মুহাম্মাদ তারিক সাইফুল্লাহ: বাংলাদেশ থেকে লাস ভেগাসে কাজ করা গেম আর্টিস্টের গল্প
'তুমি কেন চারুকলায় ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছো না?'
কার্টুনিস্ট আহসান হাবীবের একটি কথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল মুহাম্মাদ তারিক সাইফুল্লাহর জীবনের মোড়। রবিনহুড থেকে শুরু করে থান্ডার ক্যাটস, সাথে উডি উডপেকার– ছুটির দিনে বসে দেখা কার্টুনগুলো যে একসময় জীবন ও জীবিকার সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে, সে কথা কখনো কল্পনাতেই আসেনি তার। ছোটবেলা থেকে অবশ্য কার্টুন আঁকার সুপ্ত বাসনা মনের মধ্যে ছিল। তাই তো যে কার্টুন দেখতেন, পেনসিল নিয়ে ঘষাঘষি করে সেটিই এঁকে ফেলতেন খাতায়।
শুরুটা কার্টুন দিয়ে হলেও বর্তমানে গেম আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত মুহাম্মাদ তারিক সাইফুল্লাহ। দেশে বসেই যিনি কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন লাস ভেগাসের গেমিং স্টুডিওতে।
নব্বইয়ের দশকে যাদের বেড়ে ওঠা, তাদের শৈশব বা কৈশোরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বিভিন্ন কার্টুন। উডি উডপেকার, সামুরাই এক্স, জুমানজি, রবিনহুড কিংবা থান্ডার ক্যাটসের হাত ধরে ছোট থেকে বড় হয়েছেন অনেকে। তারিকও তার ব্যতিক্রম নন। কার্টুন আঁকার হাতেখড়ি হয়েছিল তখনই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও নিজের মতো আঁকতেন তখন।
সুযোগ পেলেই তারিক চলে যেতেন লাইব্রেরিতে। কমিকস টিনটিন এবং ডিজনি কার্টুনের বই দেখে অনুকরণ করে আঁকার চেষ্টা করতেন। অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন বাংলা কমিকসের প্রাণপুরুষ- নন্টে ফন্টে, বাটুল দ্য গ্রেট, হাঁদা-ভোঁদাসহ বিখ্যাত সব চরিত্রের স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথও।
দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন তারিকের পরিচয় হয় কার্টুন ম্যাগাজিন উন্মাদের প্রকাশক এবং সম্পাদক আহসান হাবীবের সাথে। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব উৎসাহ দিতে থাকেন চারুকলায় ভর্তির জন্য। পরীক্ষা দিয়ে সুযোগও পেয়ে যান ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগে পড়ার। পাশাপাশি চলতে থাকে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় কার্টুন আঁকা।
উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত তারিকের পাঠ মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ছিল। কিছু বিপত্তি থাকলেও কার্টুন আঁকা থেকে কেউ টলাতে পারেনি তাকে। পরিবার থেকেও ভালোই সমর্থন পেয়েছেন তারিক। প্রথমদিকে কিছুটা আপত্তি থাকলেও চারুকলায় ভর্তির পর তাকে বাধা দেননি কেউই।
শুরু হয়েছিল কার্টুন দিয়ে
পত্রিকায় কার্টুন আঁকতে গিয়েই বিভিন্ন ছবি আঁকার সফটওয়্যারের প্রতি তারিকের আগ্রহ জন্মাতে শুরু করে। ২০০৩-২০০৪ সালের দিককার কথা। ইন্টারনেট অতটা সহজলভ্য ছিল না তখন। বিভিন্ন সাইবার ক্যাফেতে ঘুরে ঘুরে তারিক চালিয়ে যেতেন সফটওয়্যার শেখার কাজ। নিজের চেষ্টায় শেখেন খুঁটিনাটি।
তারিক বলেন, "আর্ট রিলেটেড যে সফটওয়্যারগুলো আছে, সেগুলো আমি ঘাটাঘাটি করতাম। পাশাপাশি থ্রিডি সম্পর্কে হালকা কিছু জ্ঞান ছিল। যদিও পুরোপুরি জানতাম না। একটা বিষয় শিখতে গিয়ে দেখা গেলো, আরও দশটা বিষয় শিখে ফেলেছি। তখন আসলে ইউটিউব বা স্পিড ইন্টারনেট ছিল না। নীলক্ষেত থেকে বই কিনে বা সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে ইন্টারনেট থেকে টিউটোরিয়াল প্রিন্ট করে নিতাম। বাসায় ফিরে চর্চা করতাম।"
একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে আর্কেড গেমিং দোকান। সেসময় কয়েক কয়েনের বিনিময়েই পাড়ার মোড়ের আর্কেড মেশিনের দোকানে খেলা যেত বাহারি রকমের গেম। বন্ধুরা মিলে দলবেঁধে চলে যেতেন সেসব দোকানে। খেলতে গিয়ে 'কার্টুনিস্ট' তারিকের মনে জন্মায় গেম তৈরির আগ্রহ। বন্ধুরা মিলে ছক কষলেন, 'নিজেরাই গেম তৈরি করলে কেমন হয়?' শুরু হয় তারিকের নতুন যাত্রা।
অতঃপর কার্টুন থেকে মোবাইল গেম
তারিকের লক্ষ্য এখন স্থির। ঠিক করলেন, মোবাইলের গেম তৈরির মাধ্যমে শুরু করবেন নতুন ক্যারিয়ার। ক্যাজুয়াল গেম থেকে হাইপার ক্যাজুয়াল এরপর মাল্টি প্ল্যাটফর্ম গেম– সব অঙ্গনের গেমই তৈরি করেছেন তারিক। তবে আগ্রহ এবং পছন্দের জায়গা থেকে ক্যাজুয়াল গেমই শীর্ষে রয়েছে।
ক্যাজুয়াল গেমই বেশিরভাগ সময়ে দর্শককে মোবাইলের স্ক্রিনে আটকে রাখে। এ ধরনের গেমের নিয়মকানুন তুলনামূলক সহজ হওয়ায় পছন্দের তালিকায়ও থাকে উপরে। অপরদিকে, মাল্টি প্ল্যাটফর্ম গেম বলতে বোঝায় যেগুলো ব্রাউজার, মোবাইল এবং কম্পিউটার সব জায়গাতেই খেলা যায়।
তারিক সাইফুল্লাহ গেম আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জনপ্রিয় গেম 'মুক্তিক্যাম্প'-এ। কৌশলভিত্তিক এই খেলাতে মূলত পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াকু বাঙালীদের লড়াই দেখানো হয়েছে। আকর্ষণীয় গ্রাফিক্সের কারণে এই খেলাটি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল দ্রুতই।
এই গেমটির শুরুতে দেখা যায়, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পরিত্যক্ত একটি গ্রামে কয়েকজন মুক্তিকামী বাঙালি ক্যাম্প বানাতে কঠোর পরিশ্রম করছেন। ক্যাম্পে আশপাশের গ্রামের লোকজনকে যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার থেকে শুরু করে রোগমুক্তির জন্য ওষুধ সবই মজুদ করা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে পাকিস্তানি হানাদার নিধনের পরিকল্পনা। একেবারে সাধারণ মানুষ কীভাবে প্রশিক্ষণ পেয়ে পাকিস্তানি আর্মিদের পরাজিত করে, তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই গেমে।
তাছাড়া, তারিকের তৈরি আরেকটি পছন্দের অ্যাপ জিতো.অনলাইন। এটি মূলত একটি হাইপার ক্যাজুয়াল গেম প্ল্যাটফর্ম। রাইজ আপ ল্যাবের আওতায় প্রতিষ্ঠিত এই গেমটি জনপ্রিয়তা পায় অনেক বেশি।
গেম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক মজার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন তারিক। এমনই এক অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তারিক উল্লেখ করেন এক বন্ধুর কথা, যে নিজেও গেমের সাথে যুক্ত ছিল। "২০১৫ সালের কথা। সে সময় ফ্রুট নিনজা নামের একটি গেম অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যেখানে দেখা যায়, স্ক্রিনের উপরে ফ্রুট পড়তে থাকে এবং হাত দিয়ে সেগুলো কাটতে হয়। যে যত বেশি কাটতে পারে, তার স্কোর তত বেশি হয়। আমার এক বন্ধু এই গেম নিয়ে এতোটাই অ্যাডিক্টেড হয়ে গিয়েছিল যে একবার তার বাসায় গিয়ে দেখি, সে ছুরি ছাড়াই আঙ্গুল দিয়ে তরমুজ কাটার চেষ্টা করছে!", হাসতে হাসতে বললেন তারিক।
বাংলাদেশ থেকে লাস ভেগাস
তারিকের মতে, বাংলাদেশের গেমিং ইন্ডাস্ট্রি অপেক্ষাকৃত নবীন। তাই এখানকার বেশিরভাগ গ্রাহকই বিদেশি। সেই সূত্রে ২০০৮ সাল থেকেই বিদেশিদের সাথে কাজের সুযোগ পেয়েছেন তারিক।
"যখন গেম নিয়ে কাজ করা শুরু করি, তখন কোনো প্রতিষ্ঠান গেম বানাবে সেই কালচার শুরু হয়নি আমাদের এখানে। শুরু হয়েছে কয়েক বছর হলো। কয়েকজন হয়তো চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ থেকে। বিদেশি ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করতাম বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো থেকে। সেখান থেকে তাদের প্রয়োজন পূরণ করতাম," বলেন তিনি।
২০০৯ সাল থেকে সুইডিশ প্রতিষ্ঠান ফানরক মিডিয়াতে কম্পিউটার গ্রাফিক্স আর্টিস্ট (সিজি আর্টিস্ট) হিসেবে কাজ শুরু করেন তারিক। প্রায় দুই বছরের মতো কাজ করেন সেখানে। ব্রাউজার গেম তৈরি করতেন তখন। "আপনি কখনো খেলেছেন কীনা জানি না। ফেসবুকে একসময় গেমের ট্রেন্ড ছিল। সার্ফিং, ক্যান্ডি ক্রাশ খেলার চল ছিল। এগুলোকে বলা হতো ব্রাউজার গেম," বলেন তিনি।
এরমধ্যে প্রচুর বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে তারিকের। ২০২১ সালে সিনিয়র গেম আর্টিস্ট হিসেবে যোগ দেন 'রাইজআপ ল্যাব' কোম্পানিতে। বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশে গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠান নিজেদের জায়গা ধরে রাখতে পেরেছে, তাদের মধ্যে রাইজআপ ল্যাব অন্যতম। বিগত ১৩ বছর ধরে তারা ইউনিসেফ বাংলাদেশ, বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন, ইউএনডিপি, ইউএসএআইডি, ডব্লিউএইচওসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেছে। এখানে কাজ করতে এসে তারিকের সৌভাগ্য হয় লাস ভেগাসের গেমিং স্টুডিওর সাথে কাজ করার।
তারিক বলেন, "রাইজ আপ ল্যাবের সাথে যখন আমি কাজ করা শুরু করি, তখন তারা বিশ্বের বড় বড় মোবাইল গেম কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করতো। প্রথমে আমি মুরকা গেমসের সাথে কাজ করলাম, এটা রাশিয়ান কোম্পানি। তাদের সাথে দীর্ঘদিন আমরা ক্যাজুয়াল গেম নিয়ে কাজ করেছি। এরপর আমরা লাস ভেগাসের স্যান্ডস গ্রুপের সাথে চুক্তিবদ্ধ হই। বর্তমানে রাইজআপ ল্যাবের মাধ্যমে আমি স্যান্ডস গ্রুপের লাস ভেগাসের শাখার সাথে কাজ করে যাচ্ছি।"
টুডি অ্যানিমেশন থেকে থ্রিডি অ্যানিমেশনে যাত্রা
নিজের পছন্দের জায়গা থেকে বেরিয়ে বরাবর কাজ করতে ভালোবাসেন তারিক। তাতে নতুন কিছু শেখা যায় এবং জ্ঞান বাড়ে বলেই তার বিশ্বাস। কিন্তু নতুনকে আপন করতে গিয়ে কম হ্যাপা সামলাতে হয়নি তারিককে। এক গাল হেসে বলেন টুডি অ্যানিমেশন থেকে থ্রিডি অ্যানিমেশনে যাত্রার গল্প।
"টুডি প্ল্যাটফর্ম এবং থ্রিডি প্ল্যাটফর্ম দুটো সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা কাগজে যে ছবি আঁকি সেখান থেকে টুডি অ্যানিমেশন করা যায়। এটা অনেকটা আর্ট বেসড। আবার থ্রিডি অ্যানিমেশনের কাজ অনেকটা টেকনিক্যাল। কম্পিউটারে বসে করতে হয়। থ্রিডিতেও কিন্তু ক্যারেক্টার বিল্ড করার জন্য আঁকতে হয়।"
"আমরা দীর্ঘদিন গেমের কাজ করার ক্ষেত্রে টুডি প্ল্যাটফর্মেই কাজ করেছি। এরপর আস্তে আস্তে মোবাইলের ডিভাইস, ব্রাউজার, কম্পিউটার যখন উন্নতমানের হতে শুরু করলো, তখন থ্রিডি মাধ্যম গেমিং এর সাথে যুক্ত হলো। টুডি থেকে থ্রিডির যে বদল, সেই সময়ে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। তখন আমাকে উতরে যেতে সাহায্য করে মাইন্ডফিশার গেমস ইনকর্পোরেটেড প্রতিষ্ঠান।"
"এখানে আমি 'মুক্তিক্যাম্প' গেমটি তৈরি করি। তাদের সাথে কাজ করতে গিয়ে থ্রিডি ভালোভাবে শিখে যাই। মুক্তিক্যাম্প গেমটি ভীষণ আলোড়ন তৈরি করেছিল তখন", বলেন তারিক।
'বাংলাদেশে গেম নিয়ে সারভাইভ অনেকেই করতে পারেননি'
বাংলাদেশের গেমিং ইন্ডাস্ট্রি এখনো পরিপূর্ণভাবে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি বলে মনে করেন তারিক। তিনি বলেন, "বড় বড় কোম্পানি ছাড়া আসলে গেম নিয়ে ব্যবসা করা অনেকটা জুয়া খেলার মতো। যে গেমটা নিয়ে কাজ করবেন, সেটা আসলেই হিট করবে কি–না বা মানুষ খেলবে কি–না, এটা ভাগ্যের ব্যাপার।"
"অ্যাংরি বার্ড গেম সম্পর্কে তো নিশ্চয়ই জানেন। রোভিও এন্টারটেইনমেন্ট এই গেমটি তৈরি করেছিল। তাদের ৩১ নাম্বার গেম ছিল অ্যাংরি বার্ড। ৩০ নাম্বার গেম পর্যন্ত তারা ফেইল্ড করেছে। অ্যাংরি বার্ড হিট করার পর ওদের প্রতিষ্ঠান একটা ভালো অবস্থানে যেতে সক্ষম হয়," যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশে গেম ইন্ডাস্ট্রি ঠিকঠাক প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার কারণ হিসেবে তারিক উল্লেখ করেন বিনিয়োগকারীদের উদাসীনতার কথা। তারিক বলেন, "বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের কাছে লোনের জন্য গেলে পাওয়া সহজ হয় না। যদি না কোনো বড় ব্যবসা থাকে। গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন ইনভেস্ট করার সাথে সাথে কাপড় তৈরি হয়ে যায়, বিক্রি হয়ে যায় এবং বিনিয়োগকারীরাও তাদের লভ্যাংশ পেয়ে যায়– গেমিং ইন্ডাস্ট্রি এমন নয়। এই মনোভাবের কারণে বাংলাদেশের গেমিং ইন্ডাস্ট্রি এখনো তৈরি হতে পারেনি।"
"এখানে গেম নিয়ে সারভাইভ করা কষ্টকর। অনেকেই চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু করতে পারেননি। এটা একটু ধৈর্যের ব্যাপার। অনেক সংগ্রামের পর এখানে ইনভেস্টমেন্ট আসে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পেরেছে।"
'কাজ শিখে গেম আর্টে আসতে হবে'
যারা কাজ শিখে গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে আসে, তাদেরই টিকে থাকা সহজ হয় বলে মনে করেন তারিক। তাই এখানে কাজ করতে হলে সবচেয়ে বেশি দরকার কাজের প্রতি ভালোবাসা এবং অদম্য জেদ। নবীনদের জন্য পরামর্শ হিসেবে তারিক বলেন, "অনেকেই এই জায়গাকে কেবল আয়ের উৎস মনে করেন। গেমিং ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু এমন না। বাইরের ভালো ভালো আর্টিস্ট কী কাজ করছেন, সেই সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। নিজেকে সেভাবে লেভেল আপ করতে হবে।"
পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারিক। যুক্ত করেছেন, গেমের পাশাপাশি গেম ইঞ্জিন নিয়েও জ্ঞান থাকার কথা। তারিক বলেন, "আগে গেম যখন তৈরি হতো বাংলাদেশে, তখন ডেভেলপাররা প্রোগ্রামিং করে তৈরি করতেন। আলাদা কোনো গেম ইঞ্জিনে তৈরি করতেন না। অ্যাপলের জন্য যদি কাজ করা লাগতো, সেক্ষেত্রে কোকোস টুডি নামে প্রোগ্রামিং দিয়ে কাজ করতেন।"
"পরবর্তী সময়ে ইউনিটি থ্রিডি, আনরিয়েল গেম ইঞ্জিন যখন আসে, আমাদের কাজের পরিধি আরও বাড়লো। সেইসাথে জানার জায়গাও বেড়েছে। তাই গেম নিয়ে কাজ করতে হলে গেম ইঞ্জিন সম্পর্কে আগে জানতে হবে। কোনো থ্রিডি মডেল একটা গেমের অ্যাসেট হিসেবে কীভাবে ব্যবহৃত হয়, সেটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত জেনে রাখা জরুরি। ইউটিউবে খুঁজলেই এসব তথ্য এখন পাওয়া যায়। সেখানে অনেক বড় বড় গেম আর্টিস্ট আছেন, যাদের চ্যানেল ফলো করলে গাইডলাইন পাওয়া যাবে।"
নিজের মনের মতো গেম তৈরির স্বপ্ন দেখেন তারিক। গেমের মাধ্যমে শৈশবকে ফিরিয়ে দেওয়ার বাসনা আছে তার। খসড়া পরিকল্পনা অবশ্য সেরে ফেলেছেন। এখন বাকি স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা।
তারিক বলেন, "নিজের মতো কিছু গেম তৈরি করতে চাই, যেটা আসলে মানুষকে আটকে রাখবে। ছোটবেলায় বিকেল হলেই যেমন মাঠে দৌঁড়ে যেতাম, গোল্লাছুট- ছোঁয়াছুয়ি খেলতাম, সেসব গেম ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে নিয়ে আসতে চাই।"