অনিয়ম প্রতিরোধে বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন
কেউ যদি বিশ্বের সর্বাধিক কর্মক্ষম কর্মী-সমৃদ্ধ কোনো প্রতিষ্ঠানের সন্ধান করে থাকেন, তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নাম সবার আগে উঠে আসবে।
বছরের পর বছর ধরে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২৪ ঘন্টার ডিউটি সাইকেল বা কর্মচক্রে কাজ করে আসছিলেন।
তবে অসাধারণ এই ২৪ ঘন্টা ভিত্তিক পরিষেবা কেবল কাগজে কলমে অর্থাৎ কর্মচারীদের রেকর্ড বইতেই সীমাবদ্ধ ছিল। প্রকৃতপক্ষে তারা ১২ ঘন্টা ওয়ার্কিং আওয়ারের সাথে ১২ ঘন্টার ওভারটাইম সুবিধা ভোগ করতেন।
এই পদ্ধতিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রায় সকল কর্মী তাদের নিয়মিত বেতনের দ্বিগুণ উপার্জন করতেন।
দীর্ঘদিন ধরেই অনৈতিক এই কর্মকাণ্ডকে তারা বৈধতার রূপ দিয়ে আসছিলেন। ফলে, বিমানকে প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছিল।
তবে ওভারটাইমের এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। বিমান ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ বেশ পুরোনো। টিকেট কাটা, বিমান রক্ষণাবেক্ষণ, খরিদ্দারিসহ বিভিন্ন পরিচালনাভিত্তিক কার্যক্রম নিয়েই বিমানের নিয়ম লঙ্ঘনের উদাহরণ আছে।
তবে সুখবর হচ্ছে যে, গত দেড় বছরে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে আমূল পরিবর্তন এসেছে।
ওভারটাইমকে বাস্তবিক রূপে আনা থেকে শুরু করে, টিকেট কাটার ক্ষেত্রে পূর্ণ অটোমেশন, সকল ডকুমেন্ট ও কাগজপত্রকে ই-ফাইলে রূপান্তরের মাধ্যমে অনিয়ম কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে খরিদ্দারি এবং টেন্ডার ব্যবস্থা নিয়ে আসার মাধ্যমে দুর্নীতি কমানোর উপায় খোঁজা হয়েছে। নতুন এসব ব্যবস্থা বিমানের ইতিবাচক এক রূপান্তরের ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
বাস্তবসম্মত ওভারটাইম
বিমানের স্থায়ী এবং অস্থায়ী প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কর্মী ২৪ ঘন্টার ওভারটাইম সুবিধা ভোগ করতে পারতেন।
প্রতি শিফটে একজন কর্মী ৮ ঘন্টার দায়িত্ব পালন করতেন। এর সাথে চার ঘন্টা বিশ্রামের সময়সহ ৮ ঘন্টার ওভারটাইম যুক্ত হত।
বিমান সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ছিল যেখানে ওভারটাইম কাজের মধ্যে বিশ্রামের সময় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২৪ ঘন্টার ওভারটাইম সুবিধা পেতে একজন কর্মীকে দৈনিক ভোর ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কাজ করতে হত। তবে বাস্তবে, কর্মীরা শিফট অনুযায়ী আট ঘন্টা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতেন। সেই সাথে ওভারটাইমের জন্য অতিরিক্ত দুই থেকে তিন ঘন্টা কাজ করলেই চলত। তবে, দাপ্তরিক রেকর্ডে ওভারটাইমের সময় আট ঘন্টা ধরে লিপিবদ্ধ করা হত।
একজন কর্মী যখন ওভারটাইমসহ ১৬ ঘন্টার কাজ করতেন, তখন সেটাকে ২৪ ঘন্টা ধরে হিসাব করা হত। এভাবেই তারা ওভারটাইমের সুবিধা ভোগ করে দ্বিগুণ উপার্জন করতেন।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো কর্মী যদি প্রতি ঘন্টার মাইনে স্বরূপ ১০০ টাকা করে পেতেন, ওভারটাইমের জন্য সংখ্যাটি দ্বিগুণে রূপান্তরিত হত।
প্রতি বছর ওভারটাইমের জন্য বিমানকে বাৎসরিক ৮৮ কোটি টাকা ব্যয় করতে হত। পরিমাণটি ছিল স্যালারির জন্য ব্যবহৃত মোট খরচের ৯ শতাংশ ।
বিমানের ব্যবস্থাপনা কমিটি দীর্ঘদিন ধরেই অস্বাভাবিক এই চর্চার পেছনে সমর্থন দিয়ে আসছিল।
তবে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোকাব্বির হোসেন আসার পর থেকে বদলের হাওয়া লাগল। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি ওভারটাইমকে বাস্তবসম্মত করে তুলতে কাজ শুরু করেন।
শেষ পর্যন্ত, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পরিবর্তিত হয় অতিরিক্ত কর্মঘন্টার অস্বাভাবিক সময়। ওভারটাইম কমিয়ে মাত্র চার ঘন্টা করা হয়।
মোকাব্বির হোসেন বলেন, শুধুমাত্র এই একটি পদক্ষেপেই বিমান মাসে চার কোটি টাকা থেকে বছরে ৫০ কোটি টাকা বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে।
বিমানে এ ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম দীর্ঘ সময় ধরেই চলে আসছিল। মোকাব্বির জানান, তার ব্যবস্থাপনা দল বিষয়টি চিহ্নিত করে ওভারটাইমকে বাস্তবসম্মত করার উদ্যোগ নেয়।
রক্ষণাবেক্ষণ ও খরিদ্দারি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন
বিমান কর্মীদের মধ্যে দুর্নীতির সবথেকে বড় উৎসটি ছিল এয়ারক্রাফট রক্ষণাবেক্ষণ ও বিভিন্ন পার্টসের কেনাকাটা।
উদাহরণস্বরূপ, বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস বিভাগের প্রধান একজন ইঞ্জিনিয়ারকে দুর্নীতির দায়ে অপসারণ করা হয়। তিনি একাই চড়া দামে পার্টস কেনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ৫৩ কোটি টাকার লোকসান করান। এছাড়াও তিনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদেশি সরবরাহকারীদের কাছে অর্ডার দাখিল করেছিলেন।
বিমান ঐ প্রধান ইঞ্জিনিয়ারের কাছ থেকে ৩৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবী করে।
এছাড়া, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ফুয়েল নজেল কেনা ও ঠিক করার নামে ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
২০১৯ সালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত এক তদন্তে প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসিং বিভাগে মোটা অংকের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়।
এরপর বিমান তাদের সার্ভিসিং এবং প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি বন্ধে রাতারাতি পরিবর্তন আনে।
বর্তমানে, রক্ষণাবেক্ষণ এবং খুচরা পার্টসের কেনাকাটার দায়িত্ব অরিজিনাল ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারারকে (ওইএম) দেওয়া হয়েছে।
যদি, প্রকৃত প্রস্তুতকারীরা প্রয়োজনীয় পার্টস সরবরাহে ব্যর্থ হয়, তাহলে টেন্ডার প্রক্রিয়া জারি হবে। এছাড়া, ওইএমের সাথে প্রতিষ্ঠানটি এয়ারক্রাফট ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি "পাওয়ার বাই আওয়ার" চুক্তি স্বাক্ষর করে।
প্রয়োজনীয় কর্মশক্তি এবং লজিস্টিক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, এর আগে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তৃতীয় পক্ষকে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে, রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বাড়তি খরচ এবং অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
মোটর ট্রান্সপোর্ট বিভাগের বাণিজ্যিক সেবাদান
নতুন সার্ভিস র্যাম্প, ওয়ার্ক স্টেশন, শিডিউল এবং ফুয়েল ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে বিমানের মোটর ট্রান্সপোর্ট (এমটি) বিভাগকে সার্ভিস সেন্টারে রূপান্তর করা হয়েছে। এছাড়া, বিভাগটি এখন বাণিজ্যিক সেবাদানেও সক্ষম।
বিমানের পরিবহন যানগুলো এর আগে বাইরে থেকে সারাই করানো হত। এখন এমটি বিভাগেই এসব সেবার সুযোগ পাওয়া যাবে।
এছাড়াও এখানে ডিপ ওয়াশিং, এসি সার্ভিসিং এবং মেইনটেন্যান্স সুবিধাও আছে।
অটোমেশন প্রক্রিয়া শুরু
ফাইল স্থানান্তরে সময়ক্ষেপন করা ছিল বিমান কর্মীদের দুর্নীতির আরেকটি উৎস।
উদাহরণস্বরূপ, অবসারপ্রাপ্ত কর্মীকে অবসর ভাতার জন্য ২৩টি ধাপ অতিক্রম করতে গিয়ে চূড়ান্ত দুর্ভোগ পোহাতে হত। ঘুষ ব্যতীত কোনো কাজ হত না।
২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে বিমানের সকল কার্যক্রম ই-ফাইলের মাধ্যমে পরিচালনা করা শুরু হয়।
এর মাধ্যমে নন-ভ্যালুযুক্ত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেই সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াও হয় ত্বরান্বিত।
২০২০ সালে, ৮৮ টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কাগজপত্র ব্যবস্থাপনায় ই-ফাইলের ব্যবহারে বিমান বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়।
অটোমেশন প্রক্রিয়ার ফলে অবসর ভাতার ২৩ টি ধাপ মাত্র তিনটি ধাপে নেমে এসেছে।
এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (সপ) প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োগ করা হয়েছে।
টিকিট বিক্রিতে পূর্ণ অটোমেশন
টিকেট ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়ালি চলার কারণে টিকেট নিয়ে অনিয়মের অভিযোগের কমতি ছিল না। প্রায়ই কৃত্রিম টিকেট সংকট সৃষ্টি করা হত। অনেক ক্ষেত্রে বিমান ফাঁকা অবস্থাতেই উড়াল দিত, কিন্তু যাত্রীরা টিকিট পেত না। টিকিট বিক্রির অনিয়মের কারণে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিল বিমান।
একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে দুর্নীতি অপসারণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে।
অনলাইন এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকেট বেচা শুরু হয়। টিকেট ব্যবস্থাপনায় পূর্ণ অটোমেশন আনার ফলে আয় বাড়ে বিমানের।
২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালের একই সময়ে বেড়ে যায় হজ্জ টিকেট বিক্রি। অটোমেশন প্রক্রিয়ার ফলে টিকেট বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়।
অন-টাইম পারফরম্যান্স
দেরীতে ফ্লাইট ছাড়ার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইসের ঝুলিতে বহু দুর্নাম জমা আছে। কিন্তু, বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট পারফরম্যান্স অবিশ্বাস্যভাবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে বিমানের অন-টাইম ফ্লাইট সেবা ৫০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। অথচ, আন্তর্জাতিকভাবে এই মান গড়ে ৮০ শতাংশ।
"দ্য পানচুয়ালিটি লিগ-২০১৯"- প্রতিবেদন অনুসারে, এশিয়া প্যাসিফিক এয়ারলাইনসের মধ্যে ৮৮.১১ শতাংশ অন-টাইম পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে হংকং এয়ারলাইন্সের নাম আছে শীর্ষে। অন্যদিকে, ২০১৮ সালে ৮১.৭০ শতাংশ অন-টাইম পারফরম্যান্স নিয়ে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের অবস্থান ছিল দশমে।
শিডিউল অনুযায়ী সময়ের ১৫ মিনিটের মাঝে ফ্লাইট উড্ডয়ন এবং অবতরণের ভিত্তিতে অন-টাইম পারফরম্যান্স হিসাব করা হয়।
অন-টাইম পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতে, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ৩০ মিনিট এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এক ঘন্টা আগে কাউন্টারে চেক-ইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১ মার্চ থেকে যাত্রীদের অটোমেটিক বোর্ডিং ব্যবস্থা চালু হয়।
সাফল্যের পেছনের গল্প
২০০৮ সালে ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিমান বাংলাদেশ করপোরেশন প্রতিষ্ঠান থেকে কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলস্বরূপ বেড়ে যায় দুর্নীতি ও অনিয়ম।
এর আগে সরকার উচ্চ বেতনে নির্বাহী পরিচালকদের নিয়োগ দিত। এমনকি দুইজন বিদেশিকেও কোম্পানির উন্নয়নের জন্য নিয়োগ করা হয়। কিন্তু, ব্যবস্থাপনা দলের অনিয়মে যুক্ত থাকার কারণে কোনো লাভ হয়নি।
উদাহরণ হিসেবে সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএম মোসাদ্দিক আহমেদের কথা বলা যায়। তিনি মাসিক ৮ লাখ টাকা বেতন ভোগ করতেন। দুর্নীতির অভিযোগে তাকেও অপসারণ করা হয়।
সাবেক বিদেশি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন জন স্টিলের মেয়াদকালে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুইটি বিমান ইজারা নেওয়ায় অনিয়মের কারণে বিমানকে ১,২০০ কোটি টাকার লোকসান গুণতে হয়। অথচ, কেভিন মাসে ২৫ লাখ টাকা মাসিক কমপেনসেশন হিসেবে পেতেন।
মোসাদ্দিক আহমেদকে অপসারণের পর তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মোকাব্বির হোসেনকে বিমানের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, মোকাব্বির হোসেন পুরো প্রতিষ্ঠানকে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার মাঝে নিয়ে আসেন। অথচ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিনি মাসিক প্রায় এক লাখ টাকার মতো বেতন পান।
মোকাব্বির বলেন, নিয়ম লঙ্ঘনই ছিল বিমানের দুর্নীতির প্রধান কারণ।
এখন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা উন্নত হয়েছে। ফলে, কমে গেছে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন অনিয়ম। লজিস্টিক সুবিধা এবং মানবসম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হয়েছে, বলেন তিনি।
তবে মহামারির কারণে, নতুন ব্যবস্থাপনার প্রতিফলন এখনো পুরোপুরি পাওয়া সম্ভব হয়নি বলে মন্তব্য করেন মোকাব্বির হোসেন।
প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠনের ফলাফল
কোভিড- ১৯ আঘাত হানার আগে, নতুন ব্যবস্থাপনায় বিমান অভূতপূর্ব ফলাফল দেখানো শুরু করেছিল। অন-টাইম পারফরম্যান্স, কাস্টমার সেবা, ব্যাগেজ ডেলিভারি, যাত্রী ও কার্গো রাজস্ব আয়, ফলন ও রাজস্ব ব্যবস্থাপন ইত্যাদি খাতে অসাধারণ পরিবর্তন এসেছিল।
করদানের পূর্বে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিমানের লাভের পরিমাণ ছিল ৪৮৩ কোটি টাকা। এ সময় গড় প্যাসেঞ্জার ইল্ড বেড়েছিল ৩ হাজার ১০০ টাকা। আগের বছর তুলনায় একই সময়ে এই হার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল।
তবে, কোভিড-১৯ এর কারণে নতুন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার সুফল পুরোপুরি লাভ করা সম্ভব হয়নি।
মহামারির সময়, ২০২০ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে বিমান এক হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এরপর আর প্রতিষ্ঠানটি কোভিড-১৯ পূর্ব প্রবৃদ্ধিতে ফিরতে পারেনি।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, বিমানের ব্যবস্থাপনা খাত বিভিন্ন আর্থিক এবং প্রায়োগিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এছাড়া নন-ভ্যালু যুক্ত এবং পরিচালনাভিত্তিক ব্যয় কমাতে উল্লেখিত উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়নও চলছে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৫৬৪ কোটি টাকার লোকসান গুণেছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের শেষে, কর প্রদানের পর প্রতিষ্ঠানটিকে ৮১ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।