ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফিরে পেতে লাগবে কয়েক সপ্তাহ, অথবা ২৯৯ ডলার
কানাডার টরোন্টো শহরের বাইরে বসবাসকারী এঞ্জেলা ম্যাকনেমারা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার প্রথম ইঙ্গিত পান একটি সতর্কবার্তা সম্বলিত মেইলের মাধ্যমে। ওই মেইলে উল্লেখ থাকে, তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে অপরিচিত সূত্র থেকে লগইন করা হয়েছে।
এরপর আসা কয়েকটি মেইলের মাধ্যমে ম্যাকনেমার জানতে পারেন, দুই ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের মাধ্যমে তার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড বদলানো হয়েছে।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার এই ঘটনা কিছুদিন ধরে আরও অনেকের সঙ্গেই ঘটছে। এর ফলে হ্যাকারদের পাশাপাশি ফেসবুকের উপরও অনেক ব্যবহারকারীর বিরক্তি দেখা দিয়েছে।
গত জুলাইয়ে, এনপিআর-এর কাছে ১৯ শ্রোতার অভিযোগ আসে, যাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক বা অচল হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও রেডিট ও টুইটারেও একই ধরনের অভিযোগের ছড়াছড়ি। এদের মধ্যে কিছু মানুষ তাদের অ্যাকাউন্ট ফিরে পাওয়ার জন্যে ভার্চুয়াল রিয়ালিটির হেডসেটের পেছনে শত শত ডলার খরচও করেছেন।
অন্যান্য পন্থা গ্রহণের আগে হ্যাকিংয়ের শিকার অনেকেই চেষ্টা করেন ফেসবুকের কাস্টমার সেবার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে। কিন্তু ফেসবুকের কারও সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার ব্যবস্থা নেই। এনপিআর এর কাছে পাঠানো এক মেইলে, ফেসবুকের কোনো ফোন নম্বর বা কোনো ইমেইল নেই বলে উল্লেখ করেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর শহরতলিতে বসবাসকারী জেসি মার্সালা।
ফেসবুকের বক্তব্য অনুযায়ী, করোনা মহামারিতে আইডি নিরীক্ষার লোকবল কমে গেছে। এনপিআর'কে দেওয়া এক বক্তব্যে ফেসবুক মুখপাত্র গ্যাবি কার্টিস বলেন, 'আমরা এই বিষয়ে অবগত, এবং চেষ্টা করব ভবিষ্যতে সাহায্য কেন্দ্র খাতে আরও বিনিয়োগ করার।'
২৯৯ ডলারে সমাধান
অ্যাকাউন্ট ফিরে পেতে রেডিটে পাওয়া এক তথ্য অনুসরণ করে ব্র্যান্ডন শার্ম্যান। তিনি ৩০০ ডলার খরচ করে 'ওকুলাস কোয়েস্ট ২' কিনে সেই হেডসেটের সিরিয়াল নম্বর অনুসরণ করে ওকুলাস কোম্পানিতে যোগাযোগ করার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর পান। ওকুলাস ফেসবুকের মালিকানাধীন একটি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি প্রতিষ্ঠান। যদিও এই পদ্ধতিতে অ্যাকাউন্ট ফেরত পাওয়া যায়, শার্ম্যান মনে করেন এটি অনৈতিক প্রক্রিয়া।
তার মতো কানাডার ম্যাকনেমারাও একই পদ্ধতিতে নিজের অ্যাকাউন্ট ফিরে পান।
যারা এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য সতর্কতাবার্তা: রেডিট ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকেই এই হেডসেট কিনে তাদের অ্যাকাউন্ট ফিরে পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাছাড়া গত সপ্তাহে ফেসবুক জানায়, ব্যবহারকারীদের ত্বকে জ্বালা হওয়ার কারণে এই হেডসেটের বিক্রি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে!
হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া ব্যবহারকারীদের টাকা ও ডেটা হারিয়ে যাওয়ার ভয়: হ্যাকাররা নিজ ব্যবসার জন্যে ব্যবহৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়ে যাবে বলে আতঙ্কে ছিলেন ফল রিভারের বেন কোলেম। তিনি গণিত ও প্রযুক্তির শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি ড্রোন দিয়ে ভিডিও তৈরি করেন ও বই লিখেন, এবং এসব কাজের জন্য ফেসবুক ব্যবহার করতেন। কোলেম অবশ্য হ্যাকারদের দখলে যাওয়ার আগেই তার অ্যাকাউন্ট লক করতে পেরেছিলেন, তবে সেটি তিনি আর ফেরত পাননি।
অন্যদিকে, জন মরগ্যানের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তার চালানো একটি পেজ নষ্ট করে দেয় হ্যাকাররা। ফেসবুক তার অ্যাকাউন্ট অচল করে দেওয়ার ফলে বেশ কিছু পারিবারিক ছবি হারিয়ে যায়। এসব ছবির মধ্যে তার ছেলের ছবিও ছিল, যে গত বছর মারা গেছে। 'মানুষ ফেসবুকে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে আবার অনেক তথ্য পেয়েও থাকে। এটি আদতে একটি ছবির অ্যালবাম,' বলেন মরগ্যান।
এনপিআর যোগঅ্যাগ করার পর ফেসবুক কোলেম ও মার্সালাকে তাদের অ্যাকাউন্ট আনলক করার লিংক দিয়েছে, এবং মরগ্যানকে তার অ্যাকাউন্ট সচলের জন্য পুনরায় আবেদন করতে বলে।
কী কারণে হ্যাক হচ্ছে?
আর্থিক লাভ ও অসৎ তথ্যের প্রচারণা: সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম ট্রেন্ড মাইক্রোর থ্রেট ইন্টেলিজেন্সের সহকারী সভাপতি জন ক্লে'র মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হ্যাক করার বেশিরভাগ ঘটনার সঙ্গেই আর্থিক লাভ জড়িত। একজন হ্যাকার কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীর বন্ধুদের ফাঁদে ফেলতে পারে, অথবা ব্ল্যাক মার্কেটে অ্যাকাউন্ট বিক্রি করে দিতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য হ্যাকাররা ফেসবুকে বিভিন্ন ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্যও এ কাজ করে থাকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানুষের জীবনের বড় একটি অংশ হওয়ায় এটিকেই লক্ষ্য করে হ্যাকাররা।
-
সূত্র: এনপিআর