অমরত্বের জন্য পারদের 'অমৃত' পান করেছিলেন চীনের প্রথম সম্রাট, পেলেন মৃত্যু
চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং মৃত্যুকে ভীষণ ভয় পেতেন। নিজের রাজত্বকালে বেশিরভাগ সময় তার কেটেছে অমরত্বের (এলিক্সির অভ লাইফ) সন্ধানে। শেষ পর্যন্ত যে এলিক্সির তিনি পেয়েছিলেন, তা পান করে একেবারে প্রাণটাই খোয়াতে হলো তাকে।
শুনতে রূপকথার মতোই যেন মনে হয় খেয়ালি এ সম্রাটের অমরত্বের পেছনে ছোটার গল্প। নিজের জীবনের শেষ ১০ বছর শি হুয়াং পণ্ডিত, জাদুকর, ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের চারদিকে পাঠাতে শুরু করেছিলেন তার জন্য অমৃতের সন্ধান করতে। মৃত্যুকে জয় করার এ অসম লড়াই বাকি সবকিছু থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছিল তার।
শি হুয়াং কেবল চিরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য অমৃতের সন্ধান করেননি, মৃত্যুকেও তিনি তীব্র ভয় পেতেন। প্রাসাদের সবগুলো ভবনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আলাদা রাস্তা বানানো হয়েছিল, সেগুলো আবার দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছিল যাতে সম্রাট বাইরের পরিবেশে এসে কোনো ঝুঁকিতে না পড়েন। তার ঘরের জানালাগুলো পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকত। কেউ যদি সম্রাটের অবস্থানের কথা ভুলেও উল্লেখ করত, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো।
খ্রিস্টপূর্ব ২১১ সালে ইয়েলো নদীর নিম্নপ্রান্তে একটি উল্কাপিণ্ড এসে পড়েছিল। সে উল্কার গায়ে লেখা ছিল: 'প্রথম সম্রাটের মৃত্যু হবে ও তার সাম্রাজ্য ভেঙে খানখান হয়ে যাবে।' সম্রাট তা দেখে প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি জানতে চাইলেন ওই লেখা কে লিখেছে। কেউ স্বীকার করলো না। তখন ওই এলাকার সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন তিনি। সম্রাটের আদেশে সেই উল্কাপিণ্ডটিও ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলা হলো।
কিন শি হুয়াং জানতে পারলেন, রাজ্যের রসায়নবিদেরা তাকে অমৃত বানিয়ে দেওয়ার কথা বলে তার সঙ্গে মজা করছে। আবারও বিগড়ে গেল সম্রাটের মেজাজ। সারা দেশ থেকে ৪৬০ জন পণ্ডিতকে ধরে এনে রাজধানীতে জড়ো করা হলো। সেখানে তাদের জন্য তৈরি করে রাখা হয়েছিল বিশাল কূপ। সব পণ্ডিতকে সেই কূপে ফেলে জীবন্ত কবর দেওয়ার আদেশ দিলেন শি হুয়াং।
তার উপদেষ্টারা অমৃতের নামে তাকে যত তরল দিয়েছিল, সবগুলোই পান করেছিলেন কিন শি হুয়াং। পূর্ব চীন থেকে পঞ্চম সফর শেষ করে রাজধানীতে ফেরার পথে হোপেই-এর একটি প্রাসাদে যাত্রাবিরতি করেন তিনি। সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সম্রাট।
ততদিনে আলকেমিস্টদের দেওয়া অমর-বড়ি খাচ্ছিলেন তিনি। সেগুলো ছিল আদতে বিষাক্ত পারদের তৈরি বড়ি। তখনকার চীনে বিভিন্ন ধরনের তরলের মিশ্রণে পারদ খুবই সাধারণ একটি উপাদান ছিল। সে রাতেই অসুস্থ সম্রাট মারা যান।
এভাবে অমরত্বের সন্ধান করতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ হারালেন কিন শি হুয়াং। তার মৃত্যুর পর চীন গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল, শি হুয়াংয়ের অখণ্ড চীন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল। কেবল ৪৯ বছর বেঁচেছিলেন সর্বদা মৃত্যুভয়ে তটস্থ থাকা এ সম্রাট।
সূত্র: অ্যানশিয়েন্ট অরিজিনস