নিয়মিত দিবানিদ্রায় বাড়ে উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা: গবেষণা
বড় পরিসরের এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত দিবানিদ্রা বা ছোট ঘুম (ন্যাপ) দেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট মাইকেল গ্র্যান্ডনার এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'এর কারণ হতে পারে, ছোট ঘুম ক্ষতিকর না হলেও যারা এ ধরনের নিদ্রা দেয়, রাতে তাদের ভালো ঘুম হয় না। রাতে ভালো ঘুম না হওয়ার সঙ্গে খারাপ স্বাস্থ্যের সম্পর্ক রয়েছে এবং ছোট নিদ্রা দিয়ে এ ক্ষতি পোষানো সম্ভব না।'
গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যারা সাধারণত দিনের বেলা ঘুমিয়েছেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ১২ শতাংশ বেড়ে যেতে দেখা গেছে। আরও দেখা গেছে, একবারও দিবানিদ্রা না যাওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় নিয়মিত দিবানিদ্রা নেওয়া ব্যক্তিদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা ২৪ শতাংশ বেশি।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (এএইচএ) জার্নাল 'হাইপারটেনশন'-এ প্রকাশিত এই গবেষণা বলছে, ৬০ বছরের কম বয়সি ব্যক্তি যদি নিয়মিত ছোট ঘুম দেন, তাহলে কখনও ছোট ঘুম দেন না—বা মাঝেমধ্যে দেন—এমন ব্যক্তিদের তুলনায় তার উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি ২০ শতাংশ বেড়ে যায়।
এএইচএ সম্প্রতি হার্ট ও মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের অতি প্রয়োজনীয় আটটি উপাদানের মধ্যে ঘুমের সময়কালকেও যুক্ত করেছে।
গবেষকরা উচ্চ রক্তচাপের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের—যেমন যাদের আগে থেকেই টাইপ ২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল, অনিদ্রার সমস্যা আছে ও যারা নাইট শিফটে কাজ করেন—বাদ দেওয়ার পরেও একই ফলাফল এসেছে।
নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফিনবার্গ স্কুল অভ মেডিসিন-এর সেন্টার ফর সার্কাডিয়ান অ্যান্ড স্লিপ মেডিসিনের পরিচালক ড. ফিলিস জি বলেন, 'ফলাফল থেকে দেখা গেছে যে ছোট ঘুমের ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের প্রবণতা বেড়ে যায়।'
দীর্ঘ সময়ের দিবানিদ্রা আরও খারাপ
গবেষণাটিতে যুক্তরাজ্যের ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষের তথ্য ব্যবহার করা হয়। এই অংশগ্রহণকারীরা ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নিজেদের দিবানিদ্রার অভ্যাসের তথ্য দিয়েছেন।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নিয়মিত রক্ত, মূত্র ও লালার নমুনা দেন এবং চার বছরে চারবার দিবানিদ্রা-সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দেন।
তবে গবেষণায় শুধু কত ঘন ঘন দিবানিদ্রা দেয়া হয়, সে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে; ঘুমের সমকালের তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি।
ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. রাজ দাশগুপ্ত বলেন, 'দিবানিদ্রার সংজ্ঞা তারা দেয়নি। যেমন আপনি যদি এক-দুই ঘণ্টা ঘুমান যাচ্ছেন, তাহলে সেটিকে দিবানিদ্রা বলা যায় না।'
ড. রাজ আরও বলেন, 'আপনার যদি নিয়মিত নিদ্রাহীনতা হয়, তাহলে আমরা দিবানিদ্রাকে নিরুৎসাহিত করি, কারণ এতে রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যায়।'
গবেষণায় অংশ নেওয়াদের মধ্যে যারা নিয়মিত দিবানিদ্রা দেন, তারা ধূমপান করতেন, প্রতিদিন মদ্যপান করতেন, নাক ডাকতেন, অনিদ্রায় ভুগছিলেন এবং রাত জাগেন বলে জানা গেছে।
এই কারণগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই মানুষের ঘুমের গুণগত মান ও পরিমাণের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেন ড. রাজ দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, খারাপ ঘুমের কারণে মানুষ দিনের বেলায় মাত্রাতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে। এর ফলে দিনে অতিরিক্ত ঘুম হতে পারে।
ড. রাজ আরও বলেন, 'আমার বিশ্বাস, কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দিবানিদ্রা হলো ঘুমের সমস্যার লক্ষণ। অনিদ্রার কারণে চাপ ও ওজন নিয়ন্ত্রণের হরমোন বাড়তে পারে, যার ফলে দেখা দিতে পারে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস—যা বাড়িয়ে দেয় হৃদরোগের ঝুঁকি।'
- সূত্র: সিএনএন