তুষারের মাইক্রোগ্রিনস: জমি ছাড়াই উৎপাদন করা ‘সুপারফুড’!
১৯৮০ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় শেফদের হাত ধরে উদ্ভাবিত হয় নতুন এক চমক। এই শেফরা খাবার পরিবেশনের আগে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজাতেন। প্রচলিত সজ্জার বদলে একটু ভিন্নভাবে পরিবেশনের এই পদ্ধতি মুগ্ধ করতে থাকে গ্রাহকদেরও। ক্রেতাদের মাঝে আগ্রহ তৈরির পাশাপাশি ক্যালিফোর্নিয়ার অলিতে-গলিতে এই নিয়ে মানুষের মাঝে বাড়তে থাকে আগ্রহ। এমনকি সেখানকার গবেষণার অন্যতম বিষয়বস্তুও হয়ে দাঁড়ায় এটি।
ক্যালিফোর্নিয়ার রেস্তোরাঁর এই শেফরা পরিবেশনের জন্য খাবার সাজাতেন ছোট ছোট কিছু চারাগাছ দিয়ে। এইসব চারাগাছ হতো বিভিন্ন রং, স্বাদ ও গন্ধযুক্ত। এতে খাবার পরিবেশনে যেমন প্রকাশ পেত নতুনত্ব, তেমনি সৌন্দর্য বেড়ে হতো দ্বিগুণ। এই নিয়ে সাড়া পড়ে যায় চারপাশে। নব্বই দশকের মাঝামাঝি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় মানুষের ঘরে্র আঙিনায়ও শোভা পেতে শুরু করে এটি। শীঘ্রই এর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অঞ্চলে। শেফদের দ্বারা থালাভর্তি খাবার সজ্জিত করতে ব্যবহৃত এইসব বর্ণিল চারাগাছকে ডাকা হয় 'মাইক্রোগ্রিনস' নামে।
বাংলাদেশে যেভাবে শুরু
সম্প্রতি এই মাইক্রোগ্রিনসের জনপ্রিয়তা পৌঁছে গেছে অনন্য উচ্চতায়। যুক্তরাষ্ট্রের এই চারাগাছ সেদেশের গণ্ডি পেরিয়ে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি জনপ্রিয় বাংলাদেশেও। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশের মানুষের এ সম্পর্কে বাড়তে থাকে জানাশোনাও। আর এই কাজ প্রথম থেকেই করে যাচ্ছেন যিনি, তিনি হলেন রিফাত খান তুষার।
মালয়েশিয়া থেকে কমিউনিকেশন ও মাল্টিমিডিয়া নিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছেন এই যুবক। বাড়ি যশোরের কদমতলীতে। কৃষি নিয়ে তার আগ্রহ ছিল অনেক আগেই। সে লক্ষ্যে বিগত চার বছর ধরে যুক্ত আছেন এই খাতে। কৃষি-সম্পর্কিত পুঁথিগত বিদ্যা নেই। কিন্তু এ-সংক্রান্ত যাবতীয় জ্ঞান আয়ত্ত করেছেন নিজ তাগিদে। স্বনামধন্য কৃষিবিদ এবং কৃষি গবেষকদের সাথে থেকে কাজ শিখেছেন। যথাযথভাবে কাজ করেছেনও। গতানুগতিক কৃষি থেকে বের হয়ে আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করেই কৃষি নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
আধুনিক মানুষ যখন সবুজায়ন বিনষ্ট করার খেলায় মগ্ন, শাকসবজি, ফলমূলে বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার করে যখন খাবার বিষাক্ত করে তোলা হচ্ছে খাবার, তখন এই যুবক মাঠে নেমেছেন খাবারের পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। এর সূত্র ধরে তিনি এবং তার সহকর্মী অনুপ কান্তি ঘোষ মিলিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চালু করেন ওয়াটার এন্ড প্ল্যান্ট (Water & Plant) নামের একটি গ্রুপ। 'নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন' এবং 'নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদন'—এই দুটি মূলমন্ত্র সামনে রেখে তিনি যাত্রা শুরু করেন। এই যাত্রায় প্রথমেই শামিল হয় মাইক্রোগ্রিনসের মতো পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা। মাইক্রোগ্রিনস সম্পর্কিত নানা বিষয় নিয়ে জানতে তার সঙ্গে কথা বলেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
২০২৩ সালের শুরুর দিকের কথা। বাংলাদেশের মানুষের কাছে মাইক্রোগ্রিনসের ব্যবহার জনপ্রিয় করে তোলার উদ্যোগ নেন তুষার। তাই প্রথমেই ক্রয়-বিক্রয়কেন্দ্রিক হিসাব না করে এ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেন। তিন মাস ধরে চলে এই কাজ। আস্তে-ধীরে এটি নিয়ে জানতে শুরু করে মানুষ। সাথে তৈরি হয় আগ্রহও। এর সূত্র ধরে ওই বছরের জুন থেকে মাইক্রোগ্রিনস উৎপাদন করতে প্যাকেজ আকারে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করার কাজ শুরু করেন তুষার। দুটি প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত হয় এতে। একটি ফ্যামিলি প্যাকেজ (১,৮৫০ টাকা), অন্যটি স্টুডেন্ট প্যাকেজ (৮৯০ টাকা)। ফ্যামিলি প্যাকেজে প্রতিদিন ২-৩ জন খেতে পারবে মাইক্রোগ্রিনস। একটি প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত সরঞ্জাম হলো: বীজ (৮-৯ ধরনের), স্প্রে, কোকোপিট, কাঁচি ও ফুড গ্রেড কন্টেইনার/ট্রে। প্যাকেজের বীজ দিয়ে ৩ মাস মাইক্রোগ্রিন উৎপাদন করে খাওয়া যাবে বলেও জানান তুষার। ৩ মাস পরে বীজ আর কোকোপিট কিনলে পুনরায় উৎপাদন করে খাওয়া যাবে এটি। একটি প্যাকেজ কিনে প্রতিদিন মাইক্রোগ্রিনস খেতে খরচ পড়ে ২-৩ টাকা।
এভাবে করে প্রতিদিন ৯৫০টি পরিবার প্রতিদিন তাদের মাধ্যমে নিজেরাই উৎপাদন করছে মাইক্রোগ্রিনস। সময়ের সাথে সাথে সে সংখ্যা বাড়বে বলেও জানান তুষার। তার দাবি, প্রায় ১০-১৫ লাখ মানুষ মাইক্রোগ্রিনস নিয়ে জেনেছে তাদের মাধ্যমেই।
তিনি বলেন, 'একটা সময় ছিল যখন আমাদের দাদি-নানিরা অঙ্কুরিত বীজ খেতেন। কিন্তু সেই বীজ থেকে বের হওয়া সদ্য চারাগাছই যে মাইক্রোগ্রিন, তা জানতেন না তারা। বাংলাদেশের মানুষজন এইসব চারাগাছকে মাইক্রোগ্রিন নামে ২০২৩ সাল থেকে জানলেও বাইরের দেশে যে প্রবাসীরা থাকেন তারা এটিকে আরও আগে থেকেই চেনেন।'
মাইক্রোগ্রিন কী?
মাইক্রোগ্রিন হচ্ছে কমবয়সি সবজি বা ভেষজ উদ্ভিদের চারা। অর্থাৎ অঙ্কুরোদগমের কয়েকদিন পর যখন বীজ থেকে কাণ্ড ও ছোট দুটি পাতা বের হয়, তখন গাছের এই অবস্থাকে মাইক্রোগ্রিন বলে অভিহিত করা হয়। সাধারণত ৭-১৪ দিন বয়সি ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের চারাগাছই মাইক্রোগ্রিন নামে পরিচিত। উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন হওয়ার কারণে 'সুপারফুড' বলেও এটিকে সম্বোধন করা হয়।
এই 'সুপারফুড' শুরুর দিকে কেবল খাবার গার্নিশিংয়ের জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করে। পরে গবেষণার মাধ্যমে বের হয়ে আসে এর নানা গুণাগুণের তথ্য। এর ফলে আগ্রহী হয়ে মানুষ তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাইক্রোগ্রিনস যুক্ত করতে শুরু করে। সরাসরি কাঁচা অবস্থায় বা রান্না করে—দুভাবেই খাওয়া যায় এটি।
নভোচারীদের খাদ্য তালিকায় মাইক্রোগ্রিনস
গোটা বিশ্বে পুষ্টিগুণে ভরপুর এই মাইক্রোগ্রিনের জনপ্রিয়তা বাড়ে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা পরিচালিত এক গবেষণার মাধমে। নভোচারীদের জন্য খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব প্রদান করে নাসা। এমনকি খাবার নির্বাচন করার আগে সেসবের পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষণাও করা হয়। এভাবে তাদের জন্য তৈরি হয় আলাদা একটি খাদ্য তালিকা।
নভোচারীদের খাবারে যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করতেই এমন বন্দোবস্ত। এই তালিকায় যুক্ত হয় মাইক্রোগ্রিনস। নাসা দীর্ঘদিন পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে আসছে এটি নিয়ে। গবেষণায় ইতিবাচক ফলাফল আসার পরে এই খাবার যুক্ত করা হয় নভোচারীদের খাদ্য তালিকায়।
মাইক্রোগ্রিন উৎপাদন একটি সহজ প্রক্রিয়া। নভোচারীরা চাইলে খুব সহজে মহাশূন্যে তৈরি করতে পারবেন এটি। পানিতে বীজ ভিজিয়ে টিস্যু পেপার ব্যবহার করেও তৈরি করা যায় মাইক্রোগ্রিন। অনেক খাবারের তুলনায় এর মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের শক্তির উৎস। তা এতটাই বেশি যে নাসা ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার বিজ্ঞানীরা মহাকাশ মিশনে নভোচারীদের জন্য তাজা খাবারের উৎস হিসেবে মাইক্রোগ্রিনসকেই প্রস্তাব করেন। এভাবে মহাকাশচারীদের জন্য তৈরি 'সুপারফুড'-এর তালিকায় স্থান করে নেয় মাইক্রোগ্রিনস।
উৎপাদন প্রক্রিয়া
অল্প পরিশ্রম, অল্প যত্ন এবং অল্প টাকাতেই উৎপাদন করা যায় মাইক্রোগ্রিনস। পদ্ধতিগতভাবে সহজ হওয়ার কারণে যেকোনো জায়গায়, যেকোনো স্থানের মানুষ উৎপাদন করতে পারবে এটি। বাড়ির ছাদ, বেলকনি, ছোট একটি পাত্র বা ট্রে—সবখানেই অল্প মাটি ভর্তি করে বা কোকোপিট ব্যবহার করেও তৈরি করা যাবে মাইক্রোগ্রিনস। তবে খেয়াল রাখতে হয় কাজটা নিরাপদভাবে হচ্ছে কি না।
এক্ষেত্রে দরকার মাইক্রোগ্রিন উৎপাদন প্রযুক্তি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা। এতে দক্ষতা তৈরি করা গেলে সহজেই করা যাবে এই কাজ। মাইক্রোগ্রিন উৎপাদন করার জন্য প্রথমে দরকার একটি জায়গা, পাত্র বা ট্রে। পাত্রে বা ট্রেতে মাটি বা কোকোপিট (নারকেলের খোসার গুঁড়া) প্রস্তুত করে নিতে হবে। এরপর পাত্র বা ট্রের ওপর ছড়িয়ে থাকা কোকোপিটের ওপর বীজ ছিটাতে হয়। সামান্য পানি স্প্রে করে ওপরে একটি ঢাকনা দিয়ে দুদিন অন্ধকারে রেখে দেওয়া হয়। এর মধ্যে পানি শুকিয়ে গেলে আবার স্প্রে করতে হবে। এরপর পাত্র বা ট্রের ওপর থেকে ঢাকনা নিয়ে নেওয়া হয়। আস্তে-ধীরে বীজগুলো অঙ্কুরিত হতে থাকে। অঙ্কুরিত বীজ আলোর খোঁজ করে বড় হতে থাকে। গাছের বয়স ৩-৪ দিন হলে আবার পানি স্প্রে করে সূর্যের আলো বা বাল্বের আলোতে রেখে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তীব্র সূর্যালোক না থাকলেও সমস্যা হয় না। স্বাভাবিক দিনের আলোতেই মাইক্রোগ্রিন উৎপাদন করা যায়।
এ সম্পর্কে তুষার বলেন, 'আপনার বাড়িতে যদি দিন এবং রাতের পার্থক্য নির্ণয় করা যায়, তবে সেখানেও মাইক্রোগ্রিন উৎপাদন করা সম্ভব।'
একই পদ্ধতি অনুসরণ করে বারবার মাইক্রোগ্রিন তৈরি করা সম্ভব হলেও একই মাটি বা কোকোপিট ব্যবহার করে বারবার উৎপাদন করা যাবে না। মাটির সাথে চারাগাছের গোড়া থেকে যায়। সেটা পচে মাটির সাথে মিশে যেতে সময় লাগে। বালতি বা কোনো পাত্রে কয়েকদিন রেখে দিলে সহজেই এই কাজ হয়। পরে সেই মাটির সাথে নতুন কোকোপিট মিশিয়ে আবার উৎপাদন করা যায় মাইক্রোগ্রিনস।
কেমন বীজে হবে মাইক্রোগ্রিন?
ঠিক কোন ধরনের বীজ ব্যবহার হয়ে থাকে মাইক্রোগ্রিনের জন্য, এই প্রশ্নের উত্তরে তুষার বলেন, 'মাইক্রোগ্রিনসের জন্য সবচেয়ে ভালো হয় যদি বীজটা নন-জিএমও হয়। এসব বীজের পুষ্টিগুণ বেশি থাকে এবং কোনোরূপ স্বাস্থ্যঝুঁকিও থাকে না।'
নন-জিএমও বীজ হলো সেসব বীজ যা প্রাকৃতিকভাবে যেমন থাকে, সেভাবেই সংগ্রহ করা হয়। অর্থাৎ অর্গানিক বা দেশীয় বীজ। এসব বীজ হাইব্রিড বীজের চেয়ে অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন হওয়ায় মাইক্রোগ্রিন করার ক্ষেত্রে এসবকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে সচরাচর এসব বীজ পাওয়া যায় না বললেই চলে। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে হাইব্রিড বীজের ব্যবহারই সর্বত্র লক্ষ্য করা যায়।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সব বীজের মাইক্রোগ্রিন স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। নাইটশেড গাছ, যেমন বেগুন, টমেটো, আলু, মরিচ ইত্যাদির বীজ মাইক্রোগ্রিন উৎপাদনের জন্য নিরাপদ নয়। এর অন্যতম কারণ হলো নাইটশেড বীজের মাইক্রোগ্রিনস বিষাক্ত হয়ে থাকে।
প্রায় ৮০-১০০ বীজের মাইক্রোগ্রিনস খাওয়ার উপযুক্ত হিসেবে স্বীকৃত। তবে বাংলাদেশে কেবল ৮-১০ ধরনের বীজের মাইক্রোগ্রিনস উৎপাদিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে জনপ্রিয় মাইক্রোগ্রিনস হলো; ধনে, লাল শাক, মুগডাল, মূলা, সরষে, ব্রকলি, বাধাকপি, কলমি, তরমুজ ও গাজর। তবে বীট, মৌরি, লাল বাঁধাকপি, ফুলকপি, মেথি, ছোলা, সূর্যমুখী ইত্যাদি বীজও ব্যবহৃত হয় মাইক্রোগ্রিন করার ক্ষেত্রে। প্রতিটি বীজের চারাগাছ বাড়ির আশেপাশে যেকোনো জায়গায় সহজেই জন্মানো এবং খাওয়া যেতে পারে।
তুষার বলেন, 'আমরা আরও সহজ করে এভাবে বলি, যেসব বীজের শাক খাওয়া যায়, সেসব বীজের মাইক্রোগ্রিনসও খাওয়া যায়। তবে সবক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য নয়।'
তবে শুরুর দিকে ক্যালিফোর্নিয়ায় কেবল কয়েকটি বীজেই সীমাবদ্ধ ছিল মাইক্রোগ্রিন উৎপাদন করার কাজ। তুলসি, বীট, সিলান্ট্রো ইত্যাদিই ছিলো প্রাথমিকভাবে মাইক্রোগ্রিন উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত বীজ। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে সে তালিকা। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে মাইক্রোগ্রিনের বীজ শিল্প সংস্থাও রয়েছে।
যেভাবে খাওয়া হয়
সারাবিশ্বে জনপ্রিয় এই মাইক্রোগ্রিন খাওয়ার জন্যও আছে আলাদা নিয়ম। সাধারণত সালাদ, স্যুপ, অমলেট, পিজ্জা, বার্গারে মিশিয়ে, রান্নার ওপর ছিটিয়ে দিয়ে বা ফ্রাই করে খাওয়া হয় এটি। তবে ফ্রাই করার ফলে পুষ্টিগুণ কমে যায়। কাঁচা অবস্থায় খেলে সর্বোচ্চ পুষ্টি নিশ্চিত হয়।
পুষ্টিবিদদের মতে, যেকোনো মাইক্রোগ্রিন মাত্র ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
ল্যাবএইড-এর গুলশান শাখায় কর্মরত পুষ্টিবিজ্ঞানী সামিয়া তাসনিম বলেন, 'সব বয়সি মানুষই খেতে পারবে এটি, তবে তা হবে পরিমিত। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় যদি কাঁচা খাওয়া হয়। রান্না করা হলে এটির জীবনীশক্তি হারিয়ে যায়, যেহেতু ভিটামিন এবং এনজাইম পানিতে দ্রবণীয়।'
খাওয়ার আগে কিছু নিয়ম মেনে চলার ওপর জোর দেন তিনি। যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয় এটি, সেক্ষেত্রে হজমে ব্যাঘাতও ঘটতে পারে। তাই ভালো হজমের জন্য খালি পেটে মাইক্রোগ্রিনস খাওয়া উত্তম। এক্ষেত্রে লাল এবং হলুদ মরিচ, গাজর ও অ্যাভোকাডোর মতো অন্যান্য তাজা সবজির সাথে এটি মিশিয়ে সবুজ সালাদ হিসেবে খেলে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যায় বলে জানান সামিয়া তাসনিম।
ভিটামিন এ, সি এবং ই-সহ ক্যালসিয়াম, আয়রন ও পটাসিয়াম, ভিটামিন এবং খনিজসমৃদ্ধ এই খাবার বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে রাখে অনন্য ভূমিকা। নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর এবং উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন এই খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস, ক্যান্সার প্রতিরোধ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণসহ শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়।
সাধারণত বীজ বপনের পর গড়ে ৭ দিনের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয় মাইক্রোগ্রিনস। তবে সব বীজের ক্ষেত্রে একই হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৭ দিন, কিছু ক্ষেত্রে ১০ দিন। তাই অনেকেই যথাযথ টাইম ফ্রেম হিসেবে ৭ থেকে ১৪ দিন ধরে নেন।
বর্তমানে পৃথিবীর নানা দেশে মাইক্রোগ্রিনস হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের খাবার। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের অন্যতম পছন্দের খাবার এটি। গবেষকদের মতে, এই খাবারের মূল্যমানের কারণে প্রায় সবার খাদ্যতালিকায় যুক্ত হবে মাইক্রোগ্রিনস। বাংলাদেশে এই নিয়ে মানুষকে সচেতন করার কারিগর তুষারও চান শহর কেন্দ্রিক জীবনযাপন যাদের, স্বাস্থ্য সচেতন যারা কিন্তু জমি নেই, ছাদ নেই—এমন মানুষ যাতে নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদন করে পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারে।
তুষার বলেন, 'এমন একটা সময় আসবে যখন খাবার উৎপাদনের জন্য জমির সংকট দেখা দেবে। সে সময়ে থাকবে না মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যও। সেজন্য দরকার কীভাবে অল্প জমি, অল্প মাটি ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়। মাইক্রোগ্রিনসের মাধ্যমেই শুরু হলো সে যাত্রার সূচনা।'