চরম হতাশার ব্যাটিং-বোলিংয়ে বিশাল হার
পাঁচ দিনের টেস্টে বলার মতো মাত্র দুটি বিষয়। দুই সেঞ্চুরিতে মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাসের রেকর্ড গড়া ইনিংস ও সাকিব আল হাসানের ৫ উইকেট। বাকি সব সুখ শ্রীলঙ্কার। ব্যাটিং-বোলিংয়ে রাজত্ব কায়েম করে বাংলাদেশকে হেসেখেলেই হারিয়ে দিলো লঙ্কানরা। যেন দিয়ে রাখা কথাই রাখলেন তারা, চরম অস্থিরতায় থাকা শ্রীলঙ্কায় হাসি মুখেই ফিরতে পারছে দিমুথ করুনারত্নের দল।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে মুমিনুল হকের দল। ম্যাচসেরা আসিথা ফার্নান্দোর বোলিং তোপের মুখে দ্বিতীয় ইনিংসে অল্পতেই গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ মাত্র ২৯ রানের লক্ষ্য দেয় শ্রীলঙ্কাকে। ৩ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় লঙ্কানরা। দুই ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জিতলো সফরকারীরা।
টস জিতে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপর্যয়ে পড়লেও মুশফিক ও লিটনের ব্যাটে লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। এই দুই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরিতে ৩৬৫ রানে তোলে ঘরের মাঠের দলটি। এরপর বল হাতে সাকিব ছাড়া বাংলাদেশের কোনো বোলারই লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে পারেননি।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, দিনেশ চান্দিমালের সেঞ্চুরি এবং ওশাদা ফার্নান্দো, করুনারত্নে ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার হাফ সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৫০৬ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসেই ১৪১ রানের লিড পায় সফরকারীরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে আসিথার অসাধারণ বোলিংয়ে ৫৫.৩ ওভারে ১৬৯ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ওশাদা ও করুনারত্নে চোখের পলকেই ২৯ রানের লক্ষ্যে পেরিয়ে দলকে দারুণ এক জয় এনে দেন।
প্রথম ইনিংসে আসিথা ও রাজিথার বোলিং তোপে মাত্র ২৪ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ সেখান থেকে দলের হাল ধরে ২৭২ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন মুশফিক ও লিটন। লিটন ১৪১ রানে আউট হলেও মুশফিক ১৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন। এবাদত হোসেন কেবল রান আউট হন, বাকি ৯ উইকেট ভাগাভাগি করে নেন লঙ্কান দুই পেসার। আসিথা ৪ ও রাজিথা ৫টি উইকেট নেন।
জবাবে শ্রীলঙ্কার পাঁচজন ব্যাটসম্যান রানের দেখা পান। সিরিজ সেরার পুরস্কোর জেতা ম্যাথুস ১৩তম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়েও ১৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন। দিনেশ চান্দিমাল ১২৪ রানের ইনিংস খেলেন। এ ছাড়া ওশাদা ৫৭, অধিনায়ক করুনারত্নে ৮০ ও ধনঞ্জয়া ৫৮ রান করেন। ৫টি উইকেট নেন সাকিব, যা তার ক্যারিয়ারের ১৯তম ৫ উইকেট। ডানহাতি পেসার এবাদত হোসেন নেন ৪ উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভাগ্য বদলায়নি বাংলাদেশের। ব্যাট হাতে চরম হতাশার শুরু হয়। আসিথা-রাজিথার জুটির বোলিংয়েই মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। ২৩ রানের মধ্যে ফিরে যান তামিম ইকবাল, নাজমুল হাসান শান্ত, মুমিনুল হক ও মাহমুদুল হাসান জয়। শেষ বিকেলে ভাঙন থামিয়ে দিন শেষ করেন মুশফিক ও লিটন।
প্রথম ইনিংসের মতো এই ইনিংসেও তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। দুজন ভালো শুরুও করেন। কিন্তু রাজিথার বলের লাইন মিস হয়ে বোল্ড হন ২৩ রান করা মুশফিক। এরপর আশা জাগান লিটন ও সাকিব। ষষ্ঠ উইকেটে ১০৩ রানের জুটি গড়ে তোলেন তারা। মনে হচ্ছিল পথ খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ৫২ রান করে লিটন ফিরতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ।
মাত্র ১৩ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাট চালিয়ে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন ৫৮ রান করা সাকিব। এরপর চোখের পলকেই মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, তাইজুল ইসলাম ও এবাদত হোসেনের উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ১৭.৩ ওভারে ৫১ রানে ৬ উইকেট নেন আসিথা। যা টেস্টে তার প্রথম ৫ উইকেট ও ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। আরেক পেসার রাজিথা নেন ২ উইকেট। একটি উইকেট পান স্পিনার রমেশ মেন্ডিস।