কেমন হতে পারে ২০২১ সালের পৃথিবী?
২০২১ সাল কড়া নাড়ছে দরজায়। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক, জার্মানির নতুন নেতা এবং অবশ্যই মহামারি পরবর্তী বিশ্ব বাণিজ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি ও চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিবর্তন সহ অনেক কিছুই ঘটতে যাচ্ছে আসন্ন নতুন বর্ষে। ২০২১ সালের পৃথিবী কেমন হতে পারে একনজরে দেখে নেয়া যাক।
আফগানিস্তানে তালিবানের অবস্থান
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের চুক্তি করেন তালেবানের সাথে। এর পরিবর্তে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আফগান সরকারের সাথে আলোচনায় বসতে রাজি হয় তালেবান। আলোচনার মাধ্যমে আফগান সরকার প্রায় ৫ হাজার তালেবান বন্দীকে মুক্তি দেয়। এবছরের শেষের দিকে এসেই আফগানিস্তান থেকে বিপুল সংখ্যক সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে কি ১৯৭০ এর দশক থেকে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে থাকা দেশটিতে শান্তি ফিরে আসতে যাচ্ছে? এর উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়। তবে তালেবান আবারও দেশটির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসতে পারে এমন আশঙ্কা তো আছেই। প্রশ্ন হলো ক্ষমতায় আসলে কাদের সাথে তারা হাত মেলাবে।
আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী সবসময়ই মার্কিন সেনাদের উপর নির্ভরশীল ছিল। এখন মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কারণে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে আফগান সেনাবাহিনী। আফগানিস্তানের অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা হত্যাসহ বেশ কিছু প্রধান সড়ক দখল করে টোল আদায় করে তালেবানরা। আবার দেশটির রাজধানী কাবুল দখলের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তালেবানদের উদ্দেশ্য জটিল হলেও এটি স্পষ্ট তারা দেশটির সরকার পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করতে চায়। তবে একই সাথে আন্তর্জাতিক সাহায্যও চায় তারা। একারণেই শান্তি প্রতিষ্ঠার কিছুটা সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। তবে নতুন সরকারে দীর্ঘদিনের শত্রুদের জায়গা দিতে বেশ কঠিন সময় পার করতে হবে দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির। তিনি এব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন তাই এখন দেখার বিষয়।
আফ্রিকার দেশগুলোর সাথে চীনের 'বন্ধুত্ব'
প্রতি তিন বছর পর পরই আফ্রিকান ও চীনা নেতাদের 'চায়না-আফ্রিকা কো-অপারেশন' সম্মেলন হয়। এ সম্মেলনে জাতিসংঘের বার্ষিক অধিবেশনের চেয়েও বেশি আফ্রিকান নেতা অংশ নেন। বিগত তিন দশকে আফ্রিকার দেশগুলোর অন্যতম বন্ধু হয়ে উঠেছে চীন। ২০২১ সালে সেনেগালের রাজধানী ডাকারে পরবর্তী সম্মেলন হতে যাচ্ছে।
তবে এবারের সম্মেলনের বিষয়বস্তু বিগত ৭টি সম্মেলনের চেয়ে একদমই আলাদা। কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনয়াত্তা বলেছিলেন, আফ্রিকা এমন বস্তু নয় যা জিতে নেয়ার জন্য লড়াই চলবে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সাইরিল রামাফোসার মতে, আফ্রিকা মহাদেশে চীনের অবদানে যুক্তরাষ্ট্র ইর্ষান্বিত হলেও আফ্রিকা তার ফলভোগ করবে না। অবকাঠামোগত উন্নয়ন বা টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সকল ক্ষেত্রেই আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীন ভালো বিকল্প।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ভ্যাকসিন সহজলভ্য হওয়ার পরই আফ্রিকার দেশগুলোতে ভ্যাকসিন সরবরাহের প্রতিশুতি দিয়েছেন। আফ্রিকা মহাদেশে প্রায় ১০ হাজার চীনা ফার্মের কার্যক্রম চলছে। যুকরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীনেই অধিক সংখ্যক আফ্রিকান শিক্ষার্থী পড়তে যায় প্রতি বছর।
আফ্রোব্যারোমিটারের চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, গড়ে ৫৯ শতাংশ আফ্রিকান চীনের ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা ধারণ করে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আফ্রিকানদের ইতিবাচক ধারণার হিসাবও প্রায় কাছাকাছি, প্রায় ৫৮ শতাংশ। একারণেই আফ্রিকান নেতারা সরাসরি কোনো পক্ষালম্বন করা পারতপক্ষে এড়িয়ে চলেন।
আফ্রিকান অনেক নেতা চীনের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইলেও, শুধু একারণেই মার্কিন সরকার তাদের পাশে দাঁড়াবে না তারা তাও জানেন।
ইরানের সমস্যা বাইডেনের কাঁধে
২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সাথে স্বাক্ষরিত ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে বেড়িয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের অভিষেক হলেও ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরে যাওয়া বেশ কঠিনই হবে। এক্ষেত্রে ইরান হয়তো ট্রাম্পের ইরানের ওপর আরোপিত সকল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবী জানাতে পারে, এমনকি জঙ্গীবাদ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাও। এমনটা হলেই যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরে যাওয়াটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকে ভেবেছিলেন ইরানের প্রতি 'সর্বোচ্চ প্রতিরোধ' নীতির কারনে হয়তো দেশটির শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে তারপরও পশ্চিমা দেশগুলো থেকে দূরেই থেকেছে ইরান। সর্বোপরি চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার জন্য বাইডেনকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনির সাথে সমঝোতায় আসতে হবে। ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবেচনায় বাইডেনের সাথে চুক্তিতে রাজিও হতে পারেন তিনি।
ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের ভ্যাকসিন
২০২০ সালের শুরুতে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর খুব দ্রুতই কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে এমন আশা করেননি অনেকেই।
তবে ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়েছে, জরুরি অনুমোদন পেয়েছে কিছু ভ্যাকসিন। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরও কিছু ভ্যাকসিন। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনই বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে আবিষ্কৃত ভাকসিন।
তবে দ্রুততম ভ্যাকসিনের আবিষ্কারই দ্রুততম সময়ে ভ্যাকসিনে সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারে না। ভ্যাকসিন আবিষ্কারে যেমন গবেষনাগারে বিজ্ঞানীদের অবদান ছিল, গবেষনাগার থেকে হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের। তবে ২০২১ সালে ভ্যাকসিনের অসম বন্টন দেখা যাবে এমনটাই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
চীনে ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন
২০২১ সাল থেকে চীনে ডিজিটাল মুদ্রা প্রচলনের সমূহ সম্ভাবনা আছে। প্রাথমিক ভাবে ডিজিটাল মুদ্রার কারণে তেমন কোনো পরিবর্তন না হলেও সময়ের সাথে সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিই বদলে যাবে এর ফলে।
ইতোমধ্যেই চীনের দ্য পিপলস ব্যাংক অব চায়না বেশ কিছু শহরে অ্যাপের মাধ্যমে ই-ইউয়ান এর প্রচলনের জন্য আবেদন করেছে। এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রমও সফল হয়েছে। যারা ইতোমধ্যেই ডেবিট কার্ডের বদলে স্মার্টফোনের মাধ্যমেই লেনদেন সারেন, তাদের কাছে এটি শুধু একটি নতুন অ্যাপের ব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।
তবে এখনই মুদ্রা ব্যবস্থা আমূলে বদলে দিতে চাইছে না চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুলো ডিজিটাল লেনদেনের কারণে বেশি ক্ষমতা পেয়ে যাচ্ছে এ আশঙ্কা থেকেই রাষ্ট্রীয় ভাবেই ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কোভিড-১৯ এর নতুন চিকিৎসা
ভ্যাকসিন ছাড়াও গুরুতর উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসায় আরও কিছু ঔষধ ব্যবহৃত হচ্ছে। ডেক্সামেথাসোন ও রেমডেসিভির এরমধ্যে বহুল আলোচিত দুটি নাম। বিশেষজ্ঞ মহলে বিতর্কও রয়েছে রেমডেসিভির নিয়ে। এখনও গুরুতর উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসায় আরও কার্যকর ঔষধের অনুসন্ধান চলছে। ২০২১ সালে এমন কোনো ঔষধ চলে আসতে পারে যা কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুহার কমিয়ে আনবে।
উভয় সংকটে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো
বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশ চীন-যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বেশি ফল ভোগ করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশ নিয়ে গঠিত আসিয়ান জোট এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নানা কর্মকান্ডকে স্বাগত জানালেও, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকলে বিষয়টি তাদের জন্যও সুখকর হবেনা এবিষয়েও অবগত আছে দেশগুলো।
নিজ দেশের উন্নতি ও নিরাপত্তার জন্য ২০২১ সালে দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর সাথেও সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। চীন বা যুক্তরাষ্ট্র- সরাসরি কোনো দেশের পক্ষালম্বন না করে দেশগুলো ভারসাম্য বজায় রেখে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেবে এমন সম্ভাবনাই বেশি।
মহামারি থেকে নিরাপত্তা
মহামারির স্মৃতি জর্জরিত ২০২০ সালের পর ২০২১ সালে অবস্থার পরিবর্তন হবে এমন আশায় দিন গুনছে বিশ্ববাসী। ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, মডার্না ও চীনের সিনফার্মের ভ্যাকসিন জরুরি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনও অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
দরিদ্র দেশগুলোতে ভ্যাকসিন সহায়তায় গঠিত হয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস-গ্যাভি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্যাভি এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস বা সিইপিআই এর নেতৃত্বাধীন কোভ্যাক্স ২০২১ সালে ২০০ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে। অন্যান্য দেশগুলোও স্বল্প মূল্যে ও ঋণে দরিদ্র দেশগুলোতে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছে। এর কারণ হলো, পৃথিবীর একাংশকে বাদ দিয়ে মহামারি থেকে কখনোই পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকা সম্ভব নয়। সময়ের ব্যবধানেই আবার প্রকট আকার ধারণ করতে পারে মহামারি। একারণেই বিশ্বের সব দেশকে সাথে নিয়ে মহামারি মোকাবেলা না করলে প্রাণঘাতী এ রোগ থেকে কখনোই পুরোপুরি মুক্তি মিলবে না।
তেল উৎপাদনকারীদের সোনালি যুগের অবসান
দশকের পর দশক ধরে আরবের তেল উৎপাদনকারিরা মুশকিলে পড়েছে। যখন তেলের দাম কমে যায় তখন তারা তাদের অর্থনীতিকে কালোবাজারি থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু দাম কম হওয়া মানেই তারা তাদের বাজার পুনর্গঠন করতে পারবেনা।
কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে তেলের বাজারে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে তা ২০২১ এ সামান্য দাম বাড়লেও, মধ্যপ্রাচ্যের তেল ব্যবসায়ীরা তখনো তাদের বাজেট মিলাতে সক্ষম হবেনা।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারি সৌদি আরব তাদের তেল ছাড়াও অন্যান্য রাজস্বের উৎস খোজার চেষ্টা করছে। সেই সাথে তারা অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে নিজ দেশের জনগণের জন্য কাজের জায়গা খালি করতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতও তাদের প্রায় দশ লাখ অভিবাসীকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। বাহরাইন, ওমান, কুয়েত, আলজেরিয়া ইত্যাদি দেশগুলোও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
শতবর্ষে পা রাখবে চীনের সমাজতান্ত্রিক দল
২০২১ সাল চীনা সমাজতান্ত্রিক দলের জন্য এমন একটি বছর যেটি তারা সারা বিশ্বকে কিছুতেই ভুলতে দিবেনা। ২০২১ সালের ১লা জুলাইয়ে শতবর্ষে পা রাখবে মাও সে তুং এর নিজ হাতে গড়া এই দলটি। এ উপলক্ষ্যে পুরো বছরজুড়েই নানা উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষ্যে নানা অপেরা শো, সিনেমা এবং টেলিভিশন নাটক করা হবে। ২০২১ এর মধ্যে দেশকে চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেয়ার এবং উন্নত সমাজ গড়ে তোলারও অঙ্গীকার করেছে চীনা সমাজতান্ত্রিক দল।
প্রকৃতপক্ষে দলটির প্রতিষ্ঠার দিন ছিল ১৯২১ সালের ২৩শে জুলাই। কিন্তু মাও সে তুং নিজেই ১লা জুলাইকে দলের প্রতিষ্ঠা দিন হিসেবে তুলে ধরেন। শততম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সামনে রেখে বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলটি তাদের ৯০ মিলিয়ন সদস্যকে নির্দেশ দিয়েছে নিজেদের সাত দশকের উত্থানে ও উন্নয়নের ইতিহাস নিয়ে জানতে। এমনি ২০১৯ সাল থেকে 'স্টাডি দ্য গ্রেট ন্যাশন' নামে দলের একটি অ্যাপও রয়েছে যেখানে দলের লোকেরা তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে জানতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী যুগের অবসান?
নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য বিগত বছর ছিল কঠিন এক বছর । সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষার্থী বিদেশে পড়ালেখার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারীতে তাদের আর বিদেশের মাটিতে গিয়ে পড়ার সুযোগ হয়নি। জুম এবং ইন্টারনেটেই তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পথচলা শুরু হয়েছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তীব্র সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। উন্নত দেশের পক্ষে বিষয়টি এতোটা প্রকট না হলেও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এটি এক বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আর্থিক সহায়তার জন্য ব্যবসা এবং সরকারী খাতের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম হয়তো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। কিছু আবার অত্যন্ত সুচারুভাবেই তাদের কার্য পরিচালনা করবে। ২০২০ সালের এই ধাক্কায় পুরো বিশ্ব থমকে গেলেও ২০২১ সালের মধ্যে বিষয়গুলো মানিয়ে নিয়ে কিছুটা উন্নয়ন হয়তো আসবে।
মহামারিতে চলচ্চিত্র ব্যবসা নড়বড়ে
কোভিড -১৯ চলচ্চিত্র শিল্পে এনেছে ধ্বস। চলচ্চিত্র উৎসবগুলো কয়েক মাস ধরে বন্ধ ছিল। তাদের প্রচার বন্ধ ছিল। কান এর মতো উৎসব, যেখানে বছরের সবচেয়ে বড় সিনেমার প্রিমিয়ার হয় তার বদলে অনলাইন ইভেন্টে সেগুলোর সম্প্রচার করা হচ্ছে। বক্স অফিসে পুনরায় লাভ অর্জনের জন্য ২০২১ সালকেই বেছে নিচ্ছেন বৃহত্তম ব্লকবাস্টারগুলোর পরিবেশকরা। এই বিষয়গুলো প্রভাব ফেলেছে পুরস্কারের প্রদর্শনেও।
চাহিদা বাড়বে ভিডিও গেমসের
করোনার কারণে সারা বিশ্বজুড়ে গৃহবন্দী হয়ে ছিল অগণিত মানুষ। সেই সুযোগেই ২০২০ সালে ভিডিও গেমসের চাহিদা বেড়েছে বহুগুণে। ঘরে বসে বিরক্ত হবার চাইতে সময় কাটানোর জন্যে ভিডিও গেমসকে বেছে নিয়েছে মানুষ। নভেম্বরে প্লে স্টেশন ফাইভ এবং এক্সবক্স সিরিজ এস এর নতুন প্রোগ্রাম উদ্বোধনের সময় জানানো হয় যে ভোক্তার চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের ব্যবসা বাড়াতে হচ্ছে। সেই সাথে 'কল অফ ডিউটি', 'অ্যাসাসিন'স ক্রিড' ইত্যাদি নতুন ব্লকবাস্টার সিরিজও বের হয়েছে।
২০২১ সালে শুধুমাত্র ভিডিও গেম বিক্রি বৃদ্ধির আশাই করছে না কোম্পানিগুলো, তারা ই-স্পোর্টসকেও সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে দেখছেন।
ভিডিও গেম এবং প্রথাগত খেলার মধ্যকার পার্থক্যটি যেভাবে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে যে ২০২১ সালে কোম্পানিগুলো ই-স্পোর্টসে বিনিয়োগ করবে। জনপ্রিয় ব্রিটিশ ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহামেরও রয়েছ 'গিল্ড স্পোর্টস' নামের একটি দল এবং তারাও পেশাদার খেলোয়াড় ভাড়া করবে এবছর। সেই সাথে যেসব প্রোগ্রাম ২০২০ এ করোনার জন্যে বাতিল হয়ে গিয়েছিল তাও আবার শুরু করা হবে বলে ভাবা হচ্ছে।
- সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট