জাহাঙ্গীরনগর: ৭০০ একরের গ্রাফিতির ক্যানভাস
দেওয়ালেরও আছে কান। তাই অনেক সময় কথা হয় ফিসফিসিয়ে। যদি কেউ শুনে ফেলে! কিন্তু কখনও কি শুনেছেন দেওয়াল নিজেও কথা বলতে পারে? প্রকাশ করতে পারে অভিব্যক্তি!
ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও আপনার ধারণা বদলে যাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে। রাজধানী ঢাকা থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমির ফাঁকে ফাঁকে দাঁড়িয়ে আছে লাল ইটের দালান; আর সেই দালানের গায়ে রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠেছে নানানভাবের দেওয়ালচিত্র ও গ্রাফিতি। দেওয়ালগুলোর দিকে তাকাতেই মনে হবে এরা যেন জীবন্ত, এখুনি কথা বলে উঠবে!
কখনও প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে, কখনও বা পোস্টারে ছেয়ে থাকা ক্যাম্পাসের অস্পষ্ট দেওয়ালগুলোকে অলঙ্কৃত করতেই দেওয়ালচিত্রগুলো এঁকেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের (৪২ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ মামুর। জাবি ক্যাম্পাসের বেশিরভাগ দেওয়াল জীবন্ত হয়ে উঠেছে তার হাতের রঙ তুলির আঁচড়েই।
২০১৩ সালে জাহাঙ্গীরনগরে পা রাখার পর মামুর দেখলেন, ক্যাম্পাসের ঝকঝকে লাল ইটের দেওয়ালগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্লোগান, চিকা, বিসিএস কোচিংয়ের পোস্টার, লোকাল হেকিমি দাওয়াখানা, পড়াইতে চাই, মেস ভাড়াসহ নানান বিজ্ঞাপন-পোস্টারে ছেয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, স্প্রে রঙ দিয়ে নিজের ব্যাচের নাম লিখেও দেওয়াল নষ্ট করতেন শিক্ষার্থীরা; যা চারুকলার শিক্ষার্থী হিসেবে মামুরকে ব্যথিত করে তোলে।
মামুর বলেন, "আমি চারুকলার শিক্ষার্থী। তাই ভাবলাম, লাল দেওয়ালে ছবি আঁকলে তো মন্দ হয় না!"
"যদিও প্রশাসনিকভাবে ক্যাম্পাসের দেওয়ালে কিছু লেখা বা আঁকার নিয়ম নেই, তারপরও যখন দেখলাম দেওয়ালগুলো এভাবে দৃষ্টিকটূ বানিয়ে ফেলা হচ্ছে, ভাবলাম কিছু তো একটা করা দরকার- যেগুলো অন্তত চিকা মারা, পোস্টার সাঁটানো, কিংবা স্প্রে রঙ দিয়ে ব্যাচের নাম লিখে দেওয়াল নোংরা করার চেয়ে ভালো!"
যেই ভাবনা, সেই কাজ। শুরু হয়ে গেলো মামুর ও তার সতীর্থ শিল্পীদের দেওয়াল রাঙানোর প্রকল্প।
জাবির প্রান্তিক গেইট দিয়ে ঢোকার সময়ই চোখে পড়বে অদ্ভূত প্রাণির আদলে বানানো একটি যাত্রীছাউনি। বিসিএস কোচিং সেন্টারের পোস্টারে ছেয়ে থাকা ছাউনিটির গায়ে রঙ ছিটানোর আগে অবশ্য এটি দেখতে এমন ছিল না। শিল্পী মামুর ও তার দল কাঠামোটিতে যেন এনে দিয়েছেন প্রাণ।
দেওয়ালচিত্র বা গ্রাফিতির ধারণাটি কিন্তু নতুন নয়। মানব সভ্যতার প্রাচীন যুগ থেকেই দেওয়ালচিত্রকে ভাবের আদান-প্রদান বা যোগাযোগের মাধ্যম কিংবা স্মৃতিস্মারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হাজার হাজার বছর পুরনো পিরামিডের গায়ের চিত্র দেখেই ধারণা করা যায়, কতোটা পুরনো হতে পারে গ্রাফিতির ইতিহাস। তবে, আধুনিককালে গ্রাফিতির ধারণাটি জনপ্রিয় হয়েছে সত্তর কিংবা আশির দশকে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সহ ইউরোপের বহু শিল্পোন্নত শহরে প্রতিবাদের একটি ধরন হিসেবে জনপ্রিয় হতে থাকে গ্রাফিতির ধারণা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুমতি ছাড়া দেওয়ালের এই আঁকিবুঁকিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রভাষক ধীমান সরকারের কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছিল, দেওয়ালচিত্রের ব্যাপারে জাবি প্রশাসনের কোনো বিধিনিষেধ আছে কিনা। তিনি জানান, এ ধরনের সৃষ্টিশীল কোনো কাজে শিক্ষার্থীদের কখনো বাধা দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তিনি বলেন, "জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা যেন সৃষ্টিশীলভাবে শিখতে ও বিকশিত হতে পারে, সেজন্য এ ব্যাপারে প্রশাসনের একটি প্রচ্ছন্ন সম্মতি আছে।"
"এগুলোকে এক প্রকার দেওয়ালচিত্র বলা যেতে পারে। আর গ্রাফিতির মাধ্যমে অনেক সময় সরকার বা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে কটাক্ষ করা হয়। কিন্তু জাবির দেওয়ালচিত্রে এ ধরনের কোনো ব্যাপার নেই। সেজন্য এটিকে প্রচ্ছন্ন অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে," আরও যোগ করেন তিনি।
সবকিছু মিলিয়ে জাবির দেওয়ালচিত্রগুলোতে নান্দনিক ব্যাপারটিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় বলেও জানান চারুকলা বিভাগের এই শিক্ষক।
শিল্পী মামুরও জানিয়েছেন, প্রশাসন থেকে তিনি কিংবা তার দলের কেউ কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হননি। বরং ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে সবখানেই একাধারে প্রশংসিত হয়েছে তাদের শিল্পকর্ম। এক একটি দেওয়ালচিত্র বানানোর পরের দিন রীতিমতো ছবি তোলার উৎসব লেগে যায় দেওয়ালগুলোর সামনে।
১৯৭০ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসের দেওয়ালে জায়গা করে নিয়েছে শিক্ষার্থীদের বানানো গ্রাফিতি। এ পর্যন্ত ঠিক কতোগুলো গ্রাফিতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বানানো হয়েছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও মামুর জানান, ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার পর পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে তিনি ও তার দল ৪৫ টিরও বেশি দেওয়ালচিত্র ও গ্রাফিতি বানিয়েছেন। এরমধ্যে অনেকগুলোর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে দেওয়ালে দেওয়ালে; আবার বেশ কয়েকটি শিল্পকর্ম পুরোরিই ধ্বংস হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষক ধীমান সরকার বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দেওয়ালচিত্র বানিয়েছে। অনেক চিত্র যত্নের অভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে বিধায় এগুলোর সংখ্যার ব্যাপারে যথাযথ পরিসংখ্যান দেওয়া কঠিন। তবে, গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে জাহাঙ্গীরনগরের দেওয়ালচিত্রগুলো বিভিন্ন মহলে সুনাম কুড়াচ্ছে বলেও জানান তিনি।
পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা মিলবে নানানভাবের অসংখ্য দেওয়ালচিত্র বা গ্রাফিতির। কোনো যাত্রীছাউনিকে মনে হতে পারে এক খণ্ড গ্যালাক্সি, আবার রাস্তার ধার দিয়ে হাঁটার সময় চোখে পড়তে পারে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, স্বর্গের অপ্সরা কিংবা রবীন্দ্রনাথ।
গাছের ওপর থ্রিডি পেইন্টিং শিল্পী সোহাগ মিশ্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিনব কিছু করার আগ্রহ থেকেই গাছের ওপর থ্রিডি চিত্র এঁকেছেন তিনি। সালভাদর দালি ও বর্তমান সময়ে গ্রাফিতির জগতে সুপরিচিত শিল্পী বাঙ্কসির অনুরাগী সোহাগ মিশ্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের (৪৩তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী; বর্তমানে তিনি স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত।
সোহাগ বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর অনেক শিল্পীর শিল্প সম্পর্কে জানতে পারি। সবাই মোটামুটি তাদের নিজস্ব ধারা বা অভিনব ধারণাকে শিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। তাই আমারও মনে হলো, এইরকম কিছু আমি নিজেও করতে পারি কিনা।"
গাছের মতো অমসৃণ জায়গায় কীভাবে ছবি আঁকেন এমন প্রশ্নের জবাবে সোহাগ বলেন, "জাহাঙ্গীরনগরে কিছু কিছু গাছ আছে যেগুলো ক্যানভাসের মতই সমান এবং সুন্দর। এখানে ছবি আঁকতে সমস্যা হয়না। পুরো ক্যাম্পাসটাই গাছে পরিপূর্ণ। তাই আমি চিন্তা করে দেখলাম, এই গাছগুলোকেই ক্যানভাস হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা।"
গাছে যেই রঙ ব্যবহার করা হয়েছে তা দীর্ঘস্থায়ী বলে জানান সোহাগ। ফলে বৃষ্টি কিংবা বৈরী আবহাওয়াতে গ্রাফিতিগুলোর সহজে ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
প্রতিবাদও ফুটে উঠতে দেখা গেছে জাহাঙ্গীরনগরের দেওয়ালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বা যেকোনো জাতীয় ও অন্তর্জাতিক সমস্যার প্রতিবাদ জানাতে বিভিন্ন সময়ে গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে ক্যাম্পাসের দেওয়ালে দেওয়ালে। ১৯৮৭ সালের নভেম্বরে আলোকচিত্রী শহীদুল আলমের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল ক্যাম্পাসের একই দেওয়ালে দেশের ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের একাধিক রাজনৈতিক দলের স্বৈরাচার বিরোধী প্রতিবাদের গ্রাফিতি। দেশে বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছিল সেই ছবি।
এছাড়া, বরণীয় ব্যক্তিদের স্মরণেও বানানো হয়েছে বেশ কয়েকটি ম্যুরাল।
শৈল্পিক ও প্রতিবাদী এসব দেওয়ালচিত্রের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও গর্ববোধ করেন বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, "গ্রাফিতির ব্যাপারে জাবি অনন্য। অন্যান্য ক্যাম্পাসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, রাজনৈতিক পোস্টার হিসেবে দেওয়ালচিত্র বানানো হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ব্যাপারটিকে শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।"
পাঠকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এতো এতো গ্রাফিতি বা দেওয়ালচিত্র বানানোর টাকা শিক্ষার্থীরা কোথায় পান? এই প্রশ্নের জবাবে মামুর জানান, প্রথম দিকে কয়েকটি দেওয়ালচিত্র নিজেদের পকেটের টাকা দিয়েই এঁকেছিলেন তিনি ও তার সঙ্গীরা। তবে, কিছুদিনের মধ্যেই অর্থের অভাবে দেওয়ালে দেওয়ালে বন্ধ হয়ে যায় তাদের আঁকিবুঁকি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী তাদের পাশে দাঁড়ান। রঙ কিনে দেন। ক্যাম্পাসের সেই সিনিয়র বড়ভাইদের সমর্থনে আবারও এক এক করে দেওয়াল রাঙাতে শুরু করেন মামুর ও তার দল। চলছে এভাবেই...
তবে গাছে থ্রিডি পেইন্টিং শিল্পী সোহাগ জানান, তিনি তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের পকেটের টাকা দিয়েই। প্রতিটি রঙের কৌটার দাম ৫০০ টাকা। এই টাকার পুরোটা এবং এর সঙ্গে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের খরচ তিনি নিজেই বহন করেন।
সোহাগের ভাষ্যে, "ভোরের আলো ফোঁটার আগেই আমি কাজ শেষ করে চলে আসি। এক ধরনের নান্দনিক মূল্য থেকেই আমি নিজের পকেটের টাকা খরচ করে এগুলো করি। এখানে কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য বা আমার নিজস্ব কোনো আর্থিক বেনিফিট নেই।"
গাছের ওপর এক একটি গ্রাফিতি বানাতে কেমন খরচ হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমার কাছে শিল্পের কোনো আর্থিক মূল্য নেই।"
"পুরো ৭০০ একরের ক্যাম্পাসটাই আমার গ্যালারি, গাছগুলো ক্যানভাস, আর আমি শিল্পী। এভাবেই ক্যাম্পাসের গাছগুলো রাঙিয়ে দিতে চাই আমি", আরও যোগ করেন তিনি।
মামুর জানান, প্রথম দিকে অল্প কয়েকজন মিলে কাজ শুরু করলেও আস্তে আস্তে তাদের দল ভারী হতে থাকে। চারুকলা বিভাগের অপর্ণ অধিকারি সিক্ত (৪৫তম ব্যাচ), থিন জো মং (৪৭তম ব্যাচ), ফারজাদ দিহান (৪৭তম ব্যাচ), আবির আর্য (৪৮তম ব্যাচ), বিপিন চাকমা, জাকিয়া রহমান ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ও অন্যান্য বিভাগের আরও অনেকেই স্বেচ্ছায় জুটে গিয়েছেন তার দলে। একসঙ্গেই তারা রাঙিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেওয়াল। নির্দিষ্ট কোনো দল নয়, বরং স্বেচ্ছায় যারাই কাজ করতে চান তাদেরকে নিয়েই ক্যাম্পাসের দেওয়াল রাঙান মামুর ও তার সঙ্গীরা।
গ্রাফিতির আরেক শিল্পী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অর্পণ অধিকারি সিক্ত বলেন, শিল্পকে সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই গ্রাফিতি বানানোর দলে যোগ দিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর এ পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় তিনি কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০টি শিল্পকর্মে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী ফারজাদ দিহানও মামুরের সঙ্গী হয়ে রাঙিয়েছেন ক্যাম্পাসের কয়েকটি দেওয়াল। এক একটি দেওয়ালচিত্র বানাতে কতজনকে কাজ করতে হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এটি নির্ভর করে দেওয়ালের ওপর।
তিনি বলেন, "মাঝারি আকারের দেওয়াল রাঙাতে ৪ থেকে ৬ জন শিল্পীকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। তবে যদি ছোট কাজ হয় তাহলে দুইজনই যথেষ্ট।"
সাংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সারাবছরই চলতে থাকে কোনো না কোনো উৎসব। শীতকে বরণ করতে হিম উৎসব, বসন্ত বরণ উৎসব, নাট্যপার্বণ কিংবা বিভিন্ন সংগঠন আয়োজিত নানান উৎসব উপলক্ষ্যে দেওয়ালে আঁকা হয় থিমেটিক গ্রাফিতি। এছাড়া, নিজের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহে ক্যাম্পাসের দেওয়ালগুলোকে রাঙিয়ে তুলছেন মামুর, সোহাগ, অর্পণ, দিহান ও তাদের মতোই আরও কয়েকজন শিল্পী।
জনগণের স্বতস্ফূর্ত আবেগ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে গ্রাফিতি ও দেওয়ালচিত্রের যে ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে, তা সহজেই অনুভব করা যায় জাহাঙ্গীরনগরের দেওয়ালগুলোর দিকে তাকালে।
প্রভাষক ধীমান সরকার বলেন, "আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যায় প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যম হিসেবে গ্রাফিতির ব্যবহার হয়েছে এবং হচ্ছে। তাই সবসময় এটিকে আইন কানুনের মারপ্যাচে বাঁধা যায় না।"
"এটি শিল্পের এক ধরনের প্রকাশ, মত প্রকাশের মাধ্যম। তাই আমি মনে করি এটা বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হবে না। সামাজিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে এটিকে সংকুচিত করা যেতে পারে, তবে বন্ধ করা কিংবা একেবারে অবৈধ করে দেওয়াকে আমি যুক্তিযুক্ত মনে করি না," বলেন তিনি।