সাবমেরিন কার থেকে শুরু করে হাঙর, ইয়ট... বিলিয়নিয়ারদের চোখ ধাঁধানো যত সংগ্রহ!
বিলাসবহুল জীবনযাপন, দামি বাড়ি-গাড়ি এবং চোখ ধাঁধানো সব মূল্যবান জিনিসের সংগ্রহ… বিলিয়নিয়াদের জীবনে এগুলো অতি পরিচিত বিষয়। কে কাকে টেক্কা দেবে অর্থবিত্তের দিক থেকে, কে কতটা চমকপ্রদ-অদ্বিতীয় জিনিস সংগ্রহ করতে পারে তা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। এসব টাইকুনদের অনেকেই নিজেদের স্টার্টআপ ব্যবসাকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কোম্পানিগুলোর একটিতে পরিণত করেছেন এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার নিজেদের পকেটে পুরছেন।
যখন আপনার কাছে এত বেশি টাকা থাকে যা স্বাভাবিকভাবে চললে এক জীবনেও খরচ করা সম্ভব না, তখনই আসে 'বিলিয়নিয়ারদের বিশেষত্ব'! তারা বেছে নেন 'অস্বাভাবিকভাবে' টাকা খরচের পথ। বিলাসী জীবনযাপনে কোনো কার্পণ্য করেন না তারা। পানির নিচে চলতে পারে এমন গাড়ি থেকে শুরু করে ১৪ ফুট লম্বা হাঙর সংরক্ষণ করা- বিলিয়নিয়ারদের শখ বোঝা দায়! ফুলেফেঁপে ওঠা ব্যাংক একাউন্টের পাশাপাশি চমকপ্রদ জিনিস সংগ্রহ করে সবার সামনে নিজেদের আলাদা প্রমাণের চেষ্টাও থাকে বৈকি।
পৃথিবীজুড়ে এই মুহূর্তে প্রচুর লোক রয়েছেন যারা প্রতিদিনই স্টার্টআপ ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু তবুও শীর্ষসারির বিলিয়নিয়ারদের সমপরিমাণ সম্পদের মালিক হতে তাদের অনেকটা সময় লেগে যাবে।
ইলন মাস্ক
টাকা দিয়ে কি কি করা যেতে পারে সেই ভাবনার চাইতেও যখন আপনার কাছে বেশি টাকা থাকবে, তখন আপনি কী করবেন? আপনি যদি ইলন মাস্ক হন, তাহলে জেমস বন্ড সিনেমার মতো আইকনিক একটি সাবমেরিন কার কিনে ফেলবেন। বলাই বাহুল্য, সব বিলিয়নিয়াররা টাকা থাকলেই ইলন মাস্কের মতো হতে পারবেন না। সবসময়ই গতানুগতিকের চেয়ে ভিন্ন কিছু করে সবাইকে অবাক করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে স্পেসএক্স-এর প্রতিষ্ঠাতার।
আর তাই তো এই মার্কিন ধনকুবের ১ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ১৯৭৭ সালের জেমস বন্ড চলচ্চিত্র 'দ্য স্পাই হু লাভড মি'তে দেখানো সাবমেরিন কার কিনে নিয়েছেন। পানির নিচে চলতে পারে এমন গাড়ি থাকতে সাধারণ গাড়ির পেছনে টাকা নষ্ট করার লোক মোটেই নন মাস্ক। কে জানে, হয়তো ভবিষ্যতে নিজেই কোনো জেমস বন্ড সিনেমায় অভিনয়ের পরিকল্পনা করছেন এই বিলিয়নিয়ার!
জেফ বেজোস
সাধারণ জাদুঘর তো অনেক দেখেছেন, কিন্তু আমাজনের সিইও জেফ বেজোসের ওয়াশিংটনের বাড়িটিই যে আস্ত একটা জাদুঘর তা কি জানেন? তবে এক্ষেত্রে বিষয়টা একটু উল্টো; বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন জেফ বেজোস ওয়াশিংটনে একটি জাদুঘর কিনে সেটিকেই তার ব্যক্তিগত আবাসস্থলে পরিণত করেছেন! জানা যায়, এই প্রপার্টি কিনতে তিনি ২৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন।
তবে এখানেই শেষ নয়, জায়গাটিকে নিজের সুবিধাজনক আবাসস্থলে রূপ দিতে সংস্কার কাজে আরও ১২ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন তিনি। তাই বলা যায়- বেজোস যেখানে, বিলাসিতা সেখানেই!
ল্যারি পেজ
গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের সংগ্রহে রয়েছে 'সেন্সেস' নামের একটি আকর্ষণীয় ইয়ট। তবে শুধুমাত্র আকর্ষণীয় বললে খুব কম বলা হয়ে যায়; কারণ ৪৫ মিলিয়ন ডলার দামের এই ইয়টে রয়েছে এমন সব সুযোগসুবিধা যা জেমস বন্ডকেও ঈর্ষান্বিত করে তুলতে পারে!
ইয়টটিতে রয়েছে একটি হেলিপ্যাড, ১০টি বিলাসবহুল স্যুইট এবং জেট স্কি। এই ইয়টে সময় কাটালে মন এমনিতেই যে ফুরফুরে থাকবে তা ল্যা্রি পেজকে দেখেই বোঝা যায়। সিলিকন ভ্যালির নানাবিধ জটিলতা থেকে দূরে অবকাশযাপনের জন্য 'পারফেক্ট' বস্তুটিকেই বেছে নিয়েছেন ল্যারি।
জ্যাক মা
বিলাসিতার ক্ষেত্রে জ্যাক মা'র নাম তুলনামূলক কম শোনা গেলেও, বিভিন্ন প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, তিনি হংকং এর দ্য পিকে ১৯১ মিলিয়ন ডলারের একটি সম্পত্তির 'নামহীন মালিক'! অন্যরা যখন পয়সা গুনতে ব্যস্ত, জ্যাক মা তখন এশিয়ার অন্যতম একটি প্রিমিয়াম বাড়ির পেছনে টাকা ঢালতে ব্যস্ত। আর হবেন না ই বা কেন, তারও যে রয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ!
বিল গেটস
শীর্ষ বিলিয়নিয়ারদের তালিকা করা হবে আর বিল গেটস সেখানে থাকবেন না, তা তো হতেই পারে না। যখন আপনি একজন বিলিয়নিয়ার, তখন কি কিনবেন আর কি কিনবেন না তার কোনো সীমা থাকে না। মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। তার সময়সাময়িক অন্যান্য বিলিয়নিয়াররা যখন সাবমেরিন বা ইয়টের দিকে ঝুঁকেছেন, বিল গেটস তখন ব্যক্তিগত বিমান কেনার দিকে আগ্রহী হয়েছেন।
আর বিল গেটসের সেই বিমান সাধারণ কোনো বিমান নয়। তার মালিকানায় থাকা বোয়িং ৭৫৭ বিমানটি অধিকাংশ বাণিজ্যিক বিমানের চাইতে বড়। বিমানটির দাম আনুমানিক ৭০ মিলিয়ন ডলার এবং এতে রয়েছে বিলাসব্যসনের সকল সুযোগ-সুবিধা। মাস্টার বেডরুম, ডাইনিং রুম এবং মুভি থিয়েটার সংযুক্ত এ বিমানটিকে দেখলে মনে হবে, বিল গেটস সত্যিই 'ট্রাভেল ইন স্টাইল' এর মানে বোঝেন এবং কদর করেন।
কার্লোস স্লিম
মেক্সিকান টেলিকম টাইকুন কার্লোস স্লিমের নেশা শিল্পকর্ম সংগ্রহের দিকে। তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার শিল্পকর্ম এবং তিনি এগুলোকে ওয়্যারহাউজের অন্ধকারে বন্দি করে রাখেননি। বরং ৮০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে কার্লোস একটি জাদুঘর তৈরি করেছেন শিল্পকর্মগুলো প্রদর্শনের জন্য।
কার্লোস স্লিমের 'মিউজিও সুমায়া' ভবনটি নিজেই একটি মাস্টারপিস। এই জাদুঘরের অদ্বিতীয় নকশাই দর্শনার্থীদের চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট! আর ভেতরে তো সালভাদর দালি, বার্তোলোমি এস্তেবান মুরিল্লো, টিনটোরেত্তোর মতো কিংবদন্তী শিল্পীদের শিল্পকর্ম রয়েছেই।
স্টিভেন কোহেন
বিলিয়নিয়ারদের নানা রকম জিনিস সংগ্রহের শখ থাকে, যার মধ্যে হেজ ফান্ড ম্যানেজার স্টিভেন কোহেনের শখটা একটু বেশিই অদ্ভুত। ১৪ ফুট লম্বা একটি টাইগার শার্ক বা হাঙ্গরকে অ্যালকোহল ও ফর্মালডিহাইডে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করেছেন তিনি। তার এই শিল্পকর্মের নাম 'দ্য ফিজিক্যাল ইম্পসিবিলিটি অব ডেথ ইন দ্য মাইন্ড অব সামওয়ান লিভিং'।
মূলত আর্ট মোগল চার্লস স্যাচির কাছ থেকে ১৯৯২ সালে এটি কিনে নেওয়া হয়। কিন্তু স্টিভেন কোহেনের নজর যখন এটির ওপর পড়ে, তখন এটির দাম গিয়ে ঠেকেছিল ৮ থেকে ১২ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে। তবুও পছন্দের জিনিসটি নিজের দখলে আনতে কার্পণ্য করেননি কোহেন।
সূত্র: ইয়াহু ফাইন্যান্স