সামনের কঠিন সময় মোকাবিলায় যে ৭ উপায়ে নিজেকে ও দলকে প্রস্তুত করবেন
বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে একটি বিজনেস টিমকে কিংবা একজন বিজনেস লিডারকে প্রতিনিয়ত প্রচণ্ড চাপের মুখোমুখি হতে হয়। এতে করে নিজের ব্যক্তিগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে। একইসাথে প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
তবে একটি বিজনেস টিম কিংবা একজন বিজনেস লিডার সামনের কঠিন সময় মোকাবেলায় দক্ষতা বৃদ্ধিতে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারে। এক্ষেত্রে স্টার্টআপ প্রফেশনালের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্টিন জেডউইলিং উদ্যোক্তা ও বিজনেস লিডারদের জন্য বেশ কয়েকটি গাইডলাইন দিয়েছেন।
১. দলের সদস্যদের সাথে নিয়মিত ব্যক্তিগত যোগাযোগ
ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় একজন লিডারকে বিজনেস টিমের সদস্যদের বিশ্বাস ও সম্মান অর্জন করতে হবে। আর এটার জন্য প্রয়োজন ব্যক্তিগত কথোপকথন। কমান্ড চেইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে এটি অর্জন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে অন্যরা লিডারের সাথে নিজ থেকে যোগাযোগ করবে; এমনটা ভাবলেও চলবে না।
একইসাথে বর্তমানে অফিসগুলো হাইব্রিড মডেলে স্থানান্তরিত হচ্ছে। অর্থাৎ অফলাইনে কাজ করার পাশাপাশি অনেকে শুধু অনলাইনেও কাজ করছেন। অনলাইনে কাজ করা কর্মীদের সাথে যেহেতু সরাসরি মেশার সুযোগ কম, সেক্ষেত্রে ফোন কিংবা জুমের মাধ্যমে ব্যক্তিগত যোগাযোগ তৈরি প্রয়োজনীয়। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই লিডারকে নিজ উদ্যোগে যোগাযোগ শুরু করতে হবে।
২. দলের প্রতি শান্ত থাকা ও ইতিবাচকতা প্রদর্শন
ব্যবসায়িক কঠিন সব মুহূর্তে দলের সদস্যরা সাধারণত বেশ চাপে থাকে। এক্ষেত্রে একজন লিডারকে নিজের কৌশল ও দৃষ্টিভঙ্গি বারবার দলের প্রতি তুলে ধরতে হবে। একইসাথে দলের সাথে প্রচুর অনানুষ্ঠানিক এবং আনুষ্ঠানিক আলোচনা করতে হবে। এছাড়াও দলের সাথে গুজব কিংবা নেতিবাচক তথ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রেও ইতস্তত করা যাবে না।
একজন লিডার ও রোল মডেল হিসেবে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দলের প্রতি বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন লিডার কী বলছে তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেটা ঠিক কোন ভঙ্গিতে বলছেন। এক্ষেত্রে নিজের বডি ল্যাঙ্গুয়েজের উন্নতি ঘটাতে অন্যদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
৩. বিপরীত দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া
শুধু ইতিবাচক কথা শুনলেই হবে না। বরং ভিন্নধর্মী মতামত ও নেতিবাচক সম্ভবনা নিয়েও ভাবতে হবে, আলোচনা করতে হবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিকল্প বিষয়গুলোকেও বিবেচনায় আনতে হবে।
ক্ষেত্রবিশেষে একটি দলে নির্দিষ্ট মাত্রায় মতবিরোধ ভালো ফল আনতে পারে। এক্ষেত্রে একজন লিডারকে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে। ভালো, মন্দ সকল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
৪. সহানুভূতি প্রদর্শন এবং সক্রিয়ভাবে কর্মীদের মতামত চাওয়া
অন্যর আবেগের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কর্মীদের নিজেদের মতামতকে প্রকাশ করতে পারার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এমনটা হলে দলের কর্মীরা বেশ ভালো অবদান রাখতে পারবেন। এক্ষেত্রে লিডারের অন্যের ব্যক্তিগত সমস্যা ও বিজনেস আইডিয়া শুনতে পারার মতো গুণ দেখে কর্মীরা অভিভূত হবে।
টিমের একজন সদস্যের সাথে যোগাযোগ করার সময় তার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। সেটি বিবেচনা করে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে কথা বলতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে যে, ব্যক্তির মেজাজ, আচরণ বা চিন্তাভাবনা পূর্ব অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
৫. সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ও সম্মিলিত বাস্তবায়ন
সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে কথায় ও কাজে নিজের লিডারশিপ দক্ষতা দেখাতে হবে। এতে করে দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে এবং সদস্যরাও লিডারকে অনুসরণ করবে। কার্যকরী পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং সেখানে দলের সকলকে যুক্ত করতে হবে। এতে করে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া যাবে এবং সহজে সমস্যার সমাধান করা যাবে।
৬. ছোট ছোট সফলতা উপভোগ ও পুরষ্কার প্রদান
দলের মধ্যে এমন একটা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে যেখানে সকলে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ও সফলতা অর্জনে চেষ্টা করবে। দলের কেউ যদি সৎ উদ্দেশ্যে কাজ করতে যেয়ে ভুলও করে তবে কোনো শাস্তি প্রদান করা হবে না। সফলতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পুরষ্কার প্রদানের মাধ্যমে প্রকাশ্যে স্বীকৃতি দিতে হবে। অনেকেই ভেবে থাকেন হয়তো এক্ষেত্রে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। তবে এমন ধারণা সঠিক নয়। চাইলে কম বাজেটেও ভালো উপহার দেওয়া যেতে পারে।
৭. বিশ্বস্ত ক্রেতাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা
গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হয়, সম্পৃক্ত থাকতে হয়। বিশেষ করে এই ক্রেতারা প্রতিষ্ঠান থেকে ঠিক কী চাইছে সেটা খুঁজে বের করতে হয়। ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে প্রতিকূলতা থাকবেই। তবে সেটির জন্য ক্রেতাকে ভুক্তভোগী করা যাবে না।
নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে অহমিকার পরিচয় দেওয়া যাবে না। নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে বরং বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। এমনকি নিজের দল থেকেও পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।