ওয়াইফাই রাউটার দিয়েই চোখ রাখা যাবে দেয়ালের অপর পাশে থাকা ব্যক্তির গতিবিধির!
যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সম্প্রতি অবাক করার মত এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। নতুন এ প্রযুক্তির মাধ্যমে শুধু ওয়াইফাই রাউটার ব্যবহার করেই দেয়ালের অপর পাশে থাকা ব্যক্তির গতিবিধি নির্ণয় ও ব্যক্তির শরীরের ত্রিমাত্রিক আকৃতি গঠন করা সম্ভব!
প্রযুক্তিটি তৈরি করতে মূলত 'ডেন্সপোজ' নামের একটি সিস্টেমের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। সিস্টেমটি লন্ডনভিত্তিক এক গবেষক দল ও ফেসবুকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা গবেষকরা মিলে ডেভেলপ করেছেন।
সম্প্রতি এআরএক্সআইভি ওয়েবসাইটের 'ডেন্সপোজ ফ্রম ওয়াইফাই' শিরোনামে প্রকাশিত পেপার থেকে এ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা গেছে।
পেপারটি থেকে জানা যায়, গবেষক দল এমন একটি নিরাপদ ও তীক্ষ্ণ সিস্টেম ডেভেলপ করেছেন যেখানে রাউটার থেকে ওয়াইফাই সিগন্যাল প্রেরণের পর সেই সিগন্যাল মানুষের দেহে ঠিক কীভাবে স্পর্শ করেছে সে তথ্য সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে সংগ্রহ করা যায়। পরে সেই সিগন্যাল ব্যবহার করে ব্যক্তির দেহের বাইরের অংশের একটি ছবি তৈরি করে প্রযুক্তিটির সাহায্যে ঐ ছবির পিক্সেলগুলো সফলভাবে ম্যাপিং করা হয়।
বহুদিন ধরেই গবেষকরা কোনোরকম ক্যামেরা কিংবা ব্যয়বহুল সফটওয়্যার ব্যবহার না করে ব্যক্তির ত্রিমাত্রিক ছবি তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ২০১৩ সালে এমআইটির একদল গবেষক দেয়ালের অপর পাশের পরিস্থিতি আন্দাজ করতে মোবাইল ফোনের সিগন্যাল ব্যবহার করেছিলেন।
অন্যদিকে ২০১৮ সালে এমআইটির আরেকদল গবেষক ওয়াইফাই সিগন্যাল ব্যবহার করে দেয়ালের অপর পাশে থাকা ব্যক্তির গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য যোগাড় করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। আর কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই দুই প্রযুক্তির ধারণাকে সমন্বয় করে দেয়ালের অপর পাশে থাকা ব্যক্তির ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলেন।
গবেষকরা জানান, ব্যক্তির গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য জানতে আরজিবি ক্যামেরার 'উত্তম বিকল্প' হিসেবে এ ওয়াইফাই সিগন্যালের উন্নত প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা যেতে পারে। কেননা এ প্রযুক্তিতে অন্ধকারজনিত সমস্যা কিংবা আলাদা করে ক্যামেরার লেন্স ব্যবহারের ঝামেলা নেই।
তবে অনেক প্রযুক্তিবিদের আশংকা, এ প্রযুক্তির ব্যবহারে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হতে পারে। অবশ্য নিজেদের প্রকাশিত পেপারে গবেষক দল উল্টো জানান যে, প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে ব্যক্তিগত প্রাইভেসি রক্ষা করা সম্ভব হবে। একইসাথে এ প্রযুক্তি দিয়ে তৈরিকৃত যন্ত্রপাতি সুলভ মূল্যে বাজারে ছাড়া হবে।
প্রকাশিত পেপারে আরও বলা হয়, উন্নত দেশগুলোর প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ওয়াইফাই সংযোগ থাকে। ওয়াইফাই সংযোগের সাথে এ প্রযুক্তি সংযুক্ত করে বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ ব্যক্তিদের খোঁজ-খবর রাখা সম্ভব হবে। একইসাথে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে 'সন্দেহজনক আচরণ' নির্ণয় করা যাবে।
এ প্রযুক্তির মূলধারার মার্কেটে প্রবেশ ও জনসাধারণের ব্যবহারের ক্ষেত্রে 'সন্দেহভাজন আচরণ' এর মানদণ্ড কী হবে তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক সংশয়। তবে যেখানে অ্যামাজনের মত বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি 'রিং ক্যামেরা ড্রোন' এর মত ডিভাইস অহরহ বিক্রি করছে, সেখানে ওয়াইফাই ব্যবহার করে দেয়ালের অপর পাশে থাকা মানুষের উপস্থিতি নির্ণয়ের এ প্রযুক্তি নেতিবাচক হবে কি-না সেই বিতর্ক থেকেই যায়।