মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ঈদের সালামি
ছোটদের কাছে ঈদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ গুরুজনদের সালামি। প্রতি বছরই পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ছোটদের সালামি হিসেবে নতুন টাকা দিয়ে থাকেন গুরুজনরা। সেই সালামি ছোটদের ঈদ আনন্দকে আরও বেশি রাঙিয়ে তোলে। কে কার চেয়ে বেশি সালামি পেল, তা নিয়েও চলে প্রতিযোগিতা।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে এবারের ঈদ অনেকটাই রঙহীন-প্রাণহীন ছিল। তাই বলে তো সালামি দেওয়া-নেওয়া বন্ধ থাকতে পারে না। আর তাই ঘরে বসেই এবার গুরুজনদের কাছ থেকে সালামি পেয়েছে ছোটরা। নগদ টাকার পরিবর্তে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সালামির টাকা পেয়ে খুশি তারা।
জরুরি প্রয়োজনে অনেকেই মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করে থাকেন। সহজ ও ঝামেলাবিহীন হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহীতার সংখ্যাও। কিন্তু এই মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ঈদের সালামি দেওয়া-নেওয়ার ধারণা একেবারেই নতুন ও ব্যতিক্রম। ভিন্নধর্মী এই লেনদেনে দু'পক্ষই বেজায় খুশি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে এবার ঈদের সালামি দিয়েছেন এবং নিয়েছেন- এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এ প্রতিবেদকের। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে, অনেকেই এবার ফেসবুকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ঈদ সালামি দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।
আশিকুর রহমান মিঠু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কাজীপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। বাড়িতে তার ছোট দুই ভাই রয়েছে। দুই ঈদে তাদেরকে সালামি দেওয়ার পাশাপাশি মহল্লার ছোট ভাইদেরও সালামি দিতে হয়। ঈদের দিন পা ছুঁয়ে সালাম করেই তারা হাত বাড়ায় সালামির জন্য। সালামি দিতে দিতেই মানিব্যাগ থেকে টাকা ফুরিয়ে যায় মিঠুর।
তিনি বলেন, ঈদের আগে ব্যাংকে ভিড় বেশি থাকায় টাকা তুলতে পারিনি। ঈদের আগের রাতে ফেসবুকে দেখি অনেকেই মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে সালামি চাইছে। বিষয়টি আমার কাছে খুবই চমৎকার লেগেছে। সেজন্য এবার ছোট দুই ভাইকে বিকাশ ওয়ালেটের মাধ্যমে ঈদের সালামি দিয়েছি। স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় মহল্লার ছোট ভাইরা বাড়িতে আসতে পারেনি। কিন্তু তাদেরকেও বিকাশের মাধ্যমে সালামি দিয়েছি। সবমিলিয়ে এবারের ঈদে ১০ হাজার টাকা সালামি দিতে হয়েছে।
বাহাদুর আলম নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ফুলবাড়িয়া এলাকার এক যুবক জানান, ঈদের দিন বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম করে তাদের কাছ থেকে সালামি নেওয়াটা তার কাছে ভীষণ আনন্দদায়ক। এবার ঈদ উপলক্ষে আগেই ঢাকার মিরপুরে থাকা বড় বোন তার জন্য একটি পাঞ্জাবি পাঠিয়েছেন। আর ঈদের আগের রাতে সালামি হিসেবে বিকাশের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। বোনের কাছ থেকে সালামির টাকা পেয়ে বেজায় খুশি তিনি। এ টাকাই ঈদের দিন খরচ করেছেন।
আবু সাঈদ নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর গ্রামের এক কিশোর জানায়, জেলা শহরের কাজীপাড়ায় থাকা তার ফুফাতো ভাই প্রতি ঈদেই তাকে সালামি দিয়ে থাকেন। কিন্তু এবার লকডাউনের কারণে কাজীপাড়া গিয়ে সালামি আনতে পারেনি। সেজন্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটের মাধ্যমে ঈদের দিন দুপুরে তাকে সালামি পাঠিয়ে দিয়েছেন ফুফাতো ভাই। নতুন টাকা না পেলেও রকেটের মাধ্যমে সালামি পেয়ে ভীষণ আনন্দিত আবু সাঈদ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের চিকিৎসক ইনজামামুল হক সিয়াম জানান, তিনিও ঢাকায় থাকা তার পরিবারের ছোটদের এবার ঈদের সালামি বিকাশের মাধ্যমে দিয়েছেন। পাশাপাশি তার অধীনস্ত কয়েকজন স্টাফকেও সালামি বিকাশ করেছেন। সব মিলিয়ে ৭-৮ জনকে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন তিনি।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে; মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ছোটদের সালামি দেওয়ার বিষয়টি তার কাছে খুবই চমৎকার ও ব্যতিক্রম মনে হয়েছে।
ফরিদ মিয়া নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের এক মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট জানান, ঈদের দিন নামাজের পর থেকে দোকানে ছোট ছেলেদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। দুপুর পর্যন্ত তার দোকানে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা ক্যাশ আউটকারির সংখ্যাই ছিল সবচেয়ে বেশি।
সময় বাঁচাতে এবং ঝামেলাবিহীন হওয়ার কারণে মানুষও দিন-দিন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পারদর্শী হয়ে উঠছেন। আর মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ঈদ সালামি দেওয়ার বিষয়টিকেও চমকপ্রদ মনে করছেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যাংকার্স ফোরামের সভাপতি ইকবাল হোসেন ভূইয়া বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট সরাসরি কোনো ব্যাংক নয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এবারের ঈদে অনেকেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সালামি দিয়েছেন বলে শুনেছি। আমার নিজের কাছেও বিষয়টি চমকপ্রদ মনে হয়েছে।