ছে।
এরপর আবার শুরু হয় কেমোথেরাপি। সব মিলিয়ে ২৪টি কেমোথেরাপি নিতে হয় রুবেলকে। গত ১১ অক্টোবর ইউনাইটেড হাসপাতালেই সর্বশেষ কেমোথেরাপি নেন তিনি। এরপর অবস্থার অবনতি হলে গত ১৪ মার্চ আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। প্রায় এক মাস ধরে সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন অনন্ত অসীমে পাড়ি জমানো বাংলাদেশের এই ক্রিকেটার।