চোখের পলকে উইকেট হারানোই যেন অমোঘ নিয়তি!
ব্যাটিংয়ের শুরুর দিক কিংবা মাঝ অবস্থা। একটি উইকেটের পতন মানেই যেন ইনিংসের শেষ দেখে ফেলা। চোখের পলকে উইকেট হারানোই যেন অমোঘ নিয়তি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আসা যাওয়ার মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন বলেই ৫৩ ও ৮০ রানের ইনিংসের হতাশায় ডুবতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ও মিরপুর টেস্টের মাঝে ব্যতিক্রম কেবল চট্টগ্রাম টেস্ট। মিরপুর টেস্ট থেকে আবারও সেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের গল্প।
মিরপুর টেস্টে লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২৪ রানেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপরও মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাসের সেঞ্চুরিতে মেলে ৩৬৫ রান, স্বস্তিতেই ছিল স্বাগতিক শিবির। কিন্তু জবাবে শ্রীলঙ্কা ৫০৬ রান করলে প্রথম ইনিংসেই ১৪১ রানে পিচিয়ে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। আর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে সেই হতাশার গল্প। শুরুর ভাঙনেই ম্যাচ হারের শঙ্কা জেকে ধরেছে বাংলাদেশকে।
১৪১ রানে পিছিয়ে থেক দ্বিতীয় ইনিংকে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ২৪ রানের মধ্যেই হারায় ৪ উইকেট। ৪ উইকেটে ৩৪ রান তুলে চতুর্থ দিন শেষ করেছে মুমিনুল হকের দল। ইনিংস ব্যবধানে হার থেকে বাঁচতেই বাংলাদেশকে করতে হবে আরও ১০৭ রান। আবারও আশার আলো জ্বেলে টিকে আছেন মুশফিক ও লিটন। মুশফিক ১৪ ও লিটন ১ রানে অপরাজিত থেকে মাঠে ছাড়েন। বাকি ৬ উইকেটে পুরো একটি দিন কাটিয়ে দেওয়া যে খুব কঠিন কাজ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য, সেটা বলাই বাহুল্য।
প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটাও হয় দুঃস্বপ্নের। দলীয় ১৫ রানে ফিরে যান তামিম ইকবাল। তাকে রানের খাতা খোলারও সুযোগ দেননি লঙ্কান পেসার আসিথা ফার্নান্দো। প্রথম ইনিংসেও শূন্যে রানে আউট হন অভিজ্ঞ এই ওপেনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো দুই ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হলেন তিনি।
চার রান পরই সাজঘরের পথ ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ২ রান করে রান আউটে কাটা পড়েন বাঁহাতি এই ওপেনার। আগের ইনিংসেও হাসেনি তার ব্যাট, ৮ রান করেই বিদায় নিয়েছিলেন তিনি। দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন ঘোর অন্ধকারে, তখন আঘাত হানেন কাসুন রাজিথা। লঙ্কান এই পেসারের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে থামেন নিজের ছায়া হয়ে থাকা বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল। আগের ইনিংসে ৯ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান এবার রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
চোখের পলকেই নেই তিন উইকেট। আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে উইকেটে তখন ব্যাট চালাচ্ছেন মাহমুদুল হাসান জয় ও মুশফিক। কিন্তু শূন্য রানে ও ৯ রানে দুবার জীবন পেয়ে তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ জয়। ডানহাতি এই ওপেনার ১৫ রান করেই আসিথার বলে কুশল মেন্ডিসের হাতে ধরা। তামিম, মুমিনুল, শান্তদের মতো জয়ও আগের ইনিংসে ছিলেন ব্যর্থ, শূন্য রানেই ফিরতে হয়েছিল তাকে। ৪ উইকেট হারানো দলকে পথ দেখিয়ে পরের কয়েক মিনিট বিপদমুক্তভাবেই পার করেন মুশফিক-লিটন।
প্রথম ইনিংসের মতো এই ইনিংসেও বাংলাদেশের ইনিংস ওলট পালট করে দেন লঙ্কান দুই পেসার রাজিথা ও আসিথা। প্রথম ইনিংসে এবাদত হোসেন রান আউট হন, বাকি ৯ উইকেট ভাগাভাগি করে নেন এই দুজন। দ্বিতীয় ইনিংসেও একই সাফল্যের মালা গেঁথে চলেছেন দুজন। ৬ ওভারে ১২ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন আসিথা। ৬ ওভারে ১২ রানেই এক উইকেট নেন রাজিথা। বাকি উইকেটটি রান আউট থেকে পেয়েছে শ্রীলঙ্কা।