ফ্রিদা কাহলোর জীবনাবসানে সাহায্য করেছিলেন স্বামী দিয়েগো রিভেরা!
মেক্সিকোর আধুনিক চিত্রকলার সবচেয়ে মেধাবী এবং গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী বলা হয় ফ্রিদা কাহলোকে। তার নারীবাদী চেতনা ও অতুলনীয় জীবনদর্শনের জন্য আজও তিনি জগদ্বিখ্যাত। আর সেই সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও বেশ আলোচিত হয়েছেন এই শিল্পী।
বিংশ শতাব্দীতে লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী চিত্রশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফ্রিদা কাহলো ও তার জীবনসঙ্গী, মেক্সিকান শিল্পী দিয়েগো রিভেরা। এই জুটির বিক্ষুদ্ধ-উন্মাতাল প্রেম দীর্ঘদিন ধরে মোহমুগ্ধ করে রেখেছিল শিল্প জগতকে। অনুরাগীরা প্রশংসায় ভাসালেও, কখনো কখনো তাদের শিল্পকর্মকে ছাপিয়ে তাদের প্রেমই হয়ে উঠতো আলোচনার প্রধান বিষয়।
শিল্পী ও ব্যক্তি ফ্রিদা কাহলোকে নিয়ে চর্চা যে কখনোই শেষ হয় না, আরও একবার তার প্রমাণ পাওয়া গেল। সম্প্রতি দিয়েগো রিভেরার নাতি হুয়ান কর্নেল রিভেরা জানিয়েছেন, তার বিশ্বাস যে তার দাদাই ফ্রিদার 'জীবনাবসানে' সাহায্য করেছেন।
বিবিসির তিন পর্বের সিরিজ 'বিকামিং ফ্রিদা কাহলো'তে এই সরল স্বীকারোক্তি দেন দিয়েগো রিভেরার নাতি। আগামী মাসে সিরিজটি সম্প্রচার হওয়ার কথা রয়েছে। ফাইনাল এপিসোডে হুয়ান দাবি করেন, ফ্রিদার অসুস্থতার কষ্ট আর সইতে না পেরে তার পূর্বপূরুষই হয়তো ফ্রিদার 'জীবনাবসান' ঘটাতে সাহায্য করেছেন।
১৯৫৪ সালে মেক্সিকো শহরে মারা যান ফ্রিদা কাহলো। তার মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ হিসেবে বলা হয়, তিনি পালমোনারি এম্বোলিজমে (ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধা) আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু বহু বছর ধরেই গুজব আছে যে ফ্রিদা কাহলো আত্মহত্যা করেছেন। সেসময় একজন নার্স জানিয়েছিলেন যে ফ্রিদা তার ডাক্তারের দেওয়া পরিমাণের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পেইনকিলার নিয়েছিলেন। এমনকি শিল্পীর কথাবার্তা থেকে এও মনে হচ্ছিল যে তিনি আসলে তার মৃত্যুর আভাস পেয়েছিলেন।
এখানেই শেষ নয়; মৃত্যুর আগে ডায়েরিতে ফ্রিদার লেখা শেষ কথাগুলো ছিল- "আশা করছি এ প্রস্থান আনন্দের হবে – এবং আমি আর কখনো ফিরতে চাই না- ফ্রিদা।"
বলে রাখা ভালো, মৃত্যুর সময় ফ্রিদার বয়স ছিল মাত্র ৪৭ বছর। ছোটবেলায় পোলিও আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি ১৮ বছর বয়সে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ফ্রিদার মেরুদণ্ড, পা ও কলারবোন ভেঙে যায় এবং তিনি প্রায় পঙ্গু হয়ে যান।
ছেলেবেলা থেকে একের পর এক দুর্ঘটনা, অসুস্থতা ও অস্ত্রোপচারের সম্মুখীন হতে থাকলেও, তা ফ্রিদাকে একজন কিংবদন্তি শিল্পী হয়ে ওঠা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। এই সংক্ষিপ্ত জীবনকালেই তার আঁকা চিত্রকর্মের সংখ্যা দুইশোর অধিক।
ফ্রিদার আঁকা গভীর, আত্মদর্শী অনেক চিত্রকর্মেই রিভেরার সঙ্গে তার বিক্ষুদ্ধ সম্পর্কের প্রতিফলন দেখা গেছে। নিজের চেয়ে বয়সে ২১ বছরের বড়, মেক্সিকোর বিখ্যাত ম্যুরাল শিল্পী ও নিবেদিতপ্রাণ কমিউনিস্টকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ফ্রিদা। বিশের দশকে রিভেরার সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়েছিল।
'দ্য এলিফ্যান্ট অ্যান্ড দ্য ডাভ' নামে পরিচিত এই জুটি ১৯২৯ সালে বিয়ে করেন; যদিও এ বিয়েতে ফ্রিদার মায়ের সম্মতি ছিল না। পরবর্তীতে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে এবং ১৯৪০ সালে তারা আবারও বিয়ে করেন। জীবদ্দশায় ফ্রিদা একাধিক প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। নির্বাসিত রাশিয়ান বিপ্লবী লিয়ন ট্রটস্কি তাদের মধ্যে একজন। আবার রিভেরাও একাধিক পরকীয়া করেছিলেন; এমনকি ফ্রিদার বোন ক্রিস্টিনার সাথেও।
"তাদের সম্পর্কটা জটিল ছিল কারণ তারা দুজনেই ছিলেন খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী, দারুণ প্রতিভাবান ও সৃজনশীল শিল্পী। আর তারা একে অপরকে ভালোবেসেছিলেনও এই কারণে", বলেন ম্যাসাচুসেটসের ওয়েলেসলি কলেজের লাতিন আমেরিকান আর্ট বিশেষজ্ঞ জেমস ওলেস।
রিভেরা ফ্রিদার মৃত্যুতে সাহায্য করেছেন, এটাকে 'পুরোপুরি অনুমান' বলছেন ওলেস। তিনি বলেন, এর কোনো প্রমাণ নেই। সেই সাথে ফ্রিদার মতো একজন শিল্পীর জন্ম-মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এত আলোচনা-বিতর্ক কীভাবে তার আসল প্রতিভা ও তার শিল্পকে ছোট করছে তা নিয়েও আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।
সূত্র: দ্য টাইমস