ভারতীয় টিকটকের প্রেতাত্মা: একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ নিষিদ্ধ হলে কী ঘটে
টিকটক একসময় ভারতে অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযগমাধ্যম অ্যাপ ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের কার্যক্রম নিষিদ্ধ বা বিক্রির নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে করা আবেদন ফেডারেল আদালত বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে আপিলে হেরে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধের পথে টিকটক। যুক্তরাষ্ট্রে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ নিষিদ্ধ হলে তার প্রভাব কি হবে, তা ভারতের সামগ্রিক চিত্র থেকেই জানা যেতে পারে।
চার বছর আগে ভারত ছিল টিকটকের সবচেয়ে বড় বাজার। অ্যাপটি ২০০ মিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারীর কল্যাণে সমৃদ্ধ উপসংস্কৃতি এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য কখনো কখনো জীবন পরিবর্তনকারী সুযোগ নিয়ে ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল। টিকটককে তখনো ভারতে অপ্রতিরোধ্য মনে হচ্ছিল, যতক্ষণ না ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনা চরম হিংসাত্মক রূপ নেয়।
সীমান্ত সংঘর্ষের পর ২০২০ সালের ২৯ জুন ভারত সরকার টিকটককে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এক ধাক্কায় টিকটক বিলীন হয়ে যায়। তবে ভারতের টিকটক ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট ও ভিডিওগুলো এখনও অনলাইনে রয়েছে। একসময়ে দেশটিতে সাংস্কৃতিক মহীরূহ হয়ে ওঠা অ্যাপটির অতীত স্মৃতি যেন এসব কন্টেন্ট।
কিছু দৃষ্টিকোণ থেকে, যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ হলে যা ঘটতে পারে, এটি তার একটি পূর্বাভাস হতে পারে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি আইন সই করেন এবং এটির জন্য শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে টিকটককে নিষিদ্ধ হতে পারে। দীর্ঘদিনের হুমকি ও ব্যর্থ আইন প্রণয়নের পর এটি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
এই আইনে টিকটক-এর মালিক প্রতিষ্ঠান বাইটডান্সকে আগামী নয় মাসের মধ্যে অ্যাপটির মালিকানা বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার পর আরও তিন মাসের গ্রেস পিরিয়ড থাকবে অথবা দেশটিতে টিকটক নিষিদ্ধ হতে পারে।
বাইটডান্স জানায়, তাদের টিকটক বিক্রি করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে ৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আপিল কোর্ট কোম্পানির আইনটি বাতিল করার আবেদনের বিরোধিতা করেছে। প্ল্যাটফর্মটি ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অব্যবহারযোগ্য হয়ে যাবে। তবে কিছু বিশ্লেষক ধারণা করছেন, মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতে যেতে পারে।
এরকম একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ নিষিদ্ধ করা আমেরিকার প্রযুক্তি ইতিহাসে একটি অভূতপূর্ব মুহূর্ত হতে পারে। যদিও বর্তমান আদালতের লড়াই টিকটকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে রেখেছে। তবে ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, একটি বড় দেশ যখন টিকটককে তার নাগরিকদের স্মার্টফোন থেকে মুছে ফেললে কী ঘটতে পারে।
ভারত টিকটক নিষিদ্ধ করা একমাত্র দেশ নয়। ২০২৩ সালের নভেম্বরে নেপালও টিকটক নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয় এবং পাকিস্তান ২০২০ থেকে একাধিক সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের ১৫০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী যখন অ্যাপটি নিয়ে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে রয়েছে, তখন ভারতের টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার গল্প থেকে দেখা যায়, ব্যবহারকারীরা দ্রুত মানিয়ে নেয়। কিন্তু এটাও প্রমাণিত হয়, যখন টিকটক হারিয়ে যায়, তখন সেটির সংস্কৃতি অনেকাংশেই চলে যায়।
টিকটক বন্ধ হওয়ার আগে মুম্বাই ভিত্তিক চলচ্চিত্র সমালোচক সুচরিতা তেয়াগীর অ্যাকাউন্টে ১১ হাজার ফলোয়ার ছিল এবং তার কিছু ভিডিও মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ পেয়েছিল।
সুচরিতা বলেন, "টিকটক ছিল বিশাল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ একত্রিত হচ্ছিল, নাচছিল, নাটক সাজাচ্ছিল, পাহাড়ি অঞ্চলের ছোট্ট শহরে তাদের বাড়ির কাজকর্ম সম্পর্কে পোস্ট করছিল।"
তিনি বলেন, "এটা ছিল এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে হঠাৎ করে অনেক মানুষ সেই এক্সপোজার পেয়েছিল, যা তারা আগে কখনো পায়নি, কিন্তু তখন সেটা সম্ভব হয়েছিল।"
এটি একটি বিশেষ ঘটনা ছিল, কারণ টিকটকের অ্যালগরিদম গ্রামীণ ভারতীয় ব্যবহারকারীদের জন্য সুযোগ তৈরি করেছিল। তারা অন্যান্য অ্যাপে যা করতে পারতেন না, সেখানে তারা টিকটকে দর্শকদের আকর্ষণ করতে এবং তারকা পর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
দিল্লি ভিত্তিক প্রযুক্তি লেখক ও বিশ্লেষক প্রশান্ত রায় বলেন, "এটা কন্টেন্ট তৈরির জন্য প্রথমবারের মতো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল।"
তিনি বলেন, "আমরা দেখেছিলাম অনেক গ্রামীণ মানুষ, যারা সামাজিক-অর্থনৈতিক দিক থেকে খুব নিচে অবস্থান করতেন, কখনো ভাবতেও পারতেন না যে তারা ফলোয়ার পাবেন বা তার মাধ্যমে টাকা রোজগার করবেন। আর টিকটকের ডিসকভারি অ্যালগরিদম তাদের কাছে সেটা পৌঁছে দিত। হাইপার-লোকাল ভিডিওর ক্ষেত্রে এরকম আর কিছুই ছিল না।"
যুক্তরাষ্ট্রেও টিকটক সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার বিশেষ সম্প্রদায়গুলো টিকটক কন্টেন্ট বানিয়ে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে এবং অসংখ্য ছোট কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এবং ব্যবসা জীবিকার জন্য এই অ্যাপের ওপর নির্ভর করে। এটি এমন একটি সফলতা, যা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে সহজে পাওয়া যায় না। উদাহরণস্বরূপ, ইনস্টাগ্রাম সাধারণত বেশি ফলোয়ার আছে এমন অ্যাকাউন্ট-এর জন্য বেশি উপযোগী। কিন্তু টিকটক নিয়মিত ব্যবহারকারীদের প্রতিদিন কন্টেন্ট পোস্ট করার জন্য বেশি উৎসাহিত করে।
ভারতে টিকটক যখন বন্ধ হয়, তখন সরকার আরও ৫৮টি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে। এর মধ্যে কিছু অ্যাপ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে, যেমন ফ্যাশন শপিং অ্যাপ শেইন। সময়ের সাথে ভারত আরও শতাধিক চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে। তবে সাম্প্রতিক আলোচনা অনুসারে, শেইনের ভারতীয় সংস্করণ আবার অনলাইনে ফিরে এসেছে।
একই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে ঘটতে পারে। নতুন আইনটি একটি নজির স্থাপন করে এবং মার্কিন সরকারের জন্য অন্যান্য চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করার একটি পথ তৈরি করে। রাজনীতিবিদরা টিকটকের বিরুদ্ধে গোপনীয়তা এবং জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলার কথা বলে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, তা অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
এবং যখন একটি জনপ্রিয় অ্যাপ বন্ধ হয়ে যায়, তখন অন্যরা সেই শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করতে পারে। "যত তাড়াতাড়ি টিকটক নিষিদ্ধ হল, এটি একটি বহু বিলিয়ন ডলারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে," বলেন নিখিল পাওয়া, ভারতীয় প্রযুক্তি নীতি বিশ্লেষক এবং মিডিয়ানামা নিউজ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা। "একাধিক ভারতীয় স্টার্ট-আপ সেই শূন্যস্থান পূরণের জন্য উদ্বোধন বা দিক পরিবর্তন করেছে।"
যখন একটি জনপ্রিয় অ্যাপ বন্ধ হয়ে যায়, তখন অন্যরা সেই শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করতে পারে। ভারতীয় প্রযুক্তি নীতি বিশ্লেষক এবং মিডিয়ানামা নিউজ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা নিখিল পাওয়া বলেন, "যখনই টিকটক নিষিদ্ধ হল, তখনই এটি একটি বহু বিলিয়ন ডলারের ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।"
তিনি বলেন, "একাধিক ভারতীয় স্টার্ট-আপ সেই শূন্যস্থান পূরণের জন্য চালু করা হয়েছে বা দিক পরিবর্তন করেছে।"
কয়েক মাস ধরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে চিংগারি, মজ এবং এমএক্স টাকা টাক-এর মতো নতুন কিছু ভারতীয় সামাজিক মাধ্যম কোম্পানির ব্যাপক আলোচনা ছিল। কিছু প্ল্যাটফর্ম প্রাথমিক সফলতা অর্জন করেছিল, পুরোনো টিকটক তারকাদের তাদের প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল এবং বিনিয়োগ ও সরকারি সহায়তা লাভ করেছিল। এটি ভারতীয় সামাজিক বাজারকে নানা কোণে বিভক্ত করে দিয়েছিল কারণ নতুন অ্যাপগুলো আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছিল। তবে টিকটক পরবর্তী সোনালি যুগ বেশিদিন টেকেনি।
২০২০ সালের আগস্টে টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে ইনস্টাগ্রাম রিলস নামে একটি শর্ট-ফর্ম ভিডিও ফিড চালু করে। ইউটিউবও এক মাস পরে শটস নামে টিকটকের মতো ফিচার চালু করে। ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউব ইতোমধ্যে ভারতে প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং নতুন স্টার্ট-আপগুলোর জন্য আর কোনো সুযোগ ছিল না।
ভারতীয় অধিকার গোষ্ঠী ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক প্রতীক ওয়াঘরে বলেন, "টিকটকের বিকল্প নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছিল, তবে বেশিরভাগ শেষ পর্যন্ত বিদায় নিয়েছ। শেষমেশ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছিল সম্ভবত ইনস্টাগ্রাম।"
ভারতীয় টিকটক-এর বড় বড় কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার পর খুব তাড়াতাড়ি মেটা ও গুগলের অ্যাপে চলে গিয়েছিলেন এবং অনেকেই সেখানেও একই ধরনের সফলতা অর্জন করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ, গীত নামক একজন ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার [তার প্রথম নাম দিয়ে পরিচিত] টিকটকে "আমেরিকান ইংলিশ" শেখানো এবং জীবনভিত্তিক পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ তারকা হয়ে উঠেছিলেন। টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার সময় তার তিনটি অ্যাকাউন্টে ১০ মিলিয়ন ফলোয়ার ছিল।
২০২০ সালে বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গীত তার ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তবে চার বছর পর তিনি ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ফলোয়ার সংগ্রহ করেছেন।
তবে যেসব ব্যবহারকারী এবং বিশেষজ্ঞদের সাথে বিবিসি কথা বলেছে, তারা বলছেন, টিকটক পরবর্তী পরিবর্তনের মধ্যকার সময়ে কিছু জিনিস হারিয়ে গেছে। ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউব টিকটকের ট্র্যাফিক নিয়ে নিলেও, সেগুলো ভারতীয় টিকটকের সেই অনুভূতি পুনরুদ্ধার করতে পারেনি।
নিখিল পাওয়া বলেন, "টিকটক কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য একেবারেই ভিন্ন ধরনের ব্যবহারিক ভিত্তি তৈরি করেছিল। কৃষক, ইটভাটার শ্রমিক এবং ছোট শহরের মানুষেরা টিকটকে ভিডিও আপলোড করত। ইউটিউব শটস এবং ইনস্টাগ্রাম রিলসে তেমন কিছু দেখা যায় না। টিকটকের ডিসকভারি মেকানিজম ছিল অনেক ভিন্ন।"
যদি টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হয়, তবে ভারতের মতো আমেরিকার সামাজিক মিডিয়া বাজারও একই পথ অনুসরণ করতে পারে। টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার চার বছর পর, ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউব ইতোমধ্যে শর্ট ভিডিওর জন্য নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমনকি লিঙ্কডইনও টিকটক স্টাইল ভিডিও ফিড পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে।
টিকটকের প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রমাণ করেছে, তাদের সফলতা পেতে টিকটকের সংস্কৃতির পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন নেই। এটি সম্ভব এবং যদি তা না হয় তবে খুব সম্ভবত, আমেরিকার হাইপার-লোকাল এবং নিছ কনটেন্ট যেমন ভারত থেকে হারিয়ে গিয়েছিল, ঠিক তেমনই হারিয়ে যাবে। আসলে, যুক্তরাষ্ট্রে এর সাংস্কৃতিক প্রভাব আরও ব্যাপক হতে পারে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী প্রায় এক তৃতীয়াংশ আমেরিকান টিকটক থেকে তথ্য নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ১৭০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে, যেটি দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি।
গীত বলেন, "যখন ভারত টিকটক নিষিদ্ধ করেছিল, তখন অ্যাপটি এত বড় ছিল না। এটি গত কয়েক বছরে একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবে পরিণত হয়েছে। আমি মনে করি, এখন আমেরিকায় নিষিদ্ধ হলে তার প্রভাব অনেক বেশি হবে।"
টিকটক যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আইনের বিরুদ্ধে একটি আইনি লড়াই চালানোর ঘোষণা দিয়েছে, যা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাবে। ভারতে টিকটকের একই ধরনের আইনি চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ ছিল, কিন্তু তারা তা করেনি।
"চীনা কোম্পানির ভারত সরকার বিরুদ্ধে আদালতে না যাওয়ার পেছনে যৌক্তিক কারণ রয়েছে। আমি মনে করি, তারা আদালতকে আত্রা (চীনা প্রতিষ্ঠান) খুব সহানুভূতিশীল অবস্থায় পাবে না।"
যদি টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হয়, তবে ভারতের মতো আমেরিকার সামাজিক মিডিয়া বাজারও একই পথ অনুসরণ করতে পারে। টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার চার বছর পর, ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউব ইতোমধ্যে শর্ট ভিডিওর জন্য নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমনকি লিঙ্কডইনও টিকটক স্টাইল ভিডিও ফিড পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে।
টিকটকের প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রমাণ করেছে, তাদের সফলতা পেতে টিকটকের সংস্কৃতির পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন নেই। এটি সম্ভব এবং যদি তা না হয় তবে খুব সম্ভবত, আমেরিকার হাইপার-লোকাল এবং নিশ কনটেন্ট যেমন ভারত থেকে হারিয়ে গিয়েছিল, ঠিক তেমনই হারিয়ে যাবে। আসলে, যুক্তরাষ্ট্রে এর সাংস্কৃতিক প্রভাব আরও ব্যাপক হতে পারে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী প্রায় এক তৃতীয়াংশ আমেরিকান টিকটক থেকে তথ্য নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ১৭০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে, যেটি দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি।
গীত বলেন, "যখন ভারত টিকটক নিষিদ্ধ করেছিল, তখন অ্যাপটি এত বড় ছিল না। এটি গত কয়েক বছরে একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবে পরিণত হয়েছে। আমি মনে করি, এখন আমেরিকায় নিষিদ্ধ হলে তার প্রভাব অনেক বেশি হবে।"
টিকটক যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আইনের বিরুদ্ধে একটি আইনি লড়াই চালানোর ঘোষণা দিয়েছে, যা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাবে। ভারতে টিকটকের একই ধরনের আইনি চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ ছিল, কিন্তু তারা তা করেনি।
"চীনা কোম্পানির ভারত সরকার বিরুদ্ধে আদালতে না যাওয়ার পেছনে যৌক্তিক কারণ রয়েছে। আমি মনে করি, তারা (চীনা প্রতিষ্ঠান) আদালতকে খুব সহানুভূতিশীল অবস্থায় পাবে না।"
ভারতে টিকটক নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর হয়েছিল । তবে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক যে আইনি লড়াই শুরু করতে যাচ্ছে, তা বছরের পর বছর ধরে আইন কার্যকরের প্রক্রিয়া আটকে রাখতে পারে এবং আদালতে এই আইন টিকে থাকবে কি না, তাও নিশ্চিত নয়।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ হলে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা অনেক বেশি। "আমি মনে করি, চীনের পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না," বলেন পাওয়া।
ভারতে টিকটক নিষিদ্ধ করার পর চীন সমালোচনা করেছিল, তবে কোনো সরাসরি প্রতিশোধ নেয়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এমন সৌভাগ্য নাও হতে পারে।
ভারতে টিকটক নিষিদ্ধের বিষয়ে চীনের প্রতিক্রিয়া না দেখানোর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, ভারতের প্রযুক্তি শিল্প চীনে কার্যত অনুপস্থিত। অন্যদিকে, আমেরিকার প্রযুক্তি শিল্প চীনে প্রতিশোধমূলক আক্রমণের জন্য প্রচুর সুযোগ তৈরি করে। চীন ইতোমধ্যে "ডিলিট আমেরিকা" উদ্যোগ শুরু করেছে, যেখানে মার্কিন প্রযুক্তি সরিয়ে দেশের নিজস্ব বিকল্প প্রযুক্তি স্থাপন করার প্রচেষ্টা চলছে। টিকটক নিষিদ্ধ হলে এই প্রকল্প আরও তীব্র হতে পারে।
তেয়াগী বলেন, "যখন টিকটক নিষিদ্ধ হলো, ঘটনাটি হুট করে ঘটে। আমার জন্য এটা বড় বিষয় ছিল না, কারণ আমি শুধু আমার অন্য কাজগুলো প্রচারের জন্য অ্যাপটি ব্যবহার করতাম। তবে অনেকের কাছে এটি অদ্ভুত ও অন্যায় মনে হয়েছিল, বিশেষ করে যারা টিকটক থেকে অর্থ উপার্জন করছিলেন বা ব্র্যান্ড চুক্তি পেয়েছিলেন।"
টিকটক নিষিদ্ধ হওয়া তেয়াগীর জীবিকায় প্রভাব ফেলেনি, তবে এটি তাকে তার অ্যাকাউন্ট থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল। পরে, যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন, তখন একটি চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা হয়।
"যখন আমি আমেরিকা গেলাম, আমি অবাক হয়ে দেখলাম, আমার প্রোফাইল এখনও সক্রিয়," বলেন তেয়াগী। এটি যেন সময়ে ফিরে যাওয়ার মতো ছিল। তিনি কয়েকটি ভিডিও পোস্টও করেন। যদিও তার বেশিরভাগ ভারতীয় ফলোয়ার তা দেখতে পারেননি, কিন্তু বিদেশে থাকা ভারতীয়দের কাছ থেকে কিছু সাড়া পেয়েছিলেন।
তেয়াগী বলেন, "এই কয়েক মিলিয়ন অ্যাকাউন্ট এখনও সক্রিয়। টিকটক কেন এগুলো রেখে দিয়েছে, তা ভাবতে অবাক লাগে। হয়ত তারা আশা করছে, ভারত তাদের ফিরে আসার সুযোগ দেবে।"
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়