করোনার দিনগুলোতে প্রেম: সীমান্তের বেড়া খুলে দেওয়ায় তরুণ-তরুণীর মুখে হাসি
তরুণ লুকাস থাকেন সুইজারল্যান্ড। তরুণী লিওনি থাকেন জার্মানি। দুই দেশের দুই বাসিন্দা হলেও নিয়মিতই দেখা হতো তাদের। ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি, করোনাভাইরাস তাদের সম্পর্কের মাঝে সীমান্তের কাঁটাতারের চেয়েও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
করোনার দিনগুলোতে নিজ নিজ শহরে আটকে পড়া এই তরুণ-তরুণীর মতো আরও অনেকেই অবশেষে শুভলগ্নের দেখা পেয়েছেন। শুক্রবার শ্রমিকরা জার্মানির কন্সট্যান্স শহর ও সুইজারল্যান্ডের ক্রুজনিঙ্গেন শহরের মধ্যকার সীমান্ত বেষ্টনি খুলতে শুরু করেন। এই বেষ্টনি বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। কেননা, প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে করোনাকালের বসানো হয়েছিল এটি।
এর ফলে টানা কয়েক সপ্তাহ দুই শহরের নাগরিকদের কাঁটাতারের দুই পাশে, নোম্যান'স ল্যান্ডে এসেই জড়ো হতে হতো। তবে অবশেষে সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি ওই বেড়া নামিয়ে ফেলার ব্যাপারে একমত হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার মাঝরাতে সেটি খুলতে শুরু করেন শ্রমিকরা। খবর রয়টার্সের।
লুকাসের বয়স ৩৪, লিওনির ৩১। সীমান্তের বেড়া খুলে দেওয়ামাত্রই এই প্রেমিকযুগল আবারও পরস্পরের বাহুডোরে জায়গা করে নিতে পেরেছেন। শুক্রবার সকালেই দেখা করেছেন তারা।
লুকাস বলেন, 'লিওনি একেবারেই অধৈর্য হয়ে পড়েছিল। আসলে খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল সে। এখন, সীমানা পেরিয়ে আসতে পেরে হাসি তার থামছেই না!'
স্বাভাবিক সময়ে, ইউরোপের প্রতিবেশী অনেক শহরেই দুই দেশ হলেও সীমানা প্রাচীরের বালাই নেই। এক শহর, মানে এক দেশ থেকে আরেক দেশে লোকেরা হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে, এমনকি সাঁতার কেটেও চলে আসতে পারেন। কাটিয়ে যেতে পারেন কিছুটা সময়। পাশের শহরটিকে তাদের কাছে অতটা বিদেশ মনে হয় না।
কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরও অনেক কিছুর মতো এতকালের সেই অভ্যস্ততাও থাবা বসিয়েছে। মার্চের মাঝামাঝিতে জার্মান পুলিশ নিজ দেশের অংশে বেড়া দিয়ে লুকাস ও লিওনির শহরের মাঝখানের সীমা প্রাচীর গড়ে দিয়েছিল। সীমারেখাটি অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ই আলাদা করা হয়েছিল একটামাত্র কাঁটাতারের রেখা টেনে, তবে সেখানে এতদিন কোনো বেষ্টনি ছিল না। তাই আসা-যাওয়ায় অত বেগ পেতে হয়নি দুই শহরের বাসিন্দাদের।
এদিকে, জার্মানি বেষ্টনি তোলার পরও যখন সীমান্ত ঘেঁষে দুই শহরের বাসিন্দাদের আনাগোনা, আড্ডাবাজি, ভালোবাসাবাসি থামছিল না, তখন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সুইজারল্যান্ডও নিজেদের অংশে আরেকটি বেষ্টনি স্থাপন করে। অবশেষে প্রায় দুই মাস পর সেই বেষ্টনিও তুলে ফেলা হলো।
ওই সীমান্তরেখার পাশ দিয়েই দীর্ঘকাল ধরে গাড়ি চালিয়ে জুরিখ শহরে যেতে অভ্যস্ত সুইস নাগরিক জ্যঁ-পিয়েরে ওয়াল্টার বলেন, 'বেষ্টনি খুলে ফেলা হয়েছে দেখেই বুঝে গেছি, অবশেষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব আমরা।'
বলে রাখা ভালো, দুই দেশের ওই দুই শহরের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ভালোবাসাবাসি ও বিয়ের ঘটনা পুরনো। একে অন্যের শহরে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে বিবাহিতদের। লুকাস জানালেন, যদিও লিওনি ও তিনি বিয়ে করেননি এখনো, তবে সীমান্তরক্ষীদের বলে তিনিও মাঝে মধ্যেই জার্মান শহরটিতে ঢুকে পড়ার অনুমতি পান।