আগস্টের মধ্যে কেনিয়ায় ওষুধ উৎপাদন শুরু করবে বাংলাদেশের স্কয়ার
বাংলাদেশের প্রথম ওষুধ কোম্পানি হিসাবে দেশের বাইরে ওষুধ উৎপাদন শুরু করছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কারখানার সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করেছে স্কয়ার ফার্মা। চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ বা আগষ্টের শুরুতে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন শুরু হবে।
এ কারখানায় ওষুধ উৎপাদন শুরুর মাধ্যমে কেনিয়াসহ পূর্ব আফ্রিকার ছয়টি দেশের ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বা সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধের বাজার ধরতে চায় তারা।
বুধবার একটি ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, 'কারখানায় ভবন, যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ অবকাঠামোগত সব কাজ শেষ হয়েছে। আজ (বুধবার) কেনিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে একটি বৈঠক রয়েছে। চলতি বছরের জুলাইয়ের মাঝামাঝি বা আগস্টে উৎপাদন শুরু করতে পারব'।
কোম্পানিটির কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২০ সালেই কারখানায় উৎপাদন শুরু করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে করোনার কারণে বেশ কিছুদিন অবকাঠামোর কাজ বন্ধ থাকায় সম্প্রতি তা শেষ হয়েছে। এখন ঐ দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই উৎপাদন শুরু হবে।
বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে দেশীয় কোন কোম্পানির বিদেশে মূলধন স্থানান্তরের সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে দেশীয় কোম্পানি বিদেশে মূলধন স্থানান্তর করতে পারে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ বেশ কিছু কোম্পানিকে শর্ত সাপেক্ষে বিদেশে কোম্পানি খোলা ও মূলধন স্থানান্তরের অনুমোদন দিয়েছে।
এর মধ্যে ডিবিএল গ্রুপের ইথিওপিয়ায় গার্মেন্টস কারখানা স্থাপন, কেনিয়ায় বিএসআরএমের ইস্পাত কারখানা নির্মাণ, মালয়েশিয়ায় রবিন টেক্সটাইল কিনে বিনিয়োগে করেছে আকিজ গ্রুপ।
স্কয়ার গ্রুপের কোম্পানি সচিব হাবিবুজ্জামান বলেন, 'স্কয়ারই প্রথম কোম্পানি, যারা বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে টাকা নিয়ে দেশের বাইরে বিনিয়োগ করেছে। এর ফলে দেশের ওষুধ খাতের নতুন একটি সম্ভাবনার দরজা খুলেছে'।
তিনি বলেন, 'তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসাবে আমরা বিনিয়োগের খবর স্টক এক্সচেঞ্জে দিয়েছি। উৎপাদন শুরু হলে তাও জানিয়ে দেয়া হবে। তবে আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ'।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ২০১৭ সালের ঘোষণা অনুযায়ী, কেনিয়ায় কারখানা স্থাপনের জন্য মোট ২ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে স্কয়ার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৪ টাকা ধরলে এই বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭০ কোটি টাকা বা ৮০ লাখ ডলার স্কয়ার ফার্মা নিজেই জোগান দিচ্ছে। বাকি অর্থ ঋণ নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের ৪২টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে স্কয়ার। এর মধ্যে এশিয়ার ১৯টি দেশ, আফ্রিকার ১৩টি, ওশেনিয়া অঞ্চলের ৩টি, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ৬টি এবং যুক্তরাজ্যের বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রপ্তানি করা হয়।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন দেশে ১৬৫ কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি করেছে কোম্পানিটি। বেক্সিমকোর ২৩৫ কোটির পর কোম্পানি হিসাবে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ। গত বছর স্কয়ার ফার্মার রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১০.৯৮ শতাংশ।
রপ্তানিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থান হলেও দেশের বাজার শীর্ষ ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি স্কয়ার ফার্মা। বর্তমানে দেশের ওষুধের বাজারে প্রায় ১৭ শতাংশ বাজার অংশীদারিত্ব এ কোম্পানিটির। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইনসেপ্টার বাজার অংশীদারিত্ব ১০ শতাংশের কম।
করোনায় সব ব্যবসায় মন্দার মধ্যেও গত বছর ওষুধ বিক্রিতে ১৮.৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে স্কয়ার ফার্মা। গত বছর কোম্পানির মোট বিক্রয় ৫,২৯৩ কোটি টাকা।
সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কয়ার ফার্মার সম্পদের পরিমাণ ৬,৯৮৫ কোটি টাকার। অথচ ১৯৫৮ সালে মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে কোম্পানিটি।
স্কয়ার ফার্মার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী। বর্তমানে তিন প্রজম্ম যোগ হয়ে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন তপন চৌধুরী।
শেয়ারবাজারে পারফরম্যান্স
দেশের শেয়ারবাজারে শীর্ষ পারফরম্যান্সকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্কয়ার ফার্মা অন্যতম। বছর বছর ডিভিডেন্ডের ধারাবাহিকতা ধরে রাখায় বিনিয়োগকারীদের আস্থার কোম্পানি এটি।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) হাতেগোনা যে কয়টি ব্লু-চিপস বা উন্নত মানের কোম্পানি রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম স্কয়ার। স্কয়ার ফার্মা ডিএসইতে তালিকাভুক্ত বাছাই করা সেরা ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস–৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালে তালিকাভুক্ত হয় স্কয়ার ফার্মা। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বুধবারের (গতকাল) বাজারমূল্য ২০৮ টাকার বেশি। শেয়ারের বাজারমূল্য হিসাবে বর্তমানে কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮,৩৪৮ কোটি টাকা।
গত বছর বিনিয়োগকারীদের ৫২ শতাংশ ডিভিডেন্ট দিয়েছে স্কয়ার ফার্মা।