অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন অনুমোদন বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য সুখবর
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের উদ্ভাবিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
এদিকে ভারতে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহারের জন্য আবেদন করেছে সেরাম ইনস্টিটিউট। সেরাম ইনস্টিটিউটকে ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহার অনুমোদন দেয়ার জন্য আলোচনায় বসতে যাচ্ছে ভারতের জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাব্জেক্ট এক্সপার্ট কমিটি (এসইসি)।
সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশেও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই ভ্যাকসিনটি নিয়ে আসছে দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। গত মাসে সেরামের সাথে অক্সফোর্ডের ৩ কোটি ডোজ কিনে নেয়ার চুক্তি করেছে বেক্সিমকো। প্রাথমিক পর্যায়ে, প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ৬ মাসে ৩ কোটি ডোজ পাবে বাংলাদেশ।
বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, "এখন পর্যন্ত আমরা সিরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি করেছি। যুক্তরাজ্যে এ ভ্যাকসিনের অনুমোদনের ফলে আমাদের ভ্যাকসিন পাওয়ার সুযোগ হলো। যুক্তরাজ্যের বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্র বেশ উন্নত। যেহেতু দেশটির নাগরিকদের জন্য এ ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাই এটি আমাদের জন্যও নিরাপদ হবে বলে আশা করছি।"
বাংলাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগের ব্যাপারে ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, "আমাদের ভ্যাকসিন নীতি অনুযায়ী দেশে কোন ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হলে তার পরীক্ষার করতে হয় বা উন্নত কোন দেশের অনুমোদন লাগে। যুক্তরাজ্যে যেহেতু অনুমোদন দেয়া হয়েছে আমরাদের দেশেও এ ভ্যাকসিন জরুরি ব্যবহার অনুমোদনের আওতায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেতে দেরি হবে, একারণে তার আগে যুক্তরাজ্যের অনুমদনের ভিত্তিতে আমরা এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে পারি।"
যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের অনুমোদনের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়েছে। তবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন।
নিরাপদ টিকাদানের জন্য প্রয়োজন ভ্যাকসিনের যথাযথ সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ভ্যাকসিনের দাম ছাড়াও আরও একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো ভ্যাকসিনের সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন প্রায় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। অন্যদিকে, মডার্নার ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াল তাপমাত্রায়ই সংরক্ষণ করা সম্ভব। একারণেই সংরক্ষণের সুবিধা বিবেচনায় বাংলাদেশ ও তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর জন্য অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনই উপযোগী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক ডা. সাইয়েদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, "অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের দাম কম, এছাড়াও এটি ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। একারণেই এ ভ্যাকসিন আমাদের মত দেশের জন্য উপযোগী।"
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ছাড়াও কোভ্যাক্সের মাধ্যমেও ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন সরবরাহের লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই)-এর নেতৃত্বাধীন জোটই কোভ্যাক্স।
ডা. সাইয়েদুর রহমান এব্যাপারে বলেন, "অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সম্ভবত কোভ্যাক্সেও যাবে। তাই কোভ্যাক্সের মাধ্যমেও আমরা এ ভ্যাকসিন পেতে পারি। তবে প্রথম দিকে বেক্সিমকোর মাধ্যমে আমরা মাত্র ৩ কোটি ভ্যাকসিন পাবো, অর্থাৎ দেড় কোটি মানুষকে এ ভ্যাকসিন দিতে পারবো। তবে এটিও যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় তাহলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। বয়স্ক ও গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতায় ভোগা মানুষদের যদি প্রাথমিকভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হয় তাহলে মৃত্যুহার অনেকটা কমে যাবে।"