এখানে খেলবেন না: শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোর্রেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ওপর ‘হামলা ও হত্যাচেষ্টার’ ঘটনায় দায়ের করা মামলা প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান হুঁশিয়ার করে বলেছেন, মামলায় তার কোন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হলে নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হয়ে উঠবে।
শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার লামারবাগ এলাকার নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্কে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এক কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের পোড় খাওয়া নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। আমি মনে করি এখানে আমাকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় আমার কোন কর্মীকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হলে নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হয়ে উঠবে। নারায়ণগঞ্জে এক ঘন্টাও কেউ আরামে ঘুমাতে পারবেনা।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে কিছু বলতে পারছি না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না থেকে যদি অন্য সরকার ক্ষমতায় থাকতো তবে এই মামলার কারণে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে চারা নাচতো।”
২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখতে গণসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে পদযাত্রা করার সময় মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর উপর ইটপাটকেল ছোঁড়া শুরু করেন একদল ব্যক্তি। ওই ঘটনার জন্য সেসময়ই প্রতিপক্ষ শামীম ওসমানকে দায়ী করেছিলেন আইভি সমর্থকরা। হামলার ঘটনার দীর্ঘ ২২ মাস ১৮ দিন পর গত ৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তা জি এম এ সাত্তার।
অভিযোগটি আমলে নিয়ে সদর মডেল থানাকে এজহার হিসেবে গণ্য করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলায় ঘটনার দিন অস্ত্র প্রদর্শনকারী নিয়াজুল ইসলাম খান (৫২), নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম (৪৯), সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল (৪৮), মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু (৪৬), জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন (৩৫), স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব (৪২), জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন (৩২), যুবলীগ কর্মী নাসির উদ্দিন ওরফে টুন্ডা নাসির (৫২), যুবলীগ নেতা চঞ্চল মাহমুদসহ (৫২) ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত প্রায় ৯০০ থেকে ১০০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সমাবেশে শামীম ওসমান বলেন, “মামলার একজন আসামি হিসেবে প্রশাসনকে বলতে চাই তদন্ত করেন। যদি মনে হয় এমপিকে ধরতে অসুবিধা হচ্ছে, ধরা যায়না, তবে আমি এই মুহুর্ত থেকে দরকার হলে সংসদ সদস্যপদ ছেড়ে দেবো। কিন্তু তদন্ত করেন। আমার কারণেই যদি এ ঘটনা ঘটে থাকে যদিও আমি আমার পার্টির সেক্রেটারির কথায় সেখানে গিয়েছিলাম। এখানে খেলবেন না।”
“ধৈর্য্য ধরতে ধরতে আর গালি শুনতে শুনতে খারাপ লাগেনা। কারা নায়ক আর কারা খলনায়ক সেটিও বের করতে হবে। খেলা যেহেতু দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, খেলা যদি খন্দকার মোশতাকের পর্যায়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তবে নারায়ণগঞ্জের মাটি দেখা যাবেনা, শুধু মাথা দেখা যাবে। শামীম ওসমানের কর্মীর উপর আঘাত করার পর কেউ যদি মনে করে নারায়ণগঞ্জ শান্ত থাকবে, তার চেয়ে বোকার রাজ্যে আর কেউ বাস করবেনা। আমার কর্মীর গায়ে আচঁড় দিয়ে নারায়ণগঞ্জে কেউ এক ঘন্টাও আরামে ঘুমাতে পারবেনা। এটা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিলাম। আমার বক্তব্যটা হালকা করে নিবেননা।”
শামীম ওসমানের দাবি, ওইদিন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ‘শিবিরের ক্যাডাররা’ ঘিরে রেখেছিলো।
“এরপর নাটক করা হলো। বলা হলো, উনাকে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। হঠাৎ করে ২২ মাস পরে কেন লাফালাফি?”
মামলা হওয়ার পর নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে আছেন জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, “নেতাকর্মীদের মধ্যে বিষ্ফোরণ। তারা আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে কিচ্ছু করতে হবেনা, শুধু আপনি কয়েকদিনের জন্য দেশের বাইরে যান। নারায়ণগঞ্জের রাজপথ কার আমরা দেখতে চাই। ধৈর্য্য ধরতে হবে। ১/১১ এর যারা খেলোয়াড় তারা ঘনঘন নারায়ণগঞ্জে আসে। নারায়ণগঞ্জ বদনাম হয় কোন সময় র্যাবের কারণে, কোন সময় বদনাম হয় করাপটেড অফিসারের কারণে, নারায়ণগঞ্জের মানুষের কারণে নারায়ণগঞ্জ বদনাম হয়না, বাইরের মানুষের কারণে হয়। তারাই বদনাম করে দিয়ে যায়।”
ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল্লাহ বাদলের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মোঃ বাদল, সহ সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু, যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহান, সহ সভাপতি বাবু চন্দন শীল, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু প্রমুখ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে আগের কমিটির সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল ও সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলীর নাম একই পদে ঘোষণা করা হয়।