কেবল বজ্রপাতেই গত দুই মাসে ঝরলো ১২৬ টি প্রাণ
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে এবছরের মে এবং জুন মাসে বজ্রপাতে বাংলাদেশে ১২৬ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ৫৬ জন।
এরমধ্যে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশী হতাহতের ঘটনা ঘটে হাওর অঞ্চলের জেলা কিশোরগঞ্জে। গত দুই মাসে কেবল এই জেলাতেই বজ্রপাতে ১৬ জনের মৃত্যুর খবর আসে।
এছাড়াও সাতক্ষীরা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং টাঙ্গাইল জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
সেইভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম’ নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবছরের বছর মে এবং জুন মাসে বজ্রপাতের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ২১ জন নারী, ৭ জন শিশু ও ৯৮ জন পুরুষ। এর মধ্যে মে মাসে নিহত হয়েছে ৬০ জন এবং জুন মাসে ৬৬ জন।
মে মাসে নারী ৯ জন, শিশু ৩ জন ও পুরুষ ৪৮ জন নিহত হন। জুন মাসে নারী ১২ জন, শিশু ৪ জন এবং ৫০ জন পুরুষ নিহত হন।
গবেষণা সংস্থাটি বলছে, ধান কাটার সময় বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এর পর বেশি নিহত হয়েছে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সময় মাছ ধরতে গিয়ে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে মাঠে গরু আনতে গিয়ে এবং টিন ও খড়ের ঘরে অবস্থান ও ঘুমোনোর সময় বজ্রাঘাতে বেশি মানুষ মারা গেছে। একই সঙ্গে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সময় অজ্ঞতাবশত লম্বা গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়ার ফলে গাছে বজ্রপাত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
আবহাওয়ার পরিবর্তন, লম্বা গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, মেঘে মেঘে ঘর্ষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, যত্রতত্র মোবাইল ফোনের টাওয়ার বসানো এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই বজ্রপাত অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বলে মনে করেন এই দলের গবেষকরা।
বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, পর্যাপ্ত গাছ না থাকায়, গাছের শাখা-প্রশাখা আগের মতো বজ্রপাতকে নিজের দিকে টেনে আনতে পারে না। খোলা মাঠে বজ্রপাত হলে তা মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
গবেষণা সংস্থাটির সচিব মোঃ রাশেদ মোল্লা বলেন, “তাপমাত্রা যদি এক ডিগ্রী বাড়ে তবে বজ্রপাতের পরিমাণ ১০ শতাংশ বেড়ে যায়।”
২০১৬ সালে দেশজুড়ে বজ্রপাতে ৩৫০ জন মানুষ মারা যান।
ভারতের এক গবেষণার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাক-বর্ষা মৌসুমে ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশী বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে। এসময় এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় গড়ে ৪০ টি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।