মহান মে দিবস আজ
আজ ১ মে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। মহান 'মে দিবস' নামেই অধিক খ্যাত। দিবসটির উৎসে রয়েছে অধিকারের দাবিতে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের রক্তাক্ত ইতিহাস।
১৮৮৬ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহর। দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মদিবস নির্ধারণের দাবি নিয়ে হে মার্কেটে জমায়েত হয়েছিলেন একদল শ্রমিক। তাদের ঘিরে রেখেছিল সশস্ত্র পুলিশ। শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল আন্দোলন। আচমকা পুলিশের উদ্দেশে বোমা ছুড়ে মারে কোনো এক অজ্ঞাতনামা। পাল্টা জবাবে নিরস্ত্র শ্রমিকদের ওপর হামলে পড়ে পুলিশ। এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণে সহিংসতা ছড়ায়। ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ হারান প্রাণ।
এ ঘটনায় ফুঁসে ওঠে শ্রমিকবিশ্ব। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রথম কংগ্রেস। সেখানে পরের বছর থেকে শিকাগো ঘটনার বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব রাখেন রেমন্ড লাভিনে। ১৮৯১ সালে দ্বিতীয় কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয় এই প্রস্তাব।
এদিকে, ১৮৯৪ সালের মে দিবসে ঘটে দাঙ্গা। এরপর ১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ উপলক্ষ্যে গৃহীত হয় একটি প্রস্তাব। দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মদিবস নির্ধারণের দাবি আদায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতি বছর পহেলা মে বিশ্বজুড়ে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সব সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ওই প্রস্তাবে।
ওই সম্মেলনে শ্রমিকদের হতাহতের আশঙ্কা না থাকলে বিশ্বজুড়ে সব শ্রমিক সংগঠন ১ মে 'বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার' সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক দেশ এ দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানায়। সেটি কার্যকরও করা হয় কয়েকটি দেশে।
একে একে বাংলাদেশসহ প্রায় ৮০টি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় 'শ্রম দিবস' পালিত হয় সেপ্টেম্বর মাসে। সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিন পালনের উদ্যোক্তা।
হে মার্কেটের হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড ধারণা করেছিলেন, পহেলা মে'র যেকোনো আয়োজন সংঘাতে রূপ নিতে পারে। সে কারণে ১৮৮৭ সালে তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। সেই রেওয়াজ এখনো চলে আসছে।
বলা বাহুল্য, এবার এক অন্য রকম মে দিবসের দেখা পাচ্ছে পৃথিবী। করোনাভাইরাসের থাবায় অধিকাংশ কল-কারখানাই দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। শ্রমিকরা কাটাচ্ছেন ঘরবন্দি জীবন। পৃথিবীর নানা প্রান্তের শ্রমিকদের মনে এরইমধ্যে বাসা বেঁধেছে চাকরি হারানোর ভয়।