যে হাতি ছিল শৌর্যবীর্যের প্রতীক, আজ সে নির্যাতিত ভিখারি
বাংলার ইতিহাসে হাতির কদর কেবল একটি বিশালাকার জন্তু হিসেবেই নয়। বরং তারা যেমন ছিল রণপটু, তেমনি পরিশ্রমী। যুদ্ধের ময়দানে, ভারী কাজে, আভিজাত্য প্রকাশে, উপহার হিসেবে, বিনোদনের খোরাক, শক্তিপ্রদর্শণী, অথবা দূর পথ পাড়ি দেওয়া- সবক্ষেত্রেই হাতি দেখিয়েছে তার পারদর্শিতা। যে কারণে বাংলার বাইরে থেকে এসেও হাতিতে মুগ্ধ হয়েছেন কখনো আর্যরা, কখনো সুলতানি আমলের সুলতানরা, কখনোবা মোগলরা, কখনো ব্রিটিশরা। আর্য এবং মোগলরা তো এ ভূখণ্ডে এসেই প্রথম হাতির দেখা পান।
মোগলদের কাছে নাকি বাংলার বারো ভূঁইয়াদের বিশাল হস্তীবাহিনী ছিল এক আতংকের নাম। এমনকি তারা যুদ্ধে সেনাদল সাজাতেন নাকি এই হস্তিবাহিনীকে মাথায় রেখেই! মির্জা নাথান তার বাহারিস্তান-ই-গায়বী বইটিতে এমনটিই লিখেছেন।
তবে মুঘলদের মধ্যে সম্রাট আকবরই হাতিকে ভালোভাবে বাগে আনতে পেরেছিলেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী 'তুজুক-ই জাহাঙ্গীরী' থেকে জানা যায়, আকবরের হাতিশালায় ৩৫ হাজার হাতি ছিল। সেই পঞ্চদশ শতাব্দীতে প্রতিদিন এইসব হাতির জন্য খরচ হতো ৪ লাখ টাকা। বেয়াড়া কোনো হাতি যে কিনা তার মাহুতকেও পিষে মেরেছে, সে হাতিকেও আকবর বশ করেছেন শোনা যায়। আকবরপুত্র জাহাঙ্গীরও হাতিপ্রেমী ছিলেন। বাবার মতো বিশাল সংগ্রহ না থাকলেও হাতি রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা পায় তার আমলেই। বাংলার রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করলে হাতির কদর আরও বাড়ে। এই হাতি ধরা, পোষ মানানো এবং হাতির প্রশিক্ষণের জন্য খোলা হয় হাতিখেদা নামে একটি বিভাগও। মোগল বাদশাহ ও তাদের আমির-ওমরাহদের জন্য ছিল একটি বড় বিনোদন ছিল হাতি খেদা বিভাগ।
এরপর এলো ব্রিটিশরা। ইংরেজরা চতুর ছিল, ব্যবসায়িক বুদ্ধি ছিল প্রখর। মোগল আমলের হাতি ধরার কৌশলকেই আরও উন্নত করে নিয়েছিল ব্রিটিশরা। কোম্পানির তত্ত্বাবধানে উনিশ শতকের শুরুর দিকে তারাও ঢাকায় খেদা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে। সরকারি কাজে তো বটেই, হাতিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারও শুরু করে তারা।
ঢাকায় হাতিদের যাতায়াত ছিল যেসব জায়গায়, সেসব এলাকায় হাতির নামে নামকরণ করে তারা। যেমন, পিলখানা, মাহুতটুলি, এলিফ্যান্ট রোড প্রভৃতি। মোগল আর ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া এই নামেই এখনো এলাকাগুলো পরিচিত।
উৎসব, যুদ্ধ, শাস্তি, রাজদরবার সবেতেই হাতির ব্যবহার
একসময় হাতিকে ঘিরে আয়োজন হতো বিভিন্ন সার্কাস, প্রদর্শনী, খেলাধুলার। গ্রামাঞ্চলে এখনো হয় কোথাও কোথাও। এর শুরুটা হয়তো মোগল আমল থেকেই। হেকিম হাবিবুর রহমানের 'ঢাকা পাচাস বারাস কি পেহলে' বইয়ে উল্লেখ আছে, হাতির লড়াই মোগল বাদশাহ ও সুবেদারদের প্রিয় শখ ছিল। লড়াই লড়বার জন্তুদের মধ্যে হাতি লড়ানো রাজকীয় ছিল (পৃ ১০২)।
আবুল ফজলের 'আইন-ই আকবরী' গ্রন্থে সম্রাট আকবরের সাথে হাতির সম্পর্ক কেমন ছিল তা বোঝা যায়। হাতি নিয়ে নানারকম মজাদার খেলা, কলাকৌশল দেখিয়ে সমস্ত হস্তী-বিশারদ ও অমাত্যদের চমকে দিতেন তিনি। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'শাহজাদা দারাশুকো', মির্জা নাথানের 'বাহারিস্তান-ই-গায়বী', মাহমুদুর রহমানের 'মোগলনামা অখন্ড' রচনায় বারবার উঠে এসেছে সরকারি, সামরিক, বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে হাতির নানা ব্যবহার।
এমনকি একটা সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য হাতি নিযুক্ত করা থাকত। অপরাধীকে হাত-পা বেঁধে বিশাল আকৃতির হাতির সামনে এনে রাখা হত, তখন হাতিটি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর মাথা পা দিয়ে মাড়িয়ে থেতলে দিত। কিছু কিছু হাতিকে আবার প্রশিক্ষণও দেয়া হতো যাতে সে আসামীর মাথাতে আস্তে আস্তে মাড়িয়ে দেয়। এরপর ভয়, আতঙ্ক, আর যন্ত্রণায় অপরাধী চিৎকার করতে থাকলে হাতিটি তার পায়ের নিচে থাকা মাথাটি এক চাপে পিষিয়ে দিত!
প্রশিক্ষণের নামে নির্যাতন
হাতির এই প্রশিক্ষণ বা পোষ মানানোর রীতি কিন্তু এখনো রয়ে গেছে। তবে এখন কেবল পাহাড় থেকে গাছ টানা, শারীরিক কসরত, খেলা বা সার্কাস দেখানোর জন্য হাতিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর এই প্রশিক্ষণ দিতে গিয়েই হাতিকে করা হচ্ছে অমানবিক নির্যাতন।
প্রতি বছর মৌলভীবাজারের কোনো না কোনো এলাকায় চলে এই প্রশিক্ষণ। বিশেষ করে জুড়ি ও কুলাউড়া উপজেলায় বহুদিন ধরেই এ পদ্ধতিতে হাতিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন হাতির প্রশিক্ষকরা।
প্রশিক্ষণের প্রাথমিক পর্যায়ে হাতি শাবককে মালিকের ডাকে সাড়া দেওয়ার উপায় শেখানোর চেষ্টা করা হয়। একেকটি পরিচিত শব্দ করেন প্রশিক্ষক আর তাতে সাড়া না দিলে শক্ত বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটানো হয় হাতির শাবককে। বারবার আঘাতের পর শাবকটি যখন সাড়া দেয় সেই ডাকে, তখন প্রশিক্ষণের একটি পক্রিয়া শেষ হয়। আবার দেখানো হয় বিভিন্ন কসরত। টাকা সংগ্রহ, সুর তুলে সালাম দেওয়া ইত্যাদি।
প্রশিক্ষক যেভাবে দেখান, একই উপায়ে হাতির বাচ্চাটি সে কসরত না করতে পারলে আবার আঘাত করা হয় তাকে। যতক্ষণ না সে আয়ত্তে আনতে পারছে ততক্ষণ চলে পেটানো। বোবা হাতি বুঝতে না পারলেও বারবার তার সামনে একই কাজ করে বা সংকেত দেখিয়ে এবং আঘাত করার ফলে সেও বুঝে যায় এমনটাই চাচ্ছেন মালিক। যা করলে হয়তো নির্যাতন কমবে। কখনো সামনে একটি লাঠি ফেলে রেখে হাতি শাবকটিকে তা শুঁড় দিয়ে তুলে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। কথামতো করতে পারলে হাত বুলিয়ে আদর করা হয়, কিন্তু কথা না শুনলে আঘাত করা হয়। শাবকটি চেষ্টা করে বাঁধনমুক্ত হতে, কিন্তু শুঁড় তুলে কাতরানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এমনকি বাচ্চাটি শুতে চাইলেও আঘাতের মাত্রা বেড়ে যায়, তাই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আবারো উঠে দাঁড়ায়।
বেঁধে রাখা অবস্থায় দীর্ঘসময় অত্যাচার এবং প্রশিক্ষণ শেষে হাতির বাচ্চাটিকে মাঠের চারপাশে হাঁটান হাতির মাহুত। এই হাঁটানোও নাকি প্রশিক্ষণ। নির্যাতনের শিকার হাতির বাচ্চা হাঁটতে না চাইলে আবার লাঠি দিয়ে আঘাত শুরু করেন প্রশিক্ষক। হাতির বাচ্চা সে আঘাত নিয়েই হাঁটতে শুরু করে। তা দেখে হাততালি দেন উপস্থিত হাজারও মানুষ। তারা এ বিনোদনের জন্য হাতি মালিকদেরকে টাকাও দেন।
'এই পিটুনি সন্তানকে শাসনের মতোই'
কোনো কোনো সময় প্রশিক্ষকের বেদম পিটুনির ফলে হাতির শাবকের শরীরে একাধিক ক্ষতের সৃষ্টি হয়, রক্ত বের হয়ে আসে। কিন্তু তাতে প্রশিক্ষণ দেখতে আসা উৎসুক মানুষ বা হাতির মালিক, প্রশিক্ষক কেউই পাত্তা দেন না। কখনো কখনো ক্ষতের চিকিৎসাও করান না হাতির মালিকেরা।
প্রশিক্ষণকালে খুব বেশি ক্ষত হলে পাহাড়ি গাছের লতাপাতা দিয়া মলম বানিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেন। তাতেই সেরে যায় বলে জানান হাতি মালিকরা।
সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, প্রশিক্ষণকালে হাতিকে নির্যাতন করা নিষিদ্ধ বলা হলেও স্থানীয় হাতির মালিক বা প্রশিক্ষকরা তা মেনে চলেন খুব কম। বরং হাতি মালিকদের বক্তব্য- প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় ঠিকমতো প্রশিক্ষণ না নিলে একটু আধটু তো পিটুনি খাবেই! তাদের মতে, এই পিটুনি সন্তানকে শাসনের মতোই।
হাতি পালন ব্যায়বহুল
একসময় ঢাকার অভিজাত নাগরিকরাও শখের বশে হাতি কিনে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কাজে ব্যবহার করত। প্রাচীন ঢাকার ইদ মিছিল, মহররমের মিছিল কিংবা জন্মাষ্টমীর মিছিলে সুসজ্জিত হাতির পাল ছিল অন্যতম আকর্ষণ। এখন শহরে হাতিকে ঘিরে এরকম উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায় না আর। তবে হাতিকে ধরে চাঁদাবাজি করার দৃশ্য ঢাকা শহরে (ঢাকার বাইরেও এই দৃশ্য চোখে পড়ে) এখন প্রায়ই দেখা যায়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অলিগলি এবং সড়কে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল বন্ধ করে হাতি দিয়ে চাঁদা উঠানো হয়। অনেকেই খুশি মনে দিলেও, বেশিরভাগই একপ্রকার বাধ্য হয়েই টাকা দিতে বাধ্য হয়। কারণ টাকা না দিলেই বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পথচারিদের প্রকাশ্যে ভয় দেখানো হয়।
হাতির খাবারের খরচ ব্যয়বহুল হওয়ায় বিভিন্ন সার্কাসে বা খেলাধুলায় ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি দোকানে দোকানে ঘুরে বা বাসা বাড়িতে ঘুরে চাঁদা তুলে মাহুতরা। কেউ ২০ টাকা কেউ ১০০ টাকা বা কেউ ৫০০ টাকাও দেন কিন্তু এর বেশীরভাগ দেন ভয়ে।
নেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ
হাতির পোষ মানানোর এই পদ্ধতিকে বলা হয় 'হাদানি পদ্ধতি'। এই পদ্ধতিতে হাতির শাবকদের ওপর এই প্রশিক্ষণ চলে তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত। এই যন্ত্রণাদায়ক পদ্ধতিতে হাতিকে মানুষের বশ্যতা শিকারে বাধ্য করার ফলে অনেক হাতি মানসিক সমস্যাগ্রস্ত হয়ে যায়, যাকে প্রচলিত ভাষায় পাগলা হাতি বলা হয়ে থাকে। নিষ্ঠুর নির্যাতনে অনেক হাতি শিশু অবস্থায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়। আবার এসব পাগলা হাতির আক্রমণে প্রায় সময় মানুষ মারা যায়।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮ (ক) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র কর্তৃক জীববৈচিত্র্য, বন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা বিধানের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ প্রণীত হয়েছে। উক্ত আইনে কোনো বন্য প্রাণীকে আহত বা ক্ষতি করা শিকারের অন্তর্ভুক্ত। ঘটনাটি প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯ এর ১৬ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বনবিভাগের তথ্য মতে- মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় সব মিলিয়ে হাতির মালিক আছেন চব্বিশ জন। অথচ এই চব্বিশ জন হাতি মালিকের মধ্যে লাইসেন্স আছে বারো জনের। দশ জনেরই হাতি সংরক্ষণ বা রাখার লাইসেন্স নেই। দুইজন হাতি মালিকের লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় আছে।
আর যাদের কাছে হাতি রাখার লাইসেন্স নেই তারা আইন অমান্য করেই হাতি সংরক্ষণ করছেন।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৩৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ধারা ২৪ এর অধীনে লাইসেন্স সংগ্রহ না করে তফসিল ১ এ উল্লেখিত কোনো বাঘ বা হাতি হত্যা করলে, এটা জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে শাস্তির সর্বনিম্ন মেয়াদ ২ বছর ও সর্বোচ্চ মেয়াদ ৭ বছর কারাদণ্ড আর সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আইনের যথাযথ ব্যবহারের অভাবে অনেকাংশেই পার পেয়ে যাচ্ছেন হাতির লাইসেন্সহীন মালিকরাও। এমনকি যারা হাতিকে প্রত্যক্ষভাবে নির্যাতন করছেন তারাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে থেকে যাচ্ছেন আইনের নাগালের বাইরে। ফলে বন্ধ হচ্ছেনা হাতি প্রশিক্ষণের নামে এমন নির্মম কর্মযজ্ঞ।
হয় মরণ, নয় নির্যাতন
সারাবছর সার্কাসে, খেলা প্রদর্শনী কিংবা মালটানাসহ নানাবিধ কাজে হাতি ব্যবহার করে টাকা তুলছেন মাহুত। কিন্তু তা করতে গিয়ে যে কী পরিমাণ অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে এই নীরব প্রাণীটিকে, তার কেউ খেয়াল রাখছেনা। রাখলেও এতে কিছু যায় আসেনা তাদের।
আর তাছাড়া, হাতির বিচরণ ক্ষেত্রে মানুষ বসতি গড়ছে, বনবিভাগের জমিতে চাষাবাদও করছে। আইইউসিএনের ২০১৬ সালের হিসাব মতে, দেশে হাতি চলাচলের করিডোর ছিল ১২টি। উখিয়া-ঘুমধুম করিডোর, তুলাবাগান-পানেরছড়া, নাইক্ষ্যংছড়ি-রাজারকুল, ভোমারিয়াঘোনা-রাজঘাট, তুলাতলি-ঈদঘর, খন্তাখালি-মেধাকচ্ছপিয়া, ফাসিয়াখালী-চইড়াখালী, ফাসিয়াখালী-মানিকপুর, চুনতি-সাতগার, লালুটিয়া-বারদুয়ারা, সুখবিলাস-কোদালা ও নারিচ্ছা-কোদালা করিডোর। এই ১২টি করিডোরের মধ্যে তিনটি ধ্বংস হয়ে গেছে। (রাফিয়া তামান্না, ১৯ মে ২০২১)
তিনটি করিডোর বন্ধের পর, আরও করিডোর ও রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একসময় হয়তো সবগুলো রুটই বন্ধ হয়ে যাবে।
আগে পাহাড়ে হাতির খাবারের কোন অভাব ছিল না। কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার কারণে জুমের ফসলও কমে গেছে। হাতির বিচরণক্ষেত্রও কমে গেছে এবং তাদের বাসযোগ্য স্থান তারা হারাচ্ছে। এ কারণে হাতির পাল মাঝে মাঝে খাবারের জন্য লোকালয়ে চলে আসছে এবং মানুষের উপর আক্রমণ করছে। মানুষও তখন হাতির উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। বিদ্যুতের শক দিয়ে বা গুলি করে তাদের মারছে। শেরপুর, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ভাড়াটে খুনি দিয়ে হাতি হত্যা করা হচ্ছে, এমনটাও উঠে এসেছে পত্রিকায়।
বাংলাদেশে বঙ্গবাহাদুর নামক একটি হাতির মৃত্যুর ঘটনা সারাদেশের মানুষের মনকে নাড়া দিয়েছিলো। ঠিক তেমনি বিশ্ববাসীর মনে নাড়া দিয়েছিলো গত বছর শ্রীলঙ্কায় বিষ দিয়ে ৭টি হাতি হত্যার ঘটনাটিও।
এই গত সপ্তাহেই ঢাকার উত্তরায় ট্রেনের ধাক্কায় একটি হাতির করুণ মৃত্যু হয়। হাতি মৃত্যুর এই রোল যেন থামছেই না!
২০০৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বছরে তিন থেকে চারটি হাতি হত্যা করা হয়েছে, ২০২০ সালে হত্যা করা হলো ১২টি। আর ২০২১ এ হাতির মৃত্যুর সংখ্যা ৩৩ এর বেশি। প্রতি তিনদিনে ১টি করে হাতি হত্যা করা হচ্ছে (শাহানা হুদা রঞ্জনা, ১৯মে ২০২৩)।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রতি বছর যে হারে হাতি কমছে, তাতে আগামী কয়েকবছর পর হাতি দেখতে পাওয়া দুস্কর হয়ে দাঁড়াবে। হয়তো হাতির অস্তিত্বও থাকবে না। এশিয়ায় আছে মাত্র আর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার হাতি। গত দশ বছরে সারা বিশ্বে ৬২ ভাগ হাতি কমেছে।
অথচ, একটা সময় হাতি সংগ্রহ করাই ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। আর এখন সেই হাতিকে রাজকীয় কায়দায় লালন পালন দূরে থাক, তার জীবনের নিশ্চয়তাও দিতে ব্যর্থ মানুষ। একসময় যে ছিল রাজার সাথী, আজ সে পথের ভিখারি। হয় মৃত্যু নয় ভিক্ষা করে বাঁচা, এ-ই তাদের পরিণতি!