পৃথিবীকে বাঁচাতে পারে তিমি
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গাছ লাগানোর চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো তিমিদের রক্ষায় নেওয়া কার্যকর উদ্যোগ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই স্তন্যপায়ী প্রাণীর অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করতে পারলেই আসন্ন দুর্যোগ থেকে মানবজাতি রক্ষা পেতে পারে।
তিমিদের এমন গুরুত্বের প্রধান কারণ হলো তারা খাদ্যচক্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ কার্বন শোষণ করে। আর তারা যখন মারা যায়, তখন অধিকাংশ সময়েই তাদের মরদেহ সাগরতলে চলে যাওয়ার কারণে সঞ্চিত কার্বন বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসার পথ বন্ধ হয়ে যায়।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের একটি দল জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর প্রাকৃতিক সমাধানের উৎস খুঁজতে গিয়ে তিমিদের বিপুল অবদানের রহস্য উদঘাটন করেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তিমি দীর্ঘদিন ধরে বাঁচে। কিছু কিছু প্রজাতি গড়ে ৯০ বছর বা তার চাইতেও বেশি দিন বাঁচতে পারে। গ্রেট হোয়েল খ্যাত বৃহৎ আকারের তিমি প্রজাতিগুলোর প্রধান খাবার সামুদ্রিক উদ্ভিদ জাতীয় অণুজীব বা ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন। আর ফাইটোপ্লাঙ্কটন বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নেয়।
প্রতি বছর গ্রেট হোয়েল প্রজাতির সদস্যরা ফাইটোপ্লাঙ্কটন খেয়ে গড়ে ৩০ টন কার্বন বায়ুমণ্ডল ফিরতে বাধা দেয়। কারণ, উদ্ভিদ অণুজীব কেন্দ্রিক এই খাবারের কার্বন তাদের দেহের শক্তি চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয়। সেই তুলনায় একটি গাছ বছর মাত্র ২১ কিলোগ্রাম কার্বন সংরক্ষণ করতে পারে।
খাদ্যচক্রের শীর্ষ প্রাণী হিসেবেই শুধু নয়, বরং ফাইটোপ্লাঙ্কটনের সংখ্যাবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ তিমিদের উপস্থিতি। তিমিরা মূলত: পরিযায়ী জীব, জীবনচক্রের কারণেই তারা এক মহাসাগর থেকে অন্য মহাসাগরে পাড়ি দেয়।
পৃথিবীজুড়ে এসব যাত্রা পথে তিমির দল যে মলত্যাগ করে তাতে ফাইটোপ্লাঙ্কটনের জন্য সার হিসেবে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসফরাস ও আয়রন। তিমিরা যখন সমুদ্রের গভীর থেকে উঠে এসে নিঃশ্বাস ছাড়ে সেখানেও ফাইটোপ্লাঙ্কটন সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকণা থাকে।
ফাইটোপ্লাঙ্কটন কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নেয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অণুজীব পৃথিবীর মোট অক্সিজেন সরবরাহের ৫০ শতাংশ যোগান দেয়। এক লাখ ৭০ হাজার কোটি গাছ বা চারটি আমাজন বন তৈরি করা গেলেই কেবল এই পরিমাণ অক্সিজেন পাওয়া সম্ভব।
আইএমএফ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা এক যৌথ গবেষণার মাধ্যমে জানিয়েছেন, বর্তমানে পৃথিবী সুরক্ষায় তিমিরা যে অবদান রাখছে তার আর্থিকমূল্য বছরে এক লাখ কোটি ডলার।