স্মার্টফোন কেড়ে নিচ্ছে শত মানুষের প্রাণ
অত্যাধুনিক সফটওয়্যার, ব্যবহারসুলভ ইন্টারফেস, ইন্টারনেটসহ নানাবিধ সুবিধা নিয়ে স্মার্টফোন এখন আধুনিক জীবনে এক দৈনন্দিন অনুষঙ্গ। শুধু তরুণ প্রজন্ম নয়, নেটওয়ার্ক পরিষেবা এবং মান অনুসারে দাম কমার কারণে এখন সকল শ্রেণির মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে এই ধরনের মুঠোফোন।
আঙ্গুলের স্পর্শে চালিত আধুনিক মুঠোফোনের পথপ্রদর্শক বলা হয় অ্যাপলকে। ২০০৭ সালে মার্কিন এই কোম্পানি সর্বপ্রথম আইফোন বাজারে ছাড়ে। সেসময় অবশ্য এর নির্মাতারা বিশ্বের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এটি ইতিবাচক পরিবর্তন যুক্ত করবে, এমন আশাই করেছিলেন। কিন্তু কথায় আছে প্রদীপের নিচে থাকে অন্ধকার। আধুনিক প্রযুক্তি ও এর ব্যবহারে ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে ওঠা মানুষদের সম্পর্কে এ কথা একেবারে সঠিক। খবর সিইও ম্যাগাজিনের।
আধুনিক মুঠোফোনের অতি-ব্যবহার শুধু যে আমাদের মস্তিস্কে প্রভাব ফেলে তা নয়, সরাসরি প্রাণহানিতেও এর দায় অনেক। গাড়ি চালনা বা সড়ক পার হওয়ার সময় স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণেই এখন সবচেয়ে বেশি মানুষের অকালমৃত্যু ঘটছে।
অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। সেদেশের ৩২ শতাংশ চালক গাড়ি চালানোর সময় স্মার্টফোনে আসা বার্তা পড়ার কথা স্বীকার করেছেন। এদের অনেকেই আবার গাড়ি চালাতে চালাতেই নিজেদের ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন। বলা বাহুল্য, বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতি হয়ে উঠেছে প্রযুক্তির প্রতি এমন আসক্তি ।
২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল- এই এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি চাপা পড়ে পথচারী নিহতের সংখ্যা ৫১ গুণ বেড়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় এই সংখ্যা ২০১৭ সালে তার আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। স্মার্টফোন ব্যবহার বৃদ্ধির কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ।
উদ্বেগের বিষয় হলো উন্নত দেশের এই অবস্থা এখন বিশ্বায়নের কল্যাণে উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। এসব দেশে অধিকাংশ সময়েই চালকদের মুঠোফোন ব্যবহারের কারণে ঘটা দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব হয় না।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
প্রযুক্তি আসক্তি বা মুঠোফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার মানসিক অবসাদ বাড়ায়। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মার্কিন কিশোরীদের মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত মাতৃত্ব, অ্যালকোহল এবং ধূমপানের প্রবণতা কমার ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। সেই সূত্রে তাদের মানসিক হতাশাও কমার কথা। কিন্তু এরপরও দেশটির কিশোরীদের মাঝে হতাশাজনিত আত্মহত্যার সংখ্যা কমছে না।
নিউইয়র্ক টাইমসে লেখা কলামে ‘হ্যাকিং অব আমেরিকান মাইন্ড’-এর লেখক মনোবিজ্ঞানী ডক্টর রবার্ট লুসটিগ একে ডিজিটাল আসক্তির প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেছেন। লুসটিগ স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে কিশোর-কিশোরীদের মনোজগতে সংগঠিত মানসিক অস্থিরতা এবং তাদের আচরণগত পরিবর্তনের দিকটাও তুলে ধরেন তার বইয়ে। আচরণগত দিক থেকে প্রভাব বিস্তারের আলোচনায় সেখানে স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রসঙ্গটাই প্রাধান্য পেয়েছে।
এছাড়াও স্মার্টফোনের অ্যাপগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন সেগুলো তরুণদের মাঝে আসক্তির জন্ম দিতে পারে। এর মূল কারণ লোভনীয় বাজার ধরার তীব্র প্রতিযোগিতা। আইসিটিখাতের জায়ান্ট কোম্পানিগুলো আমাদের অজান্তেই হোমস্ক্রিনের সেরা পাঁচটি অ্যাপের একটি হতে প্রতি মুহূর্তে লড়ে চলেছে।